প্রশ্ন: কারও যদি জন্মের ৭ম দিনে আকীকা না করা হয় তাহলে অন্য সময় কি তা করা জায়েয হবে অথবা নিজের আকীকা নিজে দেয়ার যাবে? দলীল ভিত্তিক আলোচনা পূর্বক বিষয়টি স্পষ্ট করার অনুরোধ করছি।_
*উত্তর:*
সন্তান ভূমিষ্ট হলে পিতামাতার জন্য তার আকীকা দেয়া সুন্নাত মুআক্কাদাহ। তাই নিম্নে কখন কিভাবে এই আকীকা দিতে হয় সে ব্যাপারে আলোচনা পেশ করা হল:
🌀 জন্মের ৭ম দিনে শিশুর আকীকা দেয়া উত্তম। কেননা, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«كُلُّ غُلاَمٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى»
‘প্রত্যেক শিশুই তার আকীকার সাথে আবদ্ধ থাকে। জন্মের সপ্তম দিনে তার জন্য জবাই করা হবে এবং তার মাথার চুল মুণ্ডণ করা হবে আর নাম রাখা হবে। [আবূ দাউদ : ২৮৪০, মুসনাদ আহমদ : ২০০৯৫।]
🌀 তবে কোন কারণে ৭ম দিনে আকীকা করা সম্ভব না হলে ১৪তম দিনে অথবা ২১তম দিনে দেয়া উত্তম। এ ব্যাপারে হাদীস হল,
বুরাইদা ইবনে সুহাইব আল আসলামী রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
((العقيقةُ تُذْبَحُ لسَبْعٍ ، أوْ لِأَرْبَعَ عشرَةَ ، أوْ لِإِحْدى و عشرينَ))
المحدث:الألباني المصدر:صحيح الجامع الجزء أو الصفحة
4132 حكم المحدث:صحيح
المحدث:السيوطي المصدر:الجامع الصغير الجزء أو الصفحة:5681 حكم المحدث:صحيح
“আকীকা ৭ম দিনে জবাই করতে হবে, অথবা ১৪ দিনের দিনে অথবা ২১ দিনের দিনে।”
(সহীহুল জামে, ৪২৩২, শাইখ আলবানী। আল জামে আস সাগীর ৫৬৮১, সহীহ)
🌀 ২১ দিনের দিন আকীকা সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে, জীবনের যে কোন সময় আকীকা করা বৈধ। এমনকি নিজের আকীকা নিজেও দেয়া জায়েয়। এ মর্মে হাদীস হল:
আনাস বিন মালিক রা. বলেন,
أنَّ النبيَّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم عقَّ عنِ نفسِهِ بعدَ ما بُعِثَ نبيًّا
الراوي:أنس بن مالك المحدث:الألباني المصدر:السلسلة الصحيحة الجزء أو الصفحة:2726 حكم المحدث:إسناده حسن
“রাসূল সা. নবী হওয়ার পর নিজের আকীকা নিজেই করেছেন।” [শাইখ আলবানী উক্ত হাদীসটিকে একাধিক সনদের সমন্বয়ে হাসান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সিলসিলা সহীহা/ ২৭২৬)
তবে এ হাদীসটিকে অনেক মুহাদ্দিস যঈফ/দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করায় তাদের মতে নিজের আকীকা নিজে দেয়া জায়েয নয়। কিন্তু ইমাম আলবানী সহ আরেকদল মুহাদ্দিস হাদিসটি একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার ভিত্তিতে এটিকে ‘হাসান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আবার কোন কোন মুহাদ্দিস বলেন, এটি কেবল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য খাস। সুতরাং এ বিধান তার উম্মতের জন্য প্রযোজ্য নয়। কিন্তু পূর্বসূরীদের আমল থেকে বুঝা যায়, এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য খাস নয়।
🔰 *নিজের আকীকা নিজে দেয়ার ব্যাপারে সালাফ/পূর্বসূরীদের বক্তব্য:*
عن محمد بن سيرين قال : ” لو أعلم أنه لم يعق عني لعققت عن نفسي ” : أخرجه ابن ابي شيبة في ” المصنف (8/235 ـ236/4288
মুহাম্মদ বিন সীরীন রহ. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি যদি জানতে পারি যে, আমার আকীকা করা হয় নি তাহলে নিজের পক্ষ থেকে আকীকা দিব।” {মুসান্নাফ ইবনে শায়বা-8/235 ـ236/4288}
وعن الحسن البصري قال : ” إذا لم يعق عنك ؛ فعق عن نفسك ،وإن
كنت رجلا ” : أخرجه ابن حزم في ” المحلى ” (8/ 322) بإسناد حسنه شيخنا ـ رحمه الله ـ في” الصحيحة ” (6/506)
হাসান বাসরী রহ. বলেন, “যদি তোমার পক্ষ থেকে আকীকা না করা হয়ে থাকে তাহলে তুমি নিজেই আকীকা কর যদিও তুমি পরিণত বয়সের মানুষে পরিণত হও।” (মুহাল্লা-ইবনে হাযম, শাইখ আলবানী এটিকে হাসান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন) এছাড়াও এ মর্মে অন্যান্য ইমামদের বক্তব্য রয়েছে।
*মোটকথা,* সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার ৭ম দিনে আকীকা দেয়া অধিক উত্তম। তবে ১৪ বা ২১তম দিনেও দেয়া যায়। এমনকি পিতা যদি কারও আকীকা না দিয়ে থাকে তাহলে সন্তান জীবনের যে কোন সময় নিজের আকীকা নিজেই দিতে পারে ইনশাআল্লাহ। হাদীস ও সালাফদের বক্তব্য থেকে এটি অগ্রাধিকারযোগ্য অভিমত হিসেবে বিবেচিত হয়। আল্লাহু আলাম।
♦উল্লেখ্য যে, ছেলে সন্তানের জন্য দুটি আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি একটি ছাগল/দুম্বা আকীকা দেয়া সুন্নাতে মুআক্কাদা। ছাগল/দুম্বা না দিয়ে পুরো একটি গরু/উট জবাই করলেও অথবা কুরবানীর সময় গরু/উটের একভাগা দ্বারা আকীকা দিলে সুন্নাত আদায় হবে না। এ বিষয়ে ইতোপূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
✒✒✒✒✒✒✒
*উত্তর প্রদানে:*
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব