স্মার্টফোন ব্যবহারে পিতামাতার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে কি সন্তান গুনাহগার হবে

প্রশ্ন: আমি সবসময় ফোন টিপি তবে কোনও গুনাহের কাজ করি না। দীনি ইলম শিখি, আপনার লেখা ও লেকচার ফলো করি। কিন্তু আমার মা এতে রেগে যান। কারণ আমার চোখের সমস্যা। ফোন টিপলে সমস্যা বৃদ্ধি পায়। এ জন্য মা আমাকে বকাবকি করে। যদি বলে ফোন রেখে দে, আমি রাখি না। তাহলে কি আমি আমার মায়ের অবাধ্য সন্তান হিসেবে গণ্য হবো? এতে কি আমার গুনাহ হবে?
উত্তর:
বর্তমান সময়ে অধিকাংশ যুবক-যুবতি মোবাইল ফোনে রীতিমত নেশাগ্রস্থ। তারা অনেকে অনলাইনে ক্লাস, বিভিন্ন কোর্স, আলেমদের ভিডিও লেকচার শোনা বা দীনী ইলম শেখার নামে ক্রমান্বয়ে আল্লাহর নাফরমানির দিকে ধাবিত হয়। তারা হয়ত কিছু ক্ষেত্রে উপকৃত হয় কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শয়তান ও কু প্রবৃত্তি তাদেরকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন গেইম, অনলাইনে অবৈধ রিলেশন তৈরি, গান-বাজনা, মিউজিক ভিডিও, নোংরা নাটক, ফিল্ম, সিনেমা ইত্যাদি হারামে জড়িয়ে পড়ে। অবশেষে তারা নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি তারা নানা মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়। তৎসঙ্গে তাদের মধ্যে ইবাদতে অনীহা, পড়াশোনায় অমনোযোগিতা এবং পরিবার ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা সৃষ্টি হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “যারা প্রতিনিয়ত স্মার্ট ফোনের নেশার মধ্যে বাস করছেন, তারা বেশ কিছু ঝুঁকিতে পড়েছেন। আর এ ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে বিষণ্ণতা ও আত্মহত্যার প্রবণতার মতো মারাত্মক বিষয়ও।”

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, “স্মার্ট ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেশার সঙ্গে অন্যান্য নেশার অনেক মিল আছে। দুই বিষয়কেই বিহেভিওরাল অ্যাডিকশন বা আচরণগত আসক্তি বলা হয়। কিন্তু অন্যান্য নেশা ছাড়া যতটা সহজ, অনলাইনের অভ্যাস ছাড়া তার চাইতে অনেক বেশি শক্ত।” [kalerkantho] এগুলো স্বতঃসিদ্ধ বাস্তবতা।

তাই সচেতন অভিভাবকদের কর্তব্য, তাদের উঠতি বয়সের সন্তানদের সুস্থ ও সুন্দর জীবন এবং ক্যারিয়ার গঠনের স্বার্থেই স্মার্ট ফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা।

সুতরাং আপনার মা-বাবা যদি আপনাকে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেন বা ব্যবহার সীমিত করতে বলেন আর আপনি যদি তাদের কথা অমান্য করেন তাহলে আপনি তাদের ‘অবাধ্য’ বলে গণ্য হবেন। কারণ আল্লাহ তাআলা পিতামাতার নির্দেশ মান্য করাকে সন্তানদের জন্য ফরজ করেছেন যদি না তারা হারাম, সাধ্যাতীত অথবা সন্তানের জন্য ক্ষতিকর কাজের নির্দেশ দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا ‎

“আর আপনার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বলো। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রতার বাহু নত করে দাও এবং বল, “হে আমার পালনকর্তা, আপনি তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।” [সূরা ইসরা: ২২ ও ২৩]।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়া রাহ. বলেন,

ويلزم الإنسان طاعة والديه في غير المعصية، وإن كانا فاسقين ‏وهذا فيما فيه منفعة لهما ، ولا ضرر عليه

“যে ক্ষেত্রে আল্লাহর নাফরমানি নেই সে ক্ষেত্রে পিতামাতার আনুগত্য করা সন্তানের জন্য আবশ্যক যদিও তারা নিজেরা ফাসেক হয়। এটা ঐ ক্ষেত্রে যেখানে তাদের উপকার আছে কিন্তু সন্তানের কোনও ক্ষতি নেই।” [আল এখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা/১৪]।

🔷 তবে ফোন ব্যবহার না করার কারণে আপনি যদি দীনের অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞানার্জনে বাধাগ্রস্ত হোন বা শিক্ষা ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হোন কিন্তু পিতামাতা দীন সম্পর্কে অজ্ঞতা বা দীন বিদ্বেষ ও মূর্খতার কারণে আপনাকে শিক্ষা অর্জন ও দীনের জ্ঞান থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে ফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেন তখন তাদের নিষেধাজ্ঞা মান্য করা আপনার জন্য আবশ্যক নয়। কারণ ইসলামে নিজের ক্ষতি বা অন্যের ক্ষতি করা বৈধ নয়।

সুতরাং পিতামাতা যদি সৎ উদ্দেশ্যে আপনার উপকারের স্বার্থে আপনাকে স্মার্ট ফোন ব্যবহারে নিষেধ করেন বা সীমিত করেন তাহলে তাদের অনুমতির বাইরে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে তাদের অবাধ্যতা করা যাবে না এবং এ কারণে তাদের সাথে রাগারাগি, গালাগালি ও খারাপ ব্যবহার করা বৈধ নয়।
আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।