প্রশ্ন: কোন নবীর উম্মতকে আল্লাহ তাআলা ‘অন্ধ জাতি’ বলেছেন এবং কেন বলেছেন?
উত্তর:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَكَذَّبُوهُ فَأَنجَيْنَاهُ وَالَّذِينَ مَعَهُ فِي الْفُلْكِ وَأَغْرَقْنَا الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا عَمِينَ
“অতঃপর তারা তাকে (নূহ আলাইহিস সালাম) কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। আমি তাকে এবং নৌকাস্থিত লোকদেরকে উদ্ধার করলাম এবং যারা মিথ্যারোপ করত, তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম। নিশ্চয় তারা ছিল অন্ধ।” (সূরা আরাফ: ৬৪)
❑ ব্যাখ্যা ও শিক্ষা:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নূহ আলাইহিস সালাম এর জাতিকে ‘অন্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ তারা সত্য দেখেও দেখে নি এবং হেদায়েত কবুল করে নি।
ইবনে কাসির রহ. বলেন,
( إنهم كانوا قوما عمين ) أي : عن الحق ، لا يبصرونه ولا يهتدون له
“তারা সত্যের ব্যাপারে ছিল অন্ধ। তারা সত্য অবলোকন করে নি এবং সত্যের পথ খুঁজে পায় নি।” (তাফসিরে ইবনে কাসির)
এ আয়াতটির শিক্ষা হল, চর্ম চক্ষু নয় বরং অন্তর চক্ষুর অন্ধত্বই প্রকৃত অন্ধত্ব। অর্থাৎ প্রকৃত অন্ধ তো তারাই যারা সত্য দিবালোকের মত প্রতিভাত হলেও তা দেখেতে পায় না এবং সত্যের পথ অনুসরণ করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَـٰكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ
“বস্তুত: চোখ তো আদৌ অন্ধ নয়, কিন্তু অন্ধ হচ্ছে হৃদয় যা রয়েছে বুকের ভেতরে।” (সূরা হজ্জ: ৪৫)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
وَمَا يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ
“আর অন্ধ ও চক্ষুষ্মান এক সমান নয়।” (সূরা গাফির/ফুসসিলাত: ৫৮) ইমাম কুরতুবি এ আয়াতের তাফসিরে বলেন,
وما يستوي الأعمى والبصير أي المؤمن والكافر والضال والمهتدي
“অন্ধ ও চক্ষুষ্মান এক সমান নয়- এ কথার অর্থ হল, মুমিন ও কাফির এবং পথভ্রষ্ট ও হেদায়েত প্রাপ্ত এক সমান নয়।”
অর্থাৎ যে ঈমানের পথ খুঁজে পেয়েছে এবং সত্য, সঠিক ও হেদায়েতের পথে পরিচালিত হয়েছে সে হল প্রকৃত চক্ষুষ্মান আর যে আল্লাহকে চিনতে ব্যর্থ হয়েছে, ঈমানের পথ খুঁজে পায় নি এবং সত্যের রাস্তা থেকে বিচ্যুত হয়েছে সে হল, প্রকৃত অন্ধ।
আমাদের অজানা নয় যে, পৃথিবীতে এমন বহু মনিষীর আবির্ভাব ঘটেছে যারা চর্মচক্ষু দ্বারা পৃথিবীর রূপ-সৌন্দর্য অবলোকন করে নি কিন্তু তাদের হৃদয় চক্ষু ছিল এত প্রখর যে, তারা তা দ্বারা সত্য ও সুন্দরের পথ খুঁজে পেয়েছেন, নিজেরা সে পথে পরিচালিত হয়েছেন এবং বিশ্বের অগণিত মানুষকে সে আলোকিত পথের সন্ধান দিয়েছেন। তারা তাদের মেধা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে লাখও মানুষে অন্ধত্বকে বিদূরিত করেছেন।
বস্তুত: যারা সত্য দেখে না তারা হল, প্রকৃত অন্ধ, যারা সত্য কথা শুনে না তারা হল, প্রকৃত বোধির আর যারা সত্য কথা বলে না তারা হল, প্রকৃত বোবা।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অন্ধত্ব, অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতার হাত থেকে রক্ষা করুন এবং ইসলামের চিরসত্য, উদ্ভাসিত, মহিমান্বিত ও মুক্তির অবারিত দ্বিধাহীন রাজপথ ধরে জীবন পরিচালনা করার তওফিক দান করুন। আমিন।
আল হামদুলিল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।