যে সকল মেয়েদের বিভিন্ন কারণে বিয়ে হচ্ছে না তাদের প্রতি

প্রশ্ন: সমাজে কিছু মহিলা আছে, যাদের বিয়ে হয় না বিভিন্ন কারণে। কারো হয়ত শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, অর্থ সম্পদ বা ভালো ঘরবাড়ি নেই। কাউকে হয়ত অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরিতে চাকুরী করতে হচ্ছে। কেউ আবার যৌতুক দিতে পারে না। এমনও কিছু মেয়ে আছে, যাদের দেখাশোনা করার মত কেউ না থাকার কারণে সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে জীবনের সর্বস্ব বিলীন করে দিতে হয়েছে কিন্তু বিনিময়ে তারা কিছুই পায় নি। এ সব কারণে কোনো জীবন সঙ্গী তাদের কপালে জোটে নি।
এদের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? আসলেই কি বিয়ে না হওয়ার পেছনে তারা দোষী বা এ কারণে তারা গুনাহগার হবে?

উত্তর:

কোন ব্যক্তির-চাই পুরুষ হোক অথবা নারী হোক- বিয়ের আগ্রহ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকার পরও যদি কোনো কারণে বিয়ে না হয় তাহলে সে জন্য সে গুনাহগার হবে না। কারণ সে তার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেছে। আর আল্লাহ তাআলা সাধ্যের অতিরিক্ত বান্দার উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না এবং যা তার ক্ষমতার মধ্যে নাই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَا يُكَلِّفُ اللَّـهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
“আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যাতীত কোন কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।” (সূরা বাকারা: ২৮৬)

তবে কোন মেয়ে যদি বিয়ের উপযুক্ত বয়সে লেখাপড়া, ক্যারিয়ার, চাকুরী বা নিজের পায়ে দাঁড়ানো ইত্যাদি অজুহাতে বিয়ে বিলম্ব করে কিন্তু পরবর্তীতে আর বিয়ে না হয় অথবা বিয়ের প্রতি অবহেলা বশত: তা থেকে দূরে থাকে তাহলে নি:সন্দেহে সে গুনাহগার হবে। কারণ এটি আল্লাহর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধানের প্রতি অবহেলা ও অবজ্ঞা প্রর্শনের শামিল। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমীন।

যা হোক, প্রবল ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার পরও বিয়ে সংঘটিত না হলে এ ক্ষেত্রে করণীয় হবে, আল্লাহর ফয়সালার উপর ধৈর্য ধারণ করা, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, নফল রোযা রাখা, নেকির কাজে সময় অতিবাহিত করা, ইসলামের সেবা, মানুষের সেবা, জ্ঞান চর্চা, আল্লাহর পথে দাওয়াত ইত্যাদি অসংখ্য কল্যাণকর পথ খোলা আছে সেগুলোতে সময় কাটানো।

মনে রাখতে হবে, বিয়ে জীবনের একটি অংশ। কিন্তু এটাই সব কিছু নয়। একটি পথ বন্ধ হলেও আল্লাহর পথে জীবন কাটানোর অসংখ্য পথ খোলা আছে-আল হামদুলিল্লাহ।

ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক দিগ্বিজয়ী আলেম ও মনিষীর নাম পাওয়া যায় যারা জীবনে বিয়ে করতে পারেন নি। কিন্তু ইসলাম ও মানবতার সেবায় তাদের কালজয়ী অবদান বিশ্বকে ঋণী করে রেখেছে।

দুনিয়ার জীবনে ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকার স্বত্বেও যদি কারো বিয়ে না হয় এবং এতে সে যদি সবর করে, হারাম থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহর দ্বীনের উপর জীবন পরিচালনা করার মাধমে জান্নাতে প্রবেশ করে তাহলে সেখানে মহান আল্লাহ তাকে অফুরন্ত নিয়ামত দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জান্নাতি যুবকের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করবেন ইনশাআল্লাহ।

সুতরাং জীবনে যা কিছুই ঘটুক না কেন হাতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। বরং মনে করতে হবে, নিশ্চয় আল্লাহ যা করেন তাতেই বান্দার কল্যাণ রয়েছে। এমনও হতে পারে, আল্লাহ তাআলা তাকে বিয়ে থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে জীবনের আরও বড় কোনো ফেতনা ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন।
অথবা তাকে দুনিয়ার ছোট নিয়ামত থেকে বঞ্চিত রেখে আখিরাতে বিশাল নিয়ামত দ্বারা প্রতিদান দিবেন-যা তার জন্য দুনিয়ার চেয়ে অনেক অনেক বেশি মুল্যবান।
নিশ্চয় আল্লাহ পরম প্রজ্ঞাময়, অসীম জ্ঞানের অধিকারী এবং সর্বময় কর্ম বিধায়ক।
আল্লাহু আলাম।
————————–
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব।।