প্রশ্ন: মাদরাসায় দানকৃত সদকার গরু-ছাগল কি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বিক্রি করে মাদরাসার উন্নয়ন কাজে লাগাতে পারে? আর খাওয়ালে কি সব ধরণের ছাত্র-শিক্ষক খেতে পারবে?
উত্তর:
কেউ যদি সাধারণ ‘সদকা’ (যাকাত বা মানত নয়) হিসেবে মাদরাসায় ছাগল, গরু, হাস, মুরগি ইত্যাদি দান করে এবং তা ব্যবাহারের বিশেষ কোনও খাত নির্দিষ্ট না করে তাহলে তা জবাই করে মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষক সহ মাদরাসার স্টাফ-ধনী-গরিব যে কেউ-খেতে পারে। অথবা প্রয়োজনে তা বিক্রি করে মাদরাসার উন্নয়ন কাজেও ব্যবহার করতে পারে। শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে এতে কোনও আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।
সালিম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব রা. কে বলতে শুনেছি,
قَدْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُعْطِينِي الْعَطَاءَ فَأَقُولُ أَعْطِهِ أَفْقَرَ إِلَيْهِ مِنِّي . حَتَّى أَعْطَانِي مَرَّةً مَالاً فَقُلْتُ أَعْطِهِ أَفْقَرَ إِلَيْهِ مِنِّي . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ خُذْهُ وَمَا جَاءَكَ مِنْ هَذَا الْمَالِ وَأَنْتَ غَيْرُ مُشْرِفٍ وَلاَ سَائِلٍ فَخُذْهُ وَمَا لاَ فَلاَ تُتْبِعْهُ نَفْسَكَ ” .
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু উপঢৌকন দিতেন এবং আমি বলতাম, এটা আমাকে না দিয়ে যে আমার চেয়ে বেশী অভাবী তাকে দিন। এমনকি একবার তিনি আমাকে কিছু মাল দিলেন। আমি বললাম, আমার তুলনায় যার প্রয়োজন বেশী এটা তাকে দিন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এটা গ্রহণ কর এবং এছাড়া ঐ সব মালও গ্রহণ কর, যা কোন প্রকার লালসা ও প্রার্থনা ব্যতীতই তোমার কাছে এসে যায়। আর যা এভাবে আসে তা পাওয়ার ইচ্ছাও রেখো না।” [সহীহ মুসলিম (হাদিস একাডেমী) ১৩. অধ্যায়: যাকাত, পরিচ্ছেদ: ৩৭. চাওয়া অথবা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছাড়াই যদি পাওয়া যায় তবে তা গ্রহণ করা জায়েজ]
ইবনে উমর রা. কারও কাছে কিছু চাইতেন না। তবে চাওয়া ছাড়া কিছু এলে তিনি তা গ্রহণ করতেন।
كان ابن عمر رضي الله عنهما لا يسأل أحداً شيئاً ، وإذا جاءه شيء من غير سؤال قَبِله .
মোটকথা, কেউ যদি চাওয়া বা প্রত্যাশা ব্যতিরেকে কারও দান গ্রহণ করে তাহলে তাতে কোনও আপত্তি নাই-যদিও সে ধনি হয়। এটি মূলত: তার জন্য উপহার সমতুল্য।
তবে মাদরাসায় আসা দান-সদকাগুলো যদি বিত্তশালী ছাত্র, শিক্ষক বা স্টাফগণ পরিহার করে গরিবদেরকে অগ্রাধিকার দেয় তাহলে তা অধিক উত্তম তাতে কোনও সন্দেহ নাই। কারণ ধনীদের চেয়ে গরিবদের প্রয়োজন বেশি।
◍ দানকারী যদি মাদরাসার ভবন নির্মাণ, পানির ব্যবস্থা, কিতাবাদি ক্রয়, এতিমদের পোশাক ক্রয় বা অন্যান্য উন্নয়ন কাজের উদ্দেশ্যে অর্থ-কড়ি দান করে তাহলে তার অনুমতি ছাড়া অন্য কাজে তা ব্যবহার জায়েজ নাই। অনুরূপভাবে ছাত্র-শিক্ষকদের খাবারের জন্য দিলে দাতার অনুমতি ব্যতিরেকে মাদরাসার উন্নয়ন বা অন্য কোনও খাতে তা ব্যবহার করা যাবে না। অনুরূপভাবে দানকারী যদি গরিব ছাত্রদেরে খাবার হিসেবে নির্দিষ্ট করে দেয় তাহলে ধনীদের তা খাওয়া বৈধ হবে না। অর্থাৎ দানকারী খাত নির্ধারণ করে দিলে তার অনুমতি ব্যতিরেক অন্য কোনও খাতে দানের অর্থ ব্যয় করা বৈধ নয়। কিন্তু যদি সে কোন খাত নির্দিষ্ট না করে সাধারণভাবে দান করে তাহলে মাদরাসা কৃর্তৃপক্ষ প্রয়োজন অনুযায়ী মাদরসা বা শিক্ষার উন্নয়ন বা ছাত্র-শিক্ষকদের খাবারের জন্য তা ব্যায় করতে পারে।
جاء في حاشية الجمل: لَوْ دَفَعَ لَهُ تَمْرًا لِيُفْطِرَ عَلَيْهِ تَعَيَّنَ لَهُ عَلَى مَا يَظْهَرُ فَلَا يَجُوزُ اسْتِعْمَالُهُ فِي غَيْرِهِ نَظَرًا لِغَرَضِ الدَّافِعِ. انتهى.
وقال الشيخ زكريا الأنصاري في أسنى المطالب: وَلَوْ أَعْطَاهُ دَرَاهِمَ وَقَالَ اشْتَرِ لَك بِهَا عِمَامَةً أَوْ اُدْخُلْ بِهَا الْحَمَّامَ أَوْ نَحْوَ ذَلِكَ تَعَيَّنَتْ لِذَلِكَ مُرَاعَاةً لِغَرَضِ الدَّافِعِ، هَذَا إنْ قَصَدَ سَتْرَ رَأْسِهِ بِالْعِمَامَةِ وَتَنْظِيفَهُ بِدُخُولِهِ الْحَمَّامَ لِمَا رَأَى بِهِ مِنْ كَشْفِ الرَّأْسِ وَشَعَثِ الْبَدَنِ وَوَسَخِهِ، وَإِلَّا أَيْ وَإِنْ لَمْ يَقْصِدْ ذَلِكَ بِأَنْ قَالَهُ عَلَى سَبِيلِ التَّبَسُّطِ الْمُعْتَادِ، فَلَا تَتَعَيَّنُ لِذَلِكَ، بَلْ يَمْلِكُهَا أَوْ يَتَصَرَّفُ فِيهَا كَيْفَ شَاءَ. انتهى
◍ অনুরূপভাবে দানকারী যদি মানত হিসেবে গরু, ছাগল, মুরগি বা অন্য কিছু দান করে তাহলে মানত কারী যেভাবে মানত করেছেন সেভাবেই বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য। এর ব্যতিক্রম করা শরিয়ত সম্মত নয়।
◍ আর উক্ত দান যদি ‘যাকাত’ হিসেবে দেয়া হয় তাহলে তার হকদার মাদরাসার এতিম, অসহায় ও গরিব ছাত্র-শিক্ষগণ। ধনীরা তা খেতে পারবে না বা তা বিক্রয় করে মাদরাসার উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা যাকাতের জন্য ৮টি খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এর ব্যতিক্রম করা শরিয়ত সম্মত নয়। আর ৮ প্রকার যাকাত পাওয়ার হকদারদের মধ্যে সর্বপ্রথম হল, দরিদ্র অসহায় ব্যক্তিগণ। [দেখুন: সূরা তওবা এর ৬০ নং আয়াত]
-আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।