একটি প্রচলিত বানোয়াট হাদিস আমার উম্মতের আলেমগণ বনি ইসরাইলের নবীদের মত

একটি প্রচলিত বানোয়াট হাদিস: “আমার উম্মতের আলেমগণ বনি ইসরাইলের নবীদের মত!”
▬▬▬▬◈◉◈▬▬▬▬
প্রশ্ন: “একজন উম্মতে মুহাম্মদির মর্যাদা বনী ইসরাইলের একজন নবীর সমান!” এ কথা কি সঠিক?

উত্তর:
ভণ্ড বিদআতি, সুফিরা তাদের বিদআতি কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়ার উদ্দেশ্যে এ ধরণের হাদিস তৈরি করেছে। এভাবেই তারা হককে বাতিলে সাথে, সত্যকে মিথ্যার সাথে একাকার করে দীন ইসলামকে কলুষিত করার চেষ্টা করেছে অসংখ্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন হাদিস তৈরি করার মাধ্যমে। আর এসব কথিত হাদিসের কারণে এই উম্মতের মধ্যে কত যে বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে তার কোনও ইয়োত্তা নাই। এমনই বিভ্রান্তি মূলক হাদিসগুলোর মধ্যে এটি একটি। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন)

তারা এই উম্মতের আলেমদেরকে বনি ইসরাইলের নবীদের সমপর্যায়ে বসিয়েছে নিম্নোক্ত হাদিস তৈরি করার মাধ্যমে। বানোয়াট হাদিসটি হল,
علماء أمتي كأنبياء بني إسرائيل
“আমার উম্মতের আলেমগণ বনি ইসরাইলের নবীদের মত।”

বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ বলেন, এটি কোনও হাদিস নয় বরং হাদিসের নামে ভিত্তিহীন কথা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে চরম মিথ্যাচার। (নাউযুবিল্লাহ)

◯ নিম্নে এ কথিত হাদিস সম্পর্কে সম্মানিত মুহাদ্দিসগণের অভিমত উপস্থাপন করা হল:

● যরকাশি এ হাদিস সম্পর্কে বলেন, لا يعرف له أصل “এর কোনও ভিত্তি জানা যায় না।” (আল লাআলি/১৬৭)
● আজলুনী বলেন, এটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা। (কাশফুল খাফা ওয়া মুযীলিল ইলবাস)
● সু্য়ূতী বলেন, لا أصل له “এর কোনও ভিত্তি নাই।” (আদ দুরারুল মানসুরা)
● মোল্লা আলি কারী বলেন, قيل لا أصل له أو بأصله موضوع “বলা হয়েছে, এর কোন ভিত্তি নাই বা এর মূল হল বানোয়াট।” (আল আসরার আল মরফুআহ ২৪৭)
● যুরকানি বলেন, لا أصل له “এর কোনও ভিত্তি নাই।” (মুখতাসারুল মাকাসিদ/৬৫২)
● আলবানি বলেন, لا أصل له “এর কোনও ভিত্তি নাই।” (সিলসিলা যাঈফা/৪৬৬)

◈◈ নবীদের সাথে অন্য কোনও মানব সন্তানের তুলনা করা বৈধ নয়:

ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন,
النبي أفضل من الولي وهو أمر مقطوع به عقلاً ونقلاً، والصائر إلى خلافه كافر لأنه أمر معلوم من الشرع بالضرورة
“একজন নবী, আল্লাহর ওলি থেকেও শ্রেষ্ঠ। এটি বিবেক ও দলিলের আলোকে চূড়ান্ত কথা। এর বিপরীত মত পোষণকারী কাফের। কারণ এটি শরিয়তের এমন বিষয় যা জানা অপরিহার্য।” (সহিহ বুখারি ভাষ্য গ্রন্থ ফাতহুল বারী)
সুতরাং এই উম্মতের আলেমদেরকে বনি ইসরাইলে নবীদের সাথে তুলনা করা নবীদের শানে চরম বেয়াদবি ও ধৃষ্টতা। আল্লাহর নবীগণ সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচত সর্বোত্তম মানুষ। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি প্রাপ্ত-যে মর্যাদা আর কোন মানুষকে দেয়া হয় নি।

তবে এক কথা সঠিক যে, আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ (উত্তরসূরী)। যেমন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
وَإِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ، وَإِنَّ الْأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا، وَلَا دِرْهَمًا وَرَّثُوا الْعِلْمَ، فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ
“আলেমগণ নবীদের উত্তরসূরী। নবীগণ উত্তরাধিকারী সম্পদ হিসেবে দিনার-দিরহাম তথা অর্থ-সম্পদ রেখে যান না বরং তারা উত্তরাধিকারী সম্পদ হিসেবে রেখে গেছেন ইলম। যে সেটাকে গ্রহণ করল সে যেন পুর্ণ অংশকেই গ্রহণ করল।” (তিরমীজি-২৬৮২,আবু দাউদ-৩৬৪১, ইবনে মাজাহ-২২৩, মুসনাদে ইবনে আবি শায়বা-৪৭, মুসনাদে আহমাদ- ২১৭১৫)
নবীদের দায়িত্ব ছিল, আল্লাহর পক্ষ অবর্তীণ ওহীর জ্ঞানকে মানুষের মাঝে প্রচার করা। ওলামাগণ সেই ওহীর জ্ঞানেরই ধারক ও বাহক। এই দৃষ্টিতে তাদেরকে ‘নবীদের উত্তরাধিকারী’ বলা হয়েছে।
সুতরাং বানোয়াট ও হাদিসের নামে প্রচলিত মিথ্যা ও বানোয়াট হাদিস বর্ণনা ও প্রচারের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। অন্যথায় তার পরিণত অত্যন্ত ভয়াবহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ” (رواه البخاري)
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যা রোপ করল (মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করল), সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা করে নিল।” (সহিহ বুখারি, অনুচ্ছেদ: নবিদের হাদিস, হাদিস নং ৩২৭৪)
আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◈◉◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: