যদি পিতা, মাতা, ভাই, বোন, সন্তান, স্বামী বা অন্য কোন নিকটাত্মীয় মারা যায় তবে মহিলার জন্য শোক পালন করা বৈধ। স্বামীর ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিন ওয়াজিব (আবশ্যক)। আর অন্যদের ক্ষেত্রে সবোর্চ্চ তিন দিন বৈধ; আবশ্যক নয়। তবে স্ত্রী স্বামীকে খুশি রাখতে যদি অন্য কোন মানুষের মৃত্যুতে স্ত্রী শোক পালন না করে তবে সেটাই উত্তম। কারণ, স্বামীর সুখ কামনাতেই নারীর জন্য অজস্র কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
◈◈ শোক পালনের দলিল:
স্বামীর মৃত্যুতে শোক পালনের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرً
“আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো, নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা।” (সূরা বাকারা: ২৩৪)
আবু সালামার মেয়ে যয়নব বলেন, শাম থেকে আবু সুফিয়ান রা. এর মৃত্যু সংবাদ আসার পর তৃতীয় দিন (তাঁর মেয়ে উম্মুল মুমিনিন) উম্মে হাবিবা রা. কিছু হলুদ বা জাফরান (অন্য বর্ণনায় সুগন্ধি) আনতে বললেন। অত:পর তা আনা হলে তিনি তা তার চেহারার দু পাশে ও দু গালে এবং দু বাহুতে মাখলেন। অত:পর বলেন, এটা করার আমার কোন দরকার ছিল না। কিন্তু আমি এজন্যই এমনটি করলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
« لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ ، إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ ، فَإِنَّهَا تُحِدُّ عَلَيْهِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا »
“যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে তার জন্য স্বামী ছাড়া কারও মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। স্বামীর মৃত্যুতে সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।” (সহিহ বুখারি, অনুচ্ছেদ: স্বামী ছাড়া অন্যের মৃত্যুতে মহিলার শোক পালন করা)।
◈◈ শোক পালনের পদ্ধতি:
● ১) মৃতের প্রতি শোক প্রকাশের উদ্দেশ্যে মহিলা সকল প্রকার সৌন্দর্য গ্রহণ থেকে দূরে থাকবে।
● ২) আতর-সুগন্ধি ব্যবহার না করা। তবে তৈল, সাবান, রোগ-ব্যাধির জন্য ঔষধ ইত্যাদি ব্যবহারে অসুবিধা নাই যদিও তাতে সুগন্ধি থাকে। কারণ এগুলো মূলত: সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হয় না।
● ৩) সৌন্দর্য বর্ধক পোশাক না পরা। বরং স্বামী মারা যাওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবে যে পোশাক পরিধান করত তাই পরিধান করবে। তবে শুধু সাদা বা শুধু কালো পোশাক পরিধান করতে হবে-এমন ধারণা ঠিক নয়।
● ৪) সুরমা, কাজল ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
● ৫) মেহেদী, খেজাব বা আলাদা রং ব্যবহার না করা।
● ৬) কোন ধরণের অলংকার-যেমন: দুল, চুরি, নাক ফুল, আংটি, নূপুর ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
● ৭) বিয়ের প্রস্তাব বা বিয়ে থেকে বিরত থাকা।
● ৮) শোক পালনের দিন শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়িতে থাকবে। এমনকি সে সময় যদি সে তার পিতার বাড়িতেও থাকে তবে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেলে নিজ বাড়িতে ফিরে আসবে। তবে একান্ত প্রয়োজন-যেমন: বিপদের আশংকা, প্রয়োজন বশত: বাড়ি পরিবর্তন, চিকিৎসা বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ইত্যাদি জরুরি কাজে অন্যত্র যেতে পারবে।
● ৯) স্ত্রী যদি গর্ভবতী হয়ে থাকে তবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে অথবা চার মাস দশ দিন অতিবাহিত হলে তখন উপরোক্ত নিষেধাজ্ঞা সমূহ উঠে যাবে এবং অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করা যাবে।
মোটকথা, স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী এমন সব ধরণের আচরণ বা সৌন্দর্য অবলম্বন করবে না যা তাকে বিয়ের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে।
এটা এ কারণে যে এর মাধ্যমে, স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়, স্বামীর পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়, তাদের বেদনা বিধুর অনুভূতিতে সহমর্মিতা প্রকাশ হয় সর্বোপরি আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশের আনুগত্য করা হয়।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◖◯◗▬▬▬▬
গ্রন্থনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।