টাইম পাস এর উদ্দেশ্যে মোবাইল গেইম খেলা বৈধ কি?

উত্তর:
শরীয়ত বিরোধী কোন কিছু না থাকলে চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যে মাঝেমধ্যে শর্ত সাপেক্ষে মোবাইলে ‘গেইম খেলা’ খুব বেশি দোষণীয় নয়। শর্তাবলী হল, তাতে মিউজিক, বেপর্দা নারী/পুরুষ, হত্যাকাণ্ড, চুরি-ডাকাতি, চরিত্রহীনতার দিকে আহ্বান, অশ্লীলতা-নোংরামী ইত্যাদি না থাকা। অনুরূপভাবে বাজি ধরা বা জুয়ায় লিপ্ত হওয়া, খেলায় মত্ত হয়ে প্রচুর সময় নষ্ট করা, নামাযে গাফলতি এবং নিজ দায়িত্ব-কতর্ব্য পালনে অবহেলা প্রদর্শন ইত্যাদি না থাকা। উপরোক্ত শর্তাবলীর ব্যত্যয় ঘটলে তখন তা হারাম হবে।

 *যারা ‘টাইম পাস’ এর উদ্দেশ্যে ‘গেইম’ খেলতে চান তাদের উদ্দেশ্যে দুটি কথা:*
সময় কাটানোর ব্যাপারে বলব, মুসলিমের এই জীবনটা খুবই সংক্ষিপ্ত। সে তুলনায় আখিরাতের জীবন অনন্ত-অবারিত। আর জান্নাত অত্যন্ত মূল্যবান স্থান যা লাভ করা এতটা সহজ নয়। এ জন্য প্রয়োজন ঈমান ও আকীদা বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত আমলগুলো যত্নসহকারে সম্পাদন করা। কিন্তু আমরা আমাদের এই ছোট্ট জীবনে কতটুকুই বা আল্লাহর ইবাদত করতে পারছি?

হিসেব করলে দেখা যাবে, দুনিয়াবি কাজেই আমাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায়। উদাহরণ স্বরূপ ২৪ ঘণ্টা সময়কে আমরা কিভাবে কাটাই?
৫/৬ ঘণ্টা ঘুম, রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়া, সাংসারিক কাজ, প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারা, হোয়াটসআপ, ফেসবুক, ফোনকল, গল্প-গুজব, স্বামী-স্ত্রীর একান্ত সময় কাটানো, আনন্দ-বিনোদন, সন্তান-সন্ততির সেবাযত্ন ….এসব করতে করতেই আমাদের ২৪ ঘণ্টা সময়ের বেশিরভাগ কেটে যায়। তাহলে আমরা আসলে আল্লাহর ইবাদতে কতটুকু সময় ব্যয় করি?

সুতরাং মুসলিমের সময় অপচয় করার সুযোগ নাই। আমাদের উচিৎ সময়কে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর চেষ্টা করা। যতটকু সময় পাই ততটুকু আল্লাহর ইবাদত, তাসবীহ-তাহলীল, যিকির-আযকার, দুয়া, ইস্তিগফার, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআনের তরজমা ও ব্যাখ্যা পড়া, দ্বীনের জ্ঞানার্জন করা, মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা ইত্যাদি মর্যাদাপূর্ণ কাজে কাটানোর চেষ্টা করা উচিৎ। কেননা আল্লাহ তাআলা কুরআনে সময়ের কসম খেয়ে বলেছেন, যে নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত চারটি বৈশিষ্ট্য অর্জন ব্যতিরেকে। (এ জন্য পড়ুন সূরা আসর)

অত:এব আমরা যারা সময় কাটানো বা টাইম পাসের ওজুহাতে মোবাইল/কম্পিউটারে গেইম খেলা, নাটক, টিভি-সিনেমা দেখার কথা চিন্তা করি তাদের উচিৎ, আল্লাহর এবাদতে কতটুকু সময় ব্যয় করতে পারছি সে বিষয়ে পুনরায় চিন্তা করা। অন্যথায় আমরা আখিরাতে নিশ্চিতভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাব।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আখিরাতের ক্ষতি থেকে হেফাজত করুন আর আমরা যেন এই দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে আখিরাতে সাফল্য নিশ্চিত করতে পারি সেই তাওফিক দান করুন। আমীন।

*উত্তর প্রদানে:*
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব