প্রশ্ন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কেউ যদি মনে কু ধারণা পোষণ করে বা এমনিতেই খারাপ ধারণা চলে আসে তাহলে কি তার ঈমান চলে যাবে? এমনটি হলে কী করণীয়?
উত্তর:
মহান আল্লাহ সাত আসমানের উপর থেকে আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তম চরিত্রের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। যা কুরআনে উল্লেখিত রয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র বিশ্ব মানবতার নিকট আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এটি দ্যার্থহীন ঘোষণা।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ
”(হে রাসূল,) আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।” (সূরা আল ক্বালাম: ৪)
যার কারণে তৎকালীন তাঁর ঘোরতর দুশমনরাও তাঁর চরিত্রের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করতে সাহস করে নি। আল হামদুলিল্লাহ।
কিন্তু বর্তমান যুগের সব চেয়ে নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী কিছু ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-কুলাঙ্গার সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ বা বিভিন্ন ওয়েব সাইটে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চরিত্রের ব্যাপারে অত্যন্ত নোংরা ভাষায় অভিযোগ তুলে লেখালেখি করছে এবং তার পবিত্র স্বত্বাকে অপমান করার চেষ্টা করছে।
আল্লাহ তাআলা এই জাহেলদেরকে হেদায়েত দান করুন অথবা ধ্বংস করে দিন। আমীন
যাহোক, কোনো ইমানদারের অন্তরে যদি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চরিত্র, তার রিসালাত বা অন্য কোনো বিষয়ে কু ধারণা বা বাজে চিন্তার উদ্রেক হয় তাহলে বুঝতে হবে শয়তান তার ঈমানের উপর আঘাত হেনেছে। সুতরাং অতিদ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া অপরিহার্য।
❐ এ ক্ষেত্রে তার কর্তব্য হল:
১. তৎক্ষণাৎ আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা (অর্থাৎ আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম-“বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি” পাঠ করা।
২. আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করা (ক্ষমা চাওয়া) ।
৩. এ জাতীয় বাজে চিন্তা ও কু ধারণাকে মনে আশ্রয় না দেয়া।
৪. এবং এ সব কুচিন্তার কথা মুখ খুলে কারো সামনে না বলা বা তদনুযায়ী কোনো কাজ না করা। তাহলে ইনশাআল্লাহ মন থেকে এ শয়তানী কুমন্ত্রণা বিদায় নিবে এবং তার আমলনামায় গুনাহ লেখা হবে না।
৫. কোন বিষয়ে মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হলে বিজ্ঞ আলেমদের মাধ্যমে উত্তর জেনে নেয়া।
৬. নাস্তিক ও ধর্ম বিদ্বেষীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগের উত্তর সম্পর্কিত ইসলামী স্কলারদের বই পড়া এবং লেকচার শোনা।
৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন চরিত্র জানতে নির্ভর যোগ্য সীরাতের বই পড়া (যেমন: আল্লামা সফিউর রহমান মুবারক পূরী রচিত আর রাহীকুল মাখুতম)
৮. ইসলাম সম্পর্কে পরিপক্ব জ্ঞান ছাড়া নাস্তিক, ধর্মদ্রোহী ও সংশয়বাদীদের বই-পুস্তক না পড়া বা তাদের সংশ্রব থেকে দূরে থাকা।
❐ কারো মনে যদি আল্লাহ, রাসূল বা ইসলাম সম্পর্কে খারাপ চিন্তা সৃষ্টি হয় তাহলে সে কি তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে?
উত্তর:
🔸 কেউ যদি মনে মনে ইসলাম, ঈমান, আল্লাহ, রাসূল বা দ্বীনের কোন বিষয়ে ধরণের কুচিন্তা অনুভব করে, অন্তরে দ্বীনের ব্যাপারে সংশয় ও সন্দেহ দেখা যায় কিন্তু পরক্ষণেই যদি এ থেকে মুক্তির জন্য মনে অস্থিরতা অনুভব করে বা এ ভয়ে আতঙ্কিত হয় যে, এতে করে সে পাপের মধ্যে ডুবে গেলো কি না, ইসলাম থেকে বের হয়ে গেল কি না, সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেল কিনা.. তাহলে বুঝতে হবে, সে একজন ইমানদার। এই মনের অস্থিরতা ও পাপবোধ তার সুস্পষ্ট ঈমানের পরিচায়ক। আল হামদুলিল্লাহ।
মনে মনে কোন বিষয়ে খারাপ চিন্তা-ভাবনা করলেই সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে না। তবে যদি কু ধারণাগুলো মানুষের সামনে প্রকাশ করা হয় বা তদনুযায়ী কোনো বাজে কাজ করা হয় তাহলে তার আমলনামায় মারাত্মক গুনাহ লেখা হবে। এমনকি এ কারণে তার ঈমানও নষ্ট যেতে পারে। আল্লাহ হেফাজত করুন।
এ প্রসঙ্গে নিন্মোক্ত হাদিসদ্বয় পড়ুন:
🌀 আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لأُمَّتِي عَمَّا وَسْوَسَتْ أَوْ حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ بِهِ أَوْ تَكَلَّمْ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের ঐ সকল ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) মাফ করে দিয়েছেন যা তাদের মনে উদয় হয় বা যে সব কথা মনে মনে বলে থাকে; যতক্ষণ না তা কাজে পরিণত করে বা সে সম্পর্কে কারও কাছে কিছু বলে।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম। সহীহ বুখারী হাদিস নম্বর: [6209] অধ্যায়ঃ ৭১/ শপথ ও মানত (كتاب الأيمان والنذور) ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
🌀 ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إنِّى اُحَدِّثُ نَفْسِى بِالشَّيْءِ لَأَنْ يَكُونَ حُمَمَةً أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ أَن ْ يَتَكَلَّمَ بِهِ فَقَالَ النبي صلى الله عليه وسلم الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي رَدَّ أَمْرَهُ إِلَى الْوَسْوَسَةِ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে একজন লোক আগমন করে বলল, আমার মনে কখনো এমন কথার উদয় হয়, যা উচ্চারণ করার চেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া আমার কাছে বেশী ভাল মনে হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি এই বিষয়টিকে নিছক একটি মনের ওয়াস্ওয়াসা (কুমন্ত্রণা) হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।” (সুনানে আবু দাউদ)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও মনের খারাপি থেকে হেফাজত করুন।
আমীন।
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।