পিতার জীবদ্দশায় তার সম্পদ হেবা বা দানের ক্ষেত্রে সকল সন্তানের মাঝে সমতা রক্ষা করা আবশ্যক। সমতা রক্ষা না করা জুলুম/অবিচার

প্রশ্ন: এক পরিবারে তিন ভাই ও তিন বোন, বাবা ও মা সহ মোট আট জন সদস্য। বাবা একটি প্রতিষ্ঠানে ৩৪ বছর চাকরি করে রিটায়ার্ড হয়ে রিটায়ার্ড এর সব অর্থ তার এক ছেলের নামে করে দিয়েছেন! এখন কথা হল, অন্যান্য সন্তানগণ কি পিতার এ অর্থের হকদার নয়? এখানে পিতার এ কাজটি ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু সঠিক?

উত্তর:
বাবার সম্পদে তার প্রতিটি সন্তানের অধিকার রয়েছে। বাবা যদি জীবদ্দশায় তার রিয়েটার্ডের পেনশনে প্রাপ্ত সব অর্থ একজন ছেলের নামে করে দেয় তাহলে সে অন্যান্য সন্তানদের প্রতি জুলুম করল আর জুলুমের পরিণতি খুবই ভয়ানক।

💠 এ মর্মে নিম্নোক্ত হাদিস:
حَدَّثَنَا حَامِدُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ حُصَيْنٍ، عَنْ عَامِرٍ، قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ ـ رضى الله عنهما ـ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ يَقُولُ أَعْطَانِي أَبِي عَطِيَّةً، فَقَالَتْ عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ لاَ أَرْضَى حَتَّى تُشْهِدَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏.‏ فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنِّي أَعْطَيْتُ ابْنِي مِنْ عَمْرَةَ بِنْتِ رَوَاحَةَ عَطِيَّةً، فَأَمَرَتْنِي أَنْ أُشْهِدَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ‏.‏ قَالَ ‏”‏ أَعْطَيْتَ سَائِرَ وَلَدِكَ مِثْلَ هَذَا ‏”‏‏.‏ قَالَ لاَ‏.‏ قَالَ ‏”‏ فَاتَّقُوا اللَّهَ، وَاعْدِلُوا بَيْنَ أَوْلاَدِكُمْ ‏”‏‏.‏ قَالَ فَرَجَعَ فَرَدَّ عَطِيَّتَهُ‏.‏
আমির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) -কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি যে, আমার পিতা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন (আমার মাতা) আম্‌রা বিনতে রাওয়াহা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সাক্ষী রাখা ব্যতীত সম্মত নই। তখন তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আম্‌রা বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার পুত্রকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সব ছেলেকেই কি এ রকম করেছ? তিনি বললেন, না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তবে আল্লাহকে ভয় কর এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। [নু‘মান (রাঃ)] বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং তার দান ফিরিয়ে নিলেন।” [সহীহ বুখারী অধ্যায়: হিবার ব্যাপারে সাক্ষী রাখা।]

কোন এক সন্তানকে কিছু দান করা বৈধ হবে না, যতক্ষণ না ইনসাফের সঙ্গে অন্য সন্তানদের সমভাবে দান করা হয়।
💠 নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: فَاتَّقُوا اللَّهَ، وَاعْدِلُوا بَيْنَ أَوْلاَدِكُمْ “আল্লাহকে ভয় কর এবং (সন্তানদেরকে কিছু দেয়ার ক্ষেত্রে) তোমরা ইনসাফ পূর্ণ আচরণ কর।” (প্রাগুক্ত)

💠 আরেকটি হাদিস:
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، أَنَّهُ قَالَ إِنَّ أَبَاهُ أَتَى بِهِ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنِّي نَحَلْتُ ابْنِي هَذَا غُلاَمًا كَانَ لِي ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَهُ مِثْلَ هَذَا ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ لاَ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَارْجِعْهُ ‏”‏ ‏.‏
নু’মান ইবনে বাশীর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার পিতা তাকে সঙ্গে করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসেন। তারপর বলেন যে, আমি আমার এ পুত্রকে আমার একটি গোলাম দান করেছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার সকল সন্তানকে কি এভাবে দান করেছো? তিনি বললেন, না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলে তুমি তা ফিরিয়ে নাও। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪০৩২, ইসলামিক সেন্টার ৪০৩১)
মোটকথা, উক্ত বাবার করণীয় হল, তিনি যে সন্তানের নামে পেনশনে প্রাপ্ত সমূদয় অর্থ দিয়ে দিয়েছিলো সেটা তার নিকট থেকে ফেরত নেয়া এবং তা দান করতে চাইলে অন্যান্য সন্তানদের মাঝেও সমানভাবে দান করা। এমনটি না করলে তাকে আখিরাতে আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এই অবিচারের হিসেব দিতে হবে। আল্লাহ হেফাজত করুন করুন।
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

Share: