প্রশ্ন: রোজা শব্দ নাকি ব্যবহার করা যাবে না! সিয়াম শব্দ বলতে হবে। কারণ রোজা অর্থ, উপবাস। এমনটাই বলছে কিছু আলেম। এখন আমরা সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। আপনি উত্তর দিলে ভালো হতো।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সাওম শব্দটি আরবি-এক বচন। যার বহু বচন হল, ‘সিয়াম’। এর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ বর্ণনা করে ইমাম ‘উসাইমিন রাহ. বলেছেন, “সিয়াম শব্দটি ‘সামা-ইয়াসূমু’–এর মাসদার বা ক্রিয়ামূল। এর অর্থ: বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায়, সিয়াম তথা রোজা আল্লাহর একটি ইবাদত, যা ফজর উদয় হওয়া থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং যাবতীয় রোজা ভঙ্গকারী বিষয় থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।” [আশ শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুস্তাক্বনি‘; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৯৮]
আর উপরোক্ত অর্থ বুঝাতে বাংলা, উর্দু ও ফারসি ভাষায় রোজা/রোযা শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এ শব্দটি মূলত: ফারসি (روزه) থেকে বাংলায় আত্তীকরণ ঘটেছে। অর্থাৎ এখন এটি একশ ভাগ বাংলা শব্দ এবং বাংলা ভাষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (পরিমার্জিত সংস্করণ)-এ লেখা হয়েছে, রোজা/রোযা (বি), ইসলাম ধর্মীয় বিধান অনুসারে উপবাস, ঊষাকালের সামান্য পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের আহার ও যৌন মিলন থেকে সম্পূর্ণ বিরতি। রোজাখোলা অর্থ: (ক্রি)-সমস্ত দিন রোজা রেখে সূর্যাস্তের পর ইফতার করা অর্থাৎ আহার্য গ্রহণ করা। রোজাদার (বি) অর্থ: যে রোজা পালন করে।
মোটকথা, কোন শব্দের শাব্দিক অর্থ যাই হোক না কেন তার পারিভাষিক অর্থটাই মূল ধর্তব্য। আর পরিভাষা নিয়ে বিরোধ গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামি ফিকহের একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি হল,
لا مشاحة في الاصطلاح
“পরিভাষায় কোনও বিরোধ নেই।”
সুতরাং যে শব্দটা সর্বসাধারণ সহজে বুঝে এবং যা যুগ-যুগান্তর ধরে সবার নিকট অতি সুপরিচিত সেটার ব্যবহার যদি শরিয়ত বিরোধী কোন কিছু না বুঝায় তাহলে তা পরিবর্তন করা জরুরি নয়। বরং সেটাকে ‘ভুল’ বলাটাই ভুল এবং এক ধরণের বাড়াবাড়ি। এমন বাড়াবাড়ি সাধারণ মানুষের জন্য সহজে ইসলাম বুঝার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে মানুষ যদি সওম বা সিয়াম শব্দটি সহজে বুঝে তাহলে তা ব্যবহারে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু “রোজা বলা জায়েজ নাই”, “রোজা বলতে হিন্দুদের উপবাস বুঝায়”-এ জাতীয় কথাবার্তা সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য।
উল্লেখ্য যে, শুধু বাংলা নয় বরং পৃথিবীর সব ভাষায় ইসলামের বিধিবিধান সংক্রান্ত শব্দাবলী বুঝাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের নিজস্ব পরিভাষা প্রচলিত রয়েছে।
যা হোক, আরবিতে যেটা সওম সেটাই বাংলায় রোজা/রোযা। মানুষ এর বাইরে অন্য কিছু বুঝে না। অতএব “রোজা বলা যাবে না; সওম বা সিয়াম বলতে হবে”-এমন নিষ্প্রয়োজনীয় ক্যাচাল সৃষ্টি করার কোনও অর্থ নেই।
অনুরূপভাবে বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত আরও কিছু ইসলামি শব্দাবলির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যেমন: সালাত>নামাজ, জান্নাত>বেহেশত, জাহান্নাম>দোজখ, মালাক/মালাইকা>ফেরেশতা, সাহুর>সেহরি/সেহেরি/সেহেরী ইত্যাদি।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।