প্রশ্ন: আমাদের দেশে মসজিদের ইমামকে ‘হুজুর’ বলা হয়। এভাবে কাউকে ‘হুজুর’ বলাটা কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
‘হুজুর’ শব্দটি আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। সাধারণত: আলেম, মসজিদের ইমাম ও দ্বীনদার-পরহেযগার মানুষদেরকে ‘হুজুর’ বলে সম্বোধন করা হয়।
নিম্নে এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হল:
♻ ‘হুজুর’ শব্দের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:
▪ ‘হুজুর’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হল, উপস্থিত হওয়া।
▪ “পরিভাষায় এটি সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মানসূচক সম্বোধনের জন্য ব্যবহার করা হয়।” (ফার্সী অভিধান গিয়াসুল লুগাত, পৃষ্ঠা/১৭৪)
▪ অনলাইন ভিত্তিক অভিধান ebanglalibrary.com এ বলা হয়: হুজুর [ hujura] বি. নৃপতি, বিচারপতি, মনিব প্রভৃতিকে সম্মানসূচক সম্বোধন।
▪ বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানেও প্রায় একই কথা বলা হয়েছে।
এটি বাংলা ভাষায় জনাব, মহাশয়, মহোদয় ইত্যাদি এবং ইংরেজিতে স্যার এর মত একটি সম্মান সূচক শব্দ।
পূর্ব যুগে রাজা-বাদশাহ, বিচারপতি, মনীব প্রমূখ ব্যক্তিবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে ‘হুজুর’ বলে সম্বোধন করার রীতি প্রচলিত ছিল।
সুতরাং এ অর্থে হুজুর শব্দের ব্যবহারে কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ।
🔸 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে হুজুর শব্দের ব্যবহারও প্রচলিত রয়েছে। এখানেও মূলত: তাঁকে সম্মান দেখানোর নিমিত্তে তার শানে এ শব্দটি প্রয়োগ করা হয়।
তবে কেউ যদি এ শব্দটির শব্দিক অর্থের দিক থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বত্র হাজির-নাজির মনে করে তার শানে এই শব্দ ব্যবহার করে তাহলে নি:সন্দেহে তা জায়েয নয়। কেননা, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাজির তথা সর্বত্র উপস্থিত, তিন সব কথা শুনেনন, জানেন ইত্যাদি বিশ্বাস থাকা শিরক। এগুলো একমাত্র আল্লাহর গুণ। আল্লাহর মত আল্লাহর নবীও সব জায়গায় বিরজমান, সবজায়গায় হাজির থাকার বিশ্বাস আল্লাহর সাথে শিরকের নামান্তর।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তাআলা সত্তাগতভাবে সপ্ত আসমানে আরশে আজিমের উপরে অবস্থান করেন কিন্তু তাঁর জ্ঞান, নিয়ন্ত্রণ, কর্তৃত্ব, সার্বভৌম ক্ষমতা ইত্যাদি সর্বত্র বিরাজমান। এটি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা।
আল্লাহু আলাম।
🖋🖋🖋🖋🖋🖋
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।