প্রশ্ন: কুরআনের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কি? সালাত ব্যতীত নিয়মিত কুরআন পড়া কি ফরজ?
উত্তর:
এ কথায় কোনও সন্দেহ নাই যে, যাবতীয় কল্যাণ, সর্বপ্রকার জ্ঞান-গরিমা, প্রজ্ঞা ও রহস্যের আধার হল আল কুরআন। একে অনুসরণ করেই দুনিয়া ও আখেরাতে পাওয়া যায় সুখের সন্ধান, মেলে সঠিক পথের দিশা। পক্ষান্তরে কুরআন থেকে দূরে থাকলে, কুরআনকে একমাত্র সংবিধান হিসেবে গ্রহণ না করলে নানারকম দুর্ভাগ্য, দুশ্চিন্তা, হতাশা, ব্যঞ্জনা ইত্যাদি মানব জীবনকে ঘিরে ফেলে, প্রতি পদে নেমে আসে গহীন অন্ধকার।
তাই আমাদের কর্তব্য, কুরআন মর্যাদা উপলব্ধি করত: কুরআনের প্রতি আমাদের দায়িত্ব-কতর্ব্য পালনে সবোর্চ্চ চেষ্টা করা।
◈◈ কুরআনের প্রতি আমাদের দায়িত্ব এবং সালাতের বাইরে কুরআন তিলাওযাতের বিধান:
প্রত্যেক মুসলিমের উপর অপরিহার্য কতর্ব্য, সালাতের বাইরেও রাত-দিন যথাসাধ্য কুরআন তিলাওয়াত করা, কুরআন নিজে শেখা, অন্যকে শেখানো, মুখস্ত করা, তরজমা ও তাফসির পাঠ করা, কুরআন অনুযায়ী আমল করা এবং কুরআনের শিক্ষাকে সমাজে ছড়িয়ে দেয়া।
● আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَأَنْ أَتْلُوَ الْقُرْآنَ
“আমি আরও আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি আজ্ঞাবহদের একজন হই এবং যেন আমি কুরআন পাঠ করি।” (সূরা নমল: ৯১ ও ৯২)
● রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ
“তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা, কুরআন কিয়ামতের দিন তার পাঠকদরে জন্য শুপারিশ করবে।” (সহীহ মুসলিম)।
● সূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন,
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَه
“তোমদের মধ্যে সেই উত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী)।
● আল্লাহ তাআলা বান্দাদেরকে কুরআন নিয়ে গবেষণা করার নির্দেশ প্রদান করে বলেছেন, যারা তা করে না তারা অন্ধ এবং বদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী। তিনি বলেন,
أَفَلا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا
“তারা কি কুরআন নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা করে না? না তাদের অন্তর তালাবন্ধ?” (সূরা মুহাম্মাদঃ ২৪)
এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে, কুরআনের সম্মান কত বেশি! কুরআন পাঠ করা, মুখস্থ করা, কুরআন নিয়ে গবেষণা করা, কুরআনের অর্থও মর্মবাণী উপলব্ধি করার চেষ্টা করা, একে নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করার মর্যাদা কত উন্নত!
যাহোক, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তো প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য ফরজ। আর কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া সালাত শুদ্ধ হয় না। বিধায় সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করাও ফরজ। কিন্তু সালাতের বাইরে যথাসাধ্য পাঠ করা উচিৎ। কেউ যদি কখনোই কুরআন তিলাওয়াত না করে, কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে তারা কুরআন পরিত্যাগ কারা অপরাধে অপরাধী হবে।
◈◈ কুরআনকে কিভাবে পরিত্যাগ করা হয়?
আল্লামা ইবনুল কায়্যেম রাহ. বলেন, “কুরআনকে কয়েক ভাবে পরিত্যাগ করা হয়। যথা:
◍ এক: কুরআন শ্রবণ না করা, কুরআনের প্রতি বিশ্বাস পোষণ না করা এবং কুরআনের প্রতি মনোযোগ না দেয়া।
◍ দুই: আমল না করা, বৈধ-অবৈধের প্রতি তোয়াক্কা না করা- যদিও পড়ে এবং বিশ্বাস করে।
◍ তিন: দ্বীনের মৌলিক এবং শাখা সর্বক্ষেত্রে কুরআনকে সংবিধান হিসেবে গ্রহণ না করা।
◍ চার: কুরআনের অর্থ এবং ব্যাখ্যা না জানা এবং কুরআনের মধ্যে আল্লাহ তাআলা কি বলতে চেয়েছেন তা অনুধাবন করার চেষ্টা না করা।
◍ পাঁচ: কু প্রবৃত্তি মনের যাবতীয় রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা করতে কুরআন থেকে সাহায্য না নেয়া।
উল্লেখিত বিষয়গুলো সবই এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় যেখানে আল্লাহ তা’য়াল বলেন,
وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذَا الْقُرْآَنَ مَهْجُورًا
“রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আমার পরওয়ারদেগার, আমার সম্প্রদায় এ কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে।” (সূরা ফুরকান: ৩০)
যদিও উল্লেখিত দিকগুলো কোনটা বেশী কঠিন, কোনটা তুলনা মূলক হালকা।
◈◈ কুরআন থেকে দূরে থাকার কারণ:
যেসব কারণে মানুষ কুরআন থাকে দূরে থাকে বা কুরআন পরিত্যাগ করে সেগুলো নিন্ম রূপ:
● ১) কুরআনকে সে অবিশ্বাস করে বা মিথ্যা মনে করে যদিও সে তা প্রকাশ করে না।
● ২) কুরআনের মর্মবাণী এবং বিস্ময়কর দিকগুলোর ব্যাপারে সে অজ্ঞ।
● ৩) দুনিয়া নিয়ে সে এতটাই মগ্ন যে পরকালকে ভুলে গেছে।
● ৪) গান-বাজনা শোনায় অভ্যস্ত বা গান-বাজনা চর্চা করে।
● ৫) আজ নয়, কাল থেকে শুরু করব এভাবে সময় ক্ষেপণ করতে থাকা।
● ৬) কুরআন বাদ দিয়ে অন্য জ্ঞান চর্চায় সময় ব্যয় করা। যেমন: কতিপয় মানুষ ইসলামী জ্ঞান চর্চার নামে হাদীস, ফিক্হ, ইসলামী সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে সার্বক্ষণিক সময় ব্যয় করে কিন্তু একবারও কুরআন পড়তে বসে না। এটা খুবই দূষণীয়। বরং উচিৎ হল, এসবের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করা। কারণ, কুরআন বাদ দিয়ে কোন জ্ঞানই অর্জন করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ আমাদেরকে সালাতে এবং সালাতের বাইরে যথাসাধ্য কুরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি তার প্রতি আমাদের দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল৷
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব৷