দুধ মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য

ইসলামের দৃষ্টিতে দুধ মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য।

প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে দুধ মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য কতটুকু?
উত্তর: দুধ মা-বাবা রক্ত সম্পর্কীয় মা-বাবা না হলেও তাদের প্রতি দুধ সন্তানের কতিপয় দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। যেমন:
১. তাদের কৃতজ্ঞতা আদায় করা,
২. তাদের অবদানের স্বীকৃতি দেয়া।
৩. তাদেরকে ভালবাসা এবং তাদেরকে সম্মান-শ্রদ্ধা করা,
৪. তাদের জন্য দুআ করা,
৫. তাদেরকে যথাসাধ্য সাহায্য-সহযোগিতা করা
৬. উপহার-সামগ্রী প্রদান করা,
৭. তাদের যথাসাধ্য সেবা-শুশ্রূষা করা,
৮. তারা দূরে থাকলে যথাসাধ্য খোঁজ-খবর নেওয়া ও দেখা-সাক্ষাত করতে যাওয়া।
৯. তাদেরকে কোনোভাবে কষ্ট না দেয়া,
১০. তার মারা যাওয়ার পর তাদের জন্য আল্লাহর নিকট রহমত ও মাগফিরাতের দুআ করা,
১১. তাদের কবর জিয়ারত করা, তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করা ও হজ্জ-উমরা আদায় করার চেষ্টা করা,
১২. তাদের আত্মীয় ও বন্ধুদেরকে সম্মান করা ইত্যাদি।

❑ আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “স্তন্য দানকারীনী মায়ের প্রতি ইহসান বা সদাচার করতে হবে এবং তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “দুধ দানকারীনী মাকে যথাসম্ভব খুশি রাখা ও তার সাথে সদয় আচরণ করার মাধ্যমে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা কর্তব্য। অনুরূপভাবে যদি তার বর্তমান অবস্থান জানতে পারেন তাহলে তার অবদানের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন স্বরূপ তাকে দেখতে যাওয়া ভালো।” [binbaz] আল্লাহু আলাম।

❑ দুধ মা-বাবার প্রতি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সদাচারণের উদাহরণ:

● ক. দুধ মা, বাবা ও দুধ ভাইয়ের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মান প্রদর্শন করতেন। বর্ণিত হয়েছে, তিনি এবং তার জীবনসঙ্গীনী উম্মুল মুমেনিন খাদিজা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুধ মা (আবু লাহাবের আজাদকৃত দাসী সুওয়াইবি) কে সম্মান করতেন। তারা মদিনা থেকে তার জন্য বিভিন্ন উপহার-সামগ্রী প্রেরণ করতেন। [বায়হাকি-দালায়েলুন নবুওয়াহ ১/১৩১]

● খ. এক দুর্বল হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দুধ মা, বাবা ও ভাইয়ের আগমণে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে তার কাপড় বিছিয়ে তাদেরকে বসতে দিয়েছেন। যেমন:
عن عمر بن السائب حدثه أنه بلغه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان جالسًا فأقبل أبوه من الرضاعة فوضع له بعض ثوبه فقعد عليه ثم أقبلت أمه من الرضاعة فوضع لها شق ثوبه من جانبه الآخر فجلست عليه ثم أقبل أخوه من الرضاعة فقام له رسول الله فأجلسه بين يديه
“سنن أبي داود” (4/ 337)، وقال الشيخ الألباني: ضعيف الإسناد
“রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে ছিলেন। ইত্যবসরে তার দুধ পিতা আগমন করলে তিনি তার জন্য একটা কাপড় বিছিয়ে দিলেন। তিনি তাতে উপবেশন করলেন। অত:পর তার দুধ মা আগমণ করলে তিনি তার কাপড়ের অন্য প্রান্ত বিছিয়ে দিলেন। তাতে তিনি বসলেন। অতপর তার দুধ ভাই আগমণ করলে তিনি উঠে গিয়ে তাকে তার সামনে এনে বসালেন।” [সুনানে আবু দাউদ ৪/৩৩৭, শাইখ আলবানি বলেন, যইফুল ইসনাদ]

● গ. ইমাম ইবনে কাসির বিদায়া-নিহায়া গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, হুনাইন যুদ্ধে মুসলিম সেনাদের হাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুধ মা’র গোত্র বনি সাদ বিন বকর আল হাওয়াযেন গোত্রের লোকেরা যুদ্ধ বন্দি হয়ে এসেছিলো। কিন্তু তিনি সে গোত্রের হালিমা সাদিয়া-এর দুধ পান করায় তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের প্রায় সাত হাজার নারী ও শিশুকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তাদেরকে অনেক উপহার-সামগ্রীও দান করেছিলেন। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৭৯]

◈◈ এ প্রসঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি জানা দরকার তা হল, ইসলামে বিধানগতভাবে দুধ মা-বাবা নিজের জন্ম দাতা মা-বাবার অনুরূপ। সুতরাং তারা দুধ সন্তানের জন্য মাহরাম। অর্থাৎ দুধ মা-বাবা ও দুধ সন্তানের মাঝে চিরতরে বিয়ে বন্ধন হারাম। তাদের মাঝে পর্দা রক্ষা করা আবশ্যক নয় এবং নির্জন ঘরে থাকা বা দূর সফরে গমন দূষণীয় নয়। তবে যেহেতু তাদের মাঝে রক্ত সম্পর্ক নেই সেহেতু দুধ মা-বাবা ও দুধ সন্তানের মাঝে মিরাস তথা উত্তরাধিকারী সূত্রে সম্পদের অধিকার সাব্যস্ত হবে না। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: