যে স্ত্রীর স্বামী বিদেশে থাকে তার জন্য ১০টি দিকনির্দেশনা

প্রশ্ন: স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় স্ত্রী যদি জিনায় লিপ্ত হয় তাহলে তার শাস্তি কী? এ ক্ষেত্রে সে কিভাবে জিনা-ব্যাভিচার ও পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করবে?

উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে পরকীয়া ও জিনা-ব্যভিচার অত্যন্ত জঘন্য কবিরা গুনাহ, দণ্ডনীয় অপরাধ এবং ঘৃণিত কাজ। ইসলামের যত প্রকার শাস্তি আছে, জিনার শাস্তি সবচেয়ে কঠিন। আর তা হল, বিবাহিত ব্যক্তি জিনায় লিপ্ত হলে আদালতের মধ্যে যথোপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ বা স্বীকারোক্তি সাপেক্ষে অপরাধ প্রমাণিত হলে জিনাকারিকে পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা আর অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত ও এক বছর দেশান্তর (বর্তমানে জেল)।
সুতরাং স্বামী দেশে থাকুক বা বিদেশে থাকুক স্ত্রী যদি পরকীয়ায় লিপ্ত হয় তাহলে সে গুনাহগার হওয়ার পাশাপাশি শাস্তিযোগ্য অপরাধে অপরাধী বলে গণ্য হবে। প্রবাসী পুরুষের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

❐ স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর প্রতি ১০টি দিকনির্দেশনা:

স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে স্ত্রীর করণীয় সংক্রান্ত ১০টি দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হল:

✪ ১) স্ত্রী যদি প্রবল আশঙ্কা করে যে, স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে না বা জিনা-ব্যভিচার ও পাপাচারে জড়িয়ে পড়বে তাহলে শরিয়তের দৃষ্টিতে স্বামীর কাছে তার এ দাবী করার অধিকার আছে যে, হয় সে তাকে সাথে করে বিদেশে নিবে অথবা তাকে রেখেে একাকী বিদেশ সফর থেকে বিরত থাকবে। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, নিজের ইজ্জত-সম্ভ্রম হেফাজত করা এবং গুনাহ থেকে আত্মরক্ষা করা।
✪ ২) স্বামী যদি স্ত্রীর দাবী বা নিষেধ উপেক্ষা করে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন করে তাহলে স্ত্রীর জন্য ‘খোলা তালাক’ নেয়া জায়েজ আছে। কেননা এতে বিয়ের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় এবং ঈমান ও চরিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
✪ ৩) তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে ধৈর্য ধারণ করবে, নিয়মিত নফল রোজা রাখবে এবং নিজেকে ইবাদত বন্দেগি, কুরআন তিলাওয়াত, জ্ঞানার্জন, সাংসারিক ও অন্যান্য উপকারী কাজকর্মে ব্যস্ত রাখবে।
✪ ৪) স্বামীর সাথে ফোন, ইন্টারনেটে ইত্যাদির মাধ্যমে যথাসম্ভব নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে।
✪ ৫) নাটক, সিনেমা, গানবাজনা, অশ্লীলতা ও অসৎসঙ্গ থেকে দূরে থাকবে। কারণ এগুলো মানুষের মনে কু প্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনার আগুন প্রজ্বলিত করে দেয়।

✪ ৬) চারিত্রিক নির্মলতা ও মানসিক পবিত্রতা রক্ষায় কোনও পরপুরুষ ও নন মাহরাম ব্যক্তিকে-বিশেষ করে স্বামীর বা নিজের নিকটাত্মীয় নন মাহরাম পুরুষ যেমন: দেবর, ভাসুর, চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো খালাতো ভাই, দুলাভাই, ভগ্নীপতি, বিয়াই ইত্যাদি ব্যক্তিকে তার ঘরে প্রবেশের সুযোগ দিবে না এবং তাদের সাথে নির্জনে দেখা-সাক্ষাত করবে না। তাদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলে, পর্দার আড়াল থেকে কথা বলবে এবং এ ক্ষেত্রে কোমল কণ্ঠ পরিহার করবে।

✪ ৭) নন মাহরাম পুরুষদের সাথে হাসি, দুষ্টামি, স্পর্শ এবং নিষ্প্রয়োজনীয় দৃষ্টিপাত, কথাবার্তা, ফোনালাপ, মেসেজিং, ভিডিও চ্যাটিং ইত্যাদি থেকে দূরে থাকবে। কারণ শয়তান এই সুযোগে দুজনের মাঝে ফিতনার বীজ বপন করে।
✪ ৮) শয়তানের কুমন্ত্রণা ও কু প্রবৃত্তির তাড়না থেকে বাঁচার স্বার্থে যে স্ত্রীর স্বামী প্রবাসে থাকে (প্রােষিতভর্তৃকা) তার একাকী বসবাস না করাই ভালো। তাই সন্তানদের সাথে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সন্তান না থাকলে সম্ভব হলে মা, বোন, ভাতিজী, ভাগ্নি, ননদ, শাশুড়ি ইত্যাদি কোনও নিকটাত্মীয় মহিলা সাথে থাকা উত্তম।
✪ ৯) একান্ত প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার দরকার হলে, পূর্ণ পর্দা রক্ষা করবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সুগন্ধি ব্যবহার ও সাজসজ্জা প্রদর্শনী থেকে দুরে থাকবে।
✪ ১০) সর্বোপরি আল্লাহর ভয় এবং জাহান্নামের শাস্তির কথা অন্তরে জাগ্রত রেখে ফিতনা থেকে দূরে থেকে সৎ ভাবে জীবন যাপন করবে।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি পুরুষ ও নারীকে পাপাচার থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: