প্রশ্ন: বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করার বিধান কি? পরবর্তীতে এই ডিগ্রির মাধ্যমে যে চাকরী বা কর্মসংস্থান হবে তা কি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েজ হবে? কারণ আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত শিক্ষা কারিকুলামে সুদের হিসাব-নিকাশ করতে হয়।
উত্তর:
ইসলামি শরিয়তে সুদকে ধ্বংসাত্মক গুনাহ ও হারাম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
“আর আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।” (বাকারা: ২৭৫) এ ব্যাপারে কুরআন-হাদিসে পর্যাপ্ত বক্তব্য এসেছে।
একইভাবে সুদের সাথে জড়িত সকলকেই গুনাহগার হিসেবে সাব্যস্ত করা করেছে। হাদিসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
জাবের রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন তার উপর যে সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদ লেখে এবং সুদের ব্যাপারে যারা সাক্ষী থাকে। তারা সকলেই সমান অপরাধী।” (সহিহ মুসলিম)
সুতরাং কোন মুসলিম দেশের বাণিজ্য, অর্থনীতি, ফাইন্যান্স, একাউন্টিং ও গণিত বিষয়ক শিক্ষা সিলেবাসে সুদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকা এবং শিক্ষার্থীদেরকে সুদের হিসাব কশতে দেয়া অত্যন্ত দু:খ জনক। কারণ এ হারাম বিষয় ছাড়াও এ সব বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা সম্ভব ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হল, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সুদের হিসাব কশতে দেয়া হয় এবং গণিতের মাধ্যমে সুদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়! আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।
যাহোক, শিক্ষা সিলেবাসে সুদ নির্ভর অর্থনীতি (Interest-Based Economy), ফাইন্যান্স, একাউন্টিং, গণিত ইত্যাদি থাকলে ছাত্র জীবনে এ উদ্দেশ্যে সেগুলো স্টাডি করা যাবে যে, যেন এতে করে সুদের বিভিন্ন দিক, সূক্ষ্ম বিষয়াদি, সুদের উপর প্রতিষ্ঠিত দেশীয় ও বিশ্ব অর্থব্যবস্থা, এর স্বরূপ, বৈশিষ্ট্য, ধরণ ও পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান লাভ করার পর সুদ ভিত্তিক অর্থনীতির অসারতা তুলে ধরার পাশাপাশি আল্লাহর বিধানে এর ভয়াবহতা ও ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরতে সক্ষম হয়। কিন্তু যদি উদ্দেশ্য থাকে, এ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করার পর সুদি ব্যাংক, বীমা বা সুদ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা অথবা সুদি কারবারে জড়িত হওয়া তাহলে তা জায়েজ নাই।
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রহঃ বলেন,
دراسة الاقتصاد الربوي إذا كان المقصود منها معرفة أعمال الربا، وبيان حكم الله في ذلك فلا بأس، أما إن كانت الدراسة لغير ذلك فإنها لا تجوز.
“সুদী অর্থনীতি বিষয়ে স্টাডি করা দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয়, সুদি কারবার সম্পর্কে জানা এবং এ বিষয়ে আল্লাহর বিধান তুলে ধরা তাহলে তাতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু যদি এ ছাড়া ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য থাকে তাহলে তা বৈধ নয়। (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাটই)
◉◉ বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকদের জন্য আবশ্যক হল, পাঠদানের সময় তারা শিক্ষার্থীদেরকে সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধিবিধান বিষয়ে জ্ঞান দান করবেন এবং তাদের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করবেন, যেন তারা কর্ম জীবনে এ হারাম ও কবিরা গুনাহের সাথে যুক্ত না হয়। কারণ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক হল, হারাম কর্মে জড়িত হওয়া থেকে দূরে থাকা, হারামের পথ রুদ্ধ করা এবং এবং তার প্রচার-প্রসার ও বিস্তার লাভে সহায়তা না করা। আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।
❑ প্রশ্ন: বিবিএ (Bachelor of Business Administration) করার পর কিছুদিন ইন্টার্নশীপ করার জন্য ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক পরিচালিত নয় এমন ব্যংকে ইন্টার্ন হিসেবে জয়েন করা কি জায়েজ হবে? আর ইসলামি ব্যংক বা বাংলাদেশের যে কোনো শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকে যদি করে তাতে কি সমস্যা হবে নাকি সেক্ষেত্রে জায়েজ হবে?
উত্তর:
যে সকল ব্যাংক সুদি কারবার করে সে সকল ব্যাংকে চাকুরি করা বৈধ নয় যদিও তা খণ্ডকালীন সময়ের জন্য হয়। অনুরূপভাবে তাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের উদ্দেশ্যে ইন্টার্ন করাও বৈধ নয়।
তবে হ্যাঁ, ইসলামী ব্যাংকগুলো যদি সুদি কারবারে জড়িত না থাকে তাহলে সেখানে চাকুরী করা বা ইন্টার্নশীপে কাজ করা বৈধ। কিন্তু যদি প্রমাণিত হয় যে, তারা সুদি কারবার করছে তাহলে বৈধ নয়। এখন আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, তারা ব্যাংকিং খাতে সুদি কারবার করছে কি না।
অতএব তাদের মেনিফেস্টো পড়ে এবং যারা তাদের সাথে কার্যক্রম করে তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে ও অভিজ্ঞতা শুনে অথবা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
আল্লাহু আলাম।।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব