প্রশ্ন: ইন্টারনেটে কিছু ভয়ঙ্কর ছবি বা সিম্বলকে শয়তানের ছবি কিংবা প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়। এগুলো কি সত্যিই শয়তানের ছবি বা প্রতীক?
উত্তর:
ইন্টারনেটে কিছু ভয়ঙ্কর ছবি বা সিম্বল/প্রতীককে শয়তানের ছবি বা প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু এগুলো শয়তানের কল্পিত ছবি বা প্রতীক; এগুলো তাদের প্রকৃত রূপ নয়। কারণ একমাত্র নবীগণ ছাড়া অন্য কেউ শয়তানদেরকে তাদের নিজস্ব আকৃতিতে দেখতে পারে না। এটি নবীদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ মুজিযা। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: قَامَ رَسُوْلُ اللّهِ ﷺ فَسَمِعْنَاهُ يَقُوْلُ: «أَعُوْذُ بِاللّهِ مِنْكَ» ثُمَّ قَالَ: «أَلْعَنُكَ بِلَعْنَةِ اللّهِ» ثَلَاثًا وَبَسَطَ يَدَه كَأَنَّه يَتَنَاوَلُ شَيْئًا فَلَمَّا فَرَغَ مِنَ الصَّلَاةِ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللّهِ قَدْ سَمِعْنَاكَ تَقُولُ فِي الصَّلَاةِ شَيْئًا لَمْ نَسْمَعْكَ تَقُولُه قَبْلَ ذلِكَ وَرَأَيْنَاكَ بَسَطْتَ يَدَكَ قَالَ: «إِنَّ عَدُوَّ اللّهِ إِبْلِيسَ جَاءَ بِشِهَابٍ مِنْ نَارٍ لِيَجْعَلَه فِي وَجْهِي فَقُلْتُ أَعُوذُ بِاللّهِ مِنْكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. ثُمَّ قُلْتُ: أَلْعَنُكَ بِلَعْنَةِ اللّهِ التَّامَّةِ فَلَمْ يَسْتَأْخِرْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ أَرَدْتُ أَخْذَه وَاللّهِ لَوْلَا دَعْوَةُ أَخِينَا سُلَيْمَانَ لَأَصْبَحَ مُوثَقًا يَلْعَبُ بِه وِلْدَانُ أَهْلِ الْمَدِينَة». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে দাঁড়ালেন। আমরা তাঁকে সলাতে “আ‘ঊযুবিল্লাহ-হি মিনকা-আমি তোর থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি- পরতে শুনলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার বললেন, “আমি তোদের ওপর অভিশাপ করছি, আল্লাহর অভিশাপ দ্বারা”। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত প্রশস্ত করলেন, যেন তিনি কোন জিনিস নিচ্ছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাত শেষ করলেন তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল। আজ আমরা আপনাকে সলাতে এমন কথা বলতে শুনলাম যা এর পূর্বে আর কখনো বলতে শুনিনি। আর আজ আমরা আপনাকে হাত বিস্তার করতেও দেখেছি। জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহর শত্রু ইবলিস আমার চেহারায় নিক্ষেপ করার জন্যে আগুনের টুকরা হাতে করে নিয়ে এসেছিল। তখন আমি তিনবার বলেছিলাম, “আ‘ঊযুবিল্লাহ-হি মিনকা” (আমি আল্লাহর কাছে তোর থেকে আশ্রয় চাই)। এরপর আমি বলেছি, আমি তোমার ওপর অভিশাপ বর্ষণ করছি, আল্লাহর সম্পূর্ণ লা’নত দ্বারা। এতে সে দূরে সরে নি। তারপর আমি তাকে ধরতে ইচ্ছা করলাম। আল্লাহর শপথ! যদি আমার ভাই সুলায়মান (আঃ)-এর দু‘আ না থাকত তাহলে (সে মসজিদের খাম্বায়) ভোর পর্যন্ত বাঁধা থাকত। আর মদিনার শিশু-বাচ্চারা একে নিয়ে খেলত। (সহীহ : মুসলিম ৫৪২, নাসায়ী ১২১৫)
নবীগণ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা শয়তানকে তার নিজস্ব আকৃতিতে দেখা সম্ভব নয়। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا بَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا ۗ إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ ۗ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ
“হে বনী-আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পেষাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জা স্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, , যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না।” (সূরা আ’রাফ: ২৭)
এই আয়াত থেকে ওলামাগণ বলেন, সাধারণভাবে শয়তানকে দেখা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আল্লাহ তাআলা জিন-শয়তান ও ফেরেশতাদেরকে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে রেখেছেন। (তাফসীরে ত্ববারী সহ অন্যান্য তাফসীর)। তবে মহান আল্লাহ তআলা জিন-শয়তানদেরকে জীব-জন্তু, সাপ, পোকা-মাকড়, পাখি, মানুষ ইত্যাদির আকৃতি ধারণ করার ক্ষমতা দান করেছেন। সুতরাং তারা যখন এ সব জিনিসের আকৃতি ধারণ করে তখন তাদেরকে দেখা সম্ভব। এমন বহু ঘটনার জনশ্রুতি আছে যে, অনেক মানুষ বিভিন্ন আকৃতিতে জিন-শয়তানকে দেখেছে।
যাহোক, বর্তমানে ইন্টারনেটে কিছু ভয়ঙ্কর ছবি ও সিম্বল/প্রতীক পাওয়া যায় যেগুলোকে শয়তানের আকার-আকৃতি, চিহ্ন, প্রতীক বা ছবি হিসেবে দেখানো হয়। এগুলো জিন-শয়তানের প্রকৃত রূপ নয় বরং কাল্পনিক।
আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
▬▬▬▬⚫⚫⚫▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।