মীলাদের উৎপত্তি ও মীলাদপন্থীদের জবাব

অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
▬▬▬🔸🔹🔸▬▬▬
 *ঈদে মীলাদুন্নবী এর শুরুর কথা:*

 *মীলাদের আবিষ্কারক বনী উবায়দিয়া বা ফাতেমীয় সম্প্রদায়:*

ইসলামের সোনালী অধ্যায়ের তিন শতাব্দী তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগ, সাহাবীদের যুগ এবং তাবেঈদের যুগ পার হয়ে গেলেও ইতিহাসে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, কোন একজন সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ এবং তাদের পরর্তিতে কেউ মীলাদ উদযাপন করেছেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি তাদের ভালবাসা কি কম ছিল? বরং তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রচণ্ডভাবে ভালবাসত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত সম্পর্কে তারা ছিলেন সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী এবং ইসলামী শরীয়তের বিধিবিধান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তারা ছিলেন সবচেয়ে বেশি আগ্রহী।

এই বিদআতকে যারা সর্বপ্রথম রূপদান করে তারা হল, বনী উবাইদ আল কাদ্দাহ। এরা নিজেদেরকে ফাতেমী বলে অবিহিত করত এবং নিজেদেরকে আলী রা. এর বংশধর বলে দাবী করত।

 *বনী উবায়দিয়া বা ফাতেমীয় সম্প্রদায়ের পরিচয় ও তাদের আসল রূপ:*

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রাহ.কে এই ফাতেমীদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর হলে তিনি উত্তরে বলেন:

“তারা ছিল জঘণ্য ধরণের পাপাচারী এবং নিকৃষ্ট কাফের। কেউ যদি তাদেরকে ঈমানদার এবং পরহেযগার বলে স্বাক্ষ্য দেয় অথবা তাদের বংশ পরম্পরাকে সঠিক বলে স্বীকৃতি দেয় তবে তারা এমন বিষয়ে কথা বলল যে ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ

“সে বিষয়ের পিছে ছুটনা যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই।“[1]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:

إِلَّا مَن شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ

“তবে যারা জেনে-শুনে সত্য স্বাক্ষ্য দিল।”[2]

এ সকল লোকদের ব্যাপারে সমস্ত আলেম সমাজ, ইমামগণ এবং সর্বস্তরের মানুষ সাক্ষ্য দেয় যে, এরা ছিল নাস্তিক,ধর্মচ্যুত এবং মুনফিক। এরা বাহ্যিকভাবে যদিও ইসলাম প্রকাশ করত কিন্তু তাদের অন্তরে লুকানো ছিল কুফুরী। সুতারাং কেউ যদি তাদের ঈমানের স্বাক্ষ্য দেয় তবে সে এমন বিষয়ে স্বাক্ষ্য দিল যে ব্যাপারে তার জ্ঞান নেই। কারণ,তাদের কার্যক্রম থেকে এমন কিছু পাওয়া যায় না যাতে তাদের ঈমানের প্রমাণ পাওয়া যায়।

অনুরূপভাবে তাদের বংশগত সম্পর্কের ব্যাপারেও অধিকাংশ আলেমগণ দোষারোপ করেছেন। তারা বলেছেন,প্রকৃতপক্ষে এরা অগ্নীপুজক অথবা ইহুদীদের সন্তান এবং এটাই হানাফী, মালেকী, শাফেঈ,হাম্বলীদের অনেক আলেমের প্রসিদ্ধ মতামত। এমনকি মুহাদ্দেসীনগণ,আহলে কালাম,বংশ বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষেরও মন্তব্য এটাই। যে সকল লেখক মানুষের জীবন পঞ্জিকা এবং ইতিহাস লেখেছেন তারাও এ বিষয়টি তাদের বইয়ে উল্লেখ করেছেন।

সর্ব প্রথম যারা মীলাদ তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম অনুষ্ঠান পালনের বিদআন সূচনা করে তারা হল বাতেনী সম্প্রদায়। যাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হল দ্বীন ইসলামের মাঝে পরিবর্তন সাধন করে তার মধ্যে এমন কিছু ঢুকানো যার অস্তিত্ব দ্বীনের মধ্যে ছিল না। কারণ,ইসলামী শরীয়ত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত থেকে মানুষকে দূরে সরানোর সব চেয়ে সহজ পদ্ধতি হল তাদেরকে বিদআতের মধ্যে ব্যস্ত রাখা।

মাকরীযী বলেন, ফাতেমী খলীফাগণ বিভিন্ন দিনকে আনন্দ-উৎসবের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছিল এবং এসব দিনে তারা জন-সাধারণের মাঝে খাদ্য বিতরণ এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করত।

 *উবায়দিয়ারা সারা বছর ধরে যে সব দিনকে আনন্দ-উৎসবের দিন হিসেবে পালন করত সেগুলো হল:*

১) নব বর্ষ ২) আশুরা ৩) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিবস ৪) আলী রা. এর জন্ম দিবস ৫) হাসান রা. এর জন্ম দিবস ৬) হুসাইন রা. এর জন্ম দিবস ৭) ফাতেমাতুয যোহরা রা. এর জন্ম দিবস ৮) ক্ষমতাসীন শাষকের জন্ম দিবস ৯) রজম মাসের ১ম দিন ৯) রজব মাসের ১৫ তারিখের রাত্রি ১০) শাবান মাসের ১ম দিন ১১) শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত্রি ১২) রামাযানের ১ম রাত্রি ১৩) রামাযানের ১ম দিন ১৪) রামাযানের মধ্যভাগ ১৫) রামাযের শেষ রাত্রি ১৬) ঈদুল ফিত্রের মৌসুম ১৭) কুরবানীর মৌসুম ১৮) গাদীর উৎসব ১৯) শীত বস্ত্র ২০) গ্রীষ্ম কালিন বস্ত্র ২০) উপসারগর বিজয় উৎসব ২১) নওরোজ ২২) গুতাস ২৩) এবং যিশু খৃষ্টের জন্ম দিন (বড় দিন) ইত্যাদি।

মাকরীযীর পক্ষ থেকে এটা একটি স্পষ্ট স্বাক্ষ্য। যদিও তিনি এদেরকে আলী রা. এর বংশধর হিসেবে শুধু স্বীকৃতি দেন না বরং তাদের পক্ষাবলম্বন করে বিরোধীদের জবাব দেন। কিন্তু তিনি অকপটে এ কথার স্বাক্ষ্য দিলেনে যে,এ ফাতেমীয়রাই মুসলমানদের বিপদের কারণ। এরাই বিভিন্ন বিদআতী অনুষ্ঠানের পথ উন্মুক্ত করে। এমন কি এরা অগ্নীপূজক এবং খৃষ্টানদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদীও পালন করে। যেমন নওরোজ বা নববর্ষ এবং যিশু খৃষ্টের জন্ম দিন (বড় দিন) ইত্যাদি।

এতেই প্রমাণিত হয় যে, এদের অবস্থান ইসলাম থেকে শুধু দূরেই নয় বরং এরা ইসলাম ও মুসলমানদের ঘোরতর দুশমন। যদিও এরা বাহ্যিকভাবে তা স্বীকার করে না।

মোট কথা, বনী উবাইদ আল কাদ্দাহ তথা ফাতেমীয়রাই সর্ব প্রথম মীলাদ অনুষ্ঠান শুরু করে।

সউদী আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতী শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আলুশ শাইখ (রহ.) বলেন,

“হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দিতে এই বিদআত তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিবস পালনের প্রথা সর্ব প্রথম চালু করেন আবু সাঈদ কূকুবূরী। যদিও এ মর্মে অন্য আরও একাধিক মত রয়েছে।[3]

 *মীলাদপন্থীদের কতিপয় সংশয় ও সেগুলোর জবাব:*

উবাইদিয়াদের শাষণামলে মীলাদ চালু হওয়ার পর ধীরে ধীরে তা ব্যাপকতা লাভ করতে লাগল। মুসলমানগণ জিহাদ ছেড়ে দিল এবং তারা রুহানী ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ায় এই বিদআতটি সাধারণ মানুষের মনে শিকড় গেড়ে বসল। এমনকি অনেক মূর্খ মানুষের নিকট এটা আকীদা-বিশ্বাসের একটি অংশ হয়ে দাঁড়ালো।

কিছু আলেম যেমন ইমাম সুয়ূতী রাহ. এই বিদআতের পক্ষে প্রমাণাদী খুঁজতে বাধ্য হলেন যাতে মীলাদের বিদআতকে বৈধতা দেয়া যায়। আবার অনেক আলেম একদিকে সরকারের ভয়ে অন্য দিকে জন সাধারণের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হওয়ার আশংকায় এ বিদআতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পেরে নীরবতা অবলম্বন করলেন।
*পুরোটা পড়ুন* 👇👇👇
https://salafibd.wordpress.com/2015/12/23/eid-e-miladunnabi/

👉 *আরও দেখুন: ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ সা. সম্পর্কে একগুচ্ছ কালেকশন (প্রবন্ধ, প্রশ্নোত্তর, বই, অডিও, ভিডিও বক্তৃতা ইত্যাদি)*
————————-
১) ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী প্রবর্তন ও প্রবর্তক: একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা
২) ঈদে মীলাদুন্নবী (শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু শুদ্ধ)
৩) ঈদে মীলাদুন্নবীর ধারা
৪) রাসূলুল্লাহ (সা) এর জন্ম-মৃত্যুর তারিখ সম্পর্কে আলেমদের বিভিন্ন বক্তব্য
৫) গান-বাজনা ও হারাম জিনিসের আয়োজন ব্যতীত মীলাদুন্নবী উদযাপন
৬) মীলাদুন্নবী উদযাপন না করার কারণে পরিবারের যারা তিরস্কার করে, তাদের সাথে আচরণ করার পদ্ধতি
৭) মীলাদুন্নবী নামে মসজিদে সমবেত হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলোচনা করা
৮) মীলাদুন্নবী উপলক্ষে মিলিয়ন মিলিয়ন দরূদ জমা করার প্রসঙ্গ
৯) জনৈক খ্রিষ্টান নারীর জিজ্ঞাসা মীলাদুন্নবী কী, মুসলিমের নিকট এ দিনের গুরুত্ব কত
১০) মীলাদুন্নবী বিদআত সমর্থনকারীর প্রতিবাদ
১১) মীলাদুন্নবীর মিষ্টি ক্রয় করা
১২) মীলাদুন্নবী ও জন্ম দিনের সিয়াম পালন করা
১৩) রাসূলুল্লাহ সা. সশরীরে এসে সাক্ষাত করেন, এমন ধারণা পোষণকারী ব্যক্তিকে কিভাবে প্রতিবাদ করব
১৪) ঈদে মিলাদুন্নবী (শাইখ মতিউর রহমান মাদানী এর অডিও লেকচার)
১৫) ঈদে মিলাদুন্নবী (শাইখ মতিউর রহমান মাদানী এর ভিডিও লেকচার)
১৬) মিলাদ উন নাবী বিষয়ক প্রশ্নোত্তর (ভিডিও)
১৭) বই ডাউনলোড: মীলাদ প্রসঙ্গ (পিডিএফ-লেখক: ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল গালিব)
১৮) ঈদে মীলাদুন নবী (সা.) কেন বিদআত?
আল্লাহ্‌ আমাদের হক্ক কথা জানার এবং মানার তাউফিক দান করুন। আমিন
👉 উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। জযাকুমুল্লাহু খাইরান।
https://salafibd.wordpress.com/…/20/eidemiladummanabi-files/

Share: