প্রশ্ন: কোন নারী যদি এরূপ ভয় করে যে, সে হয়ত স্বামীর আনুগত্য করতে পারবে না এবং স্বামী-সংসারের দায়িত্ব পালনে অপারগ হয়ে যাবে- যার কারণে স্বামীর অসন্তুষ্টির মাঝে থাকবে। এমতাবস্থায় সে যদি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেয় তবে সেটা কি জায়েজ হবে?
উত্তর:
মনে রাখতে হবে, ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ও সামর্থ্যবান যুবক-যুবতীর বিয়ে করার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, হালাল পন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে পবিত্র জীবন গঠন করা এবং সন্তান-সন্ততি জন্ম দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর জমিন আবাদ রাখা।
তা ছাড়া হাদিসে বিয়েকে দ্বীনের অর্ধেক বলা হয়েছে। আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, তারা যেন বিয়ের উপযুক্ত ও সামর্থ্যবান হলে বিয়ে করে নেয়। তিনি বলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ؛ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
“হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে নিচু রাখতে এবং লজ্জা স্থানকে সংযত করতে সব চেয়ে বেশি সহায়ক। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম (রোজা) পালন করে। কেননা তা প্রবৃত্তিকে দমন করে।” [বুখারী ১৯০৫, ৫০৬৫ ও মুসলিম ১৪০০]
তাই দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা, চারিত্রিক পবিত্রতা এবং মানব জাতির বংশ পরম্পরার ধারাবাহিকতার বজায় রাখার মাধ্যমে পৃথিবী আবাদ করার স্বার্থে বিয়ের উপযুক্ত হলে অনতি বিলম্বে বিয়ে করা কর্তব্য। শরিয়ত সম্মত ওজর ব্যতিরেকে…এটা ওটা ওজুহাত দেখিয়ে বিয়ে থেকে বিরত থাকা মোটেও সঙ্গত নয়।
আর এ কথা বলার অপেক্ষ রাখে না যে, “হয়ত স্বামীর আনুগত্য করতে পারব না…সংসারের দায়িত্ব পালন করতে পারব না…স্বামীর অসন্তুষ্টির মাঝে থাকব…” এগুলো শরিয়ত সম্মত ও গ্রহণযোগ্য ওজর নয় বরং এ সব হল, শয়তানের পক্ষ থেকে প্ররোচনা, অনর্থক ভয় ও হীনমন্যতা। এ সব কথা মনে জাগ্রত হলে, আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম পাঠ করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّـهِ ۚ
“আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে’আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো।” (সূরা আ’রাফ: ২০০) অর্থাৎ আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বনির রাজীম (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) পাঠ করো।
সুতরাং কোন নারী যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে (বিয়ের উপযুক্ত হয়) তাহলে তার উচিৎ, এ সব দ্বিধা, সংশয় ও শয়তানী কুমন্ত্রণাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের ইজ্জত-সম্ভ্রম রক্ষা, মনের পবিত্রতা, গুনাহ থেকে বাঁচা, সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে আল্লাহর পৃথিবীকে আবাদ এবং সর্বোপরি আল্লাহর বিধান ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহকে বাস্তবায়ন করার স্বার্থে আল্লাহর উপর ভরসা করে এবং তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে বিয়ে করা।
আর অবিবাহিত থাকার ফলে অবৈধ যৌনাচার, গোপন বদ অভ্যাস ও বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বিয়ে করা ফরজ; অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে। তবে শারীরিক অক্ষমতা বা মানসিকভাবে অসুস্থ তথা পাগল কিংবা মস্তিষ্ক বিকৃত হলে ভিন্ন কথা।
পরিশেষে বলব, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করুন এবং দ্বিধা, সংশয় ও হীনমন্যতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের স্বার্থে বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন ও মনকে শক্ত করুন। সেই সাথে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুন যে, তিনি যেন আপনার দাম্পত্য জীবনকে জান্নাত লাভের মাধ্যমে পরিণত করেন এবং এ ক্ষেত্রে সব ধরণের বিশৃঙ্খলা ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সাহায্য চায় তাকে তিনি সাহায্য করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বোত্তম সাহায্যকারী।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব)।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।