আশুরা তথা মুহররমের ১০ তারিখে রোযা রাখার ফযিলত কি

প্রশ্ন: আশুরা তথা মুহররমের ১০ তারিখে রোযা রাখার ফযিলত কি? এ দিন ভালো খাবারের আয়োজন করলে সারা বছর ভালো খাওয়া যায়-এ কথা কি ঠিক?
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর:

◈◈ আশুরার রোযা রাখার ফযিলত:

বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আশুরা তথা মুহররম মাসের ১০ তারিখে রোযা রাখলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা পেছনের এক বছরের গুনাহ মোচন করে দিবেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
আবু কাতাদা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন:
ثَلاثٌ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ فَهَذَا صِيَامُ الدَّهْرِ كُلِّهِ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ
“প্রতি মাসে তিন দিন এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযান পর্যন্ত রোযা রাখলে সারা বছর রোযা রাখার সাওয়াব অর্জিত হয়। আরাফার দিন রোযা রাখলে আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর বিনিময়ে পেছনের এক বছরের এবং সামনেরে এক বছরের (মোট দু বছরের) গুনাহ মোচন করবেন। আর আশুরার দিন (মুহররম মাসের ১০ তারিখে) রোযা রাখলে আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর বিনিময়ে পেছনের এক বছরের গুনাহ মোচন করবেন।” (সহীহ মুসলিম হা/১১৬২)

➤ উল্লেখ্য যে, ৯ ও ১০- দু দিন রোযা রাখা অধিক উত্তম। তবে কোনো কারণে ৯ তারিখে রোযা রাখা সম্ভব না হলে ১০ ও ১১ তারিখে রাখা জায়েজ।

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহঃ বলেন: ”মাসের শুরু চিনতে অসুবিধা হলে (৯, ১০ ও ১১ এ) তিন দিন রোযা রাখবে। যেন ৯ ও ১০ তারিখে রোযা নিশ্চিতভাবে সম্পন্ন করা যায়। (মুগনী ৩/১৭৪)

◈◈ আশুরার দিন ভালো খাবারের আয়োজন করা:

‘আশুরার দিন ভালো খাবার খেলে বা মানুষকে খাওয়ালে সারা বছর ভালো খাওয়া যাবে’ এটি একটি বাতিল ও কুসংস্কার পূর্ণ কথা। আল্লাহর দুশমন শিয়া রাফেযী সম্প্রদায়ের পক্ষ এ সব কথা আবিষ্কার করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে আর দ্বীনের বিশুদ্ধ জ্ঞান বঞ্চিত অজ্ঞ-মূর্খ মানুষেরা এ সব কথায় বিশ্বাস করে। জাহেল বিদআতিরা শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত (কথিত শবে বরাত) সম্পর্কেও এ ধরণের কথাবার্তা বলে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ সব কথা ভিত্তিহীন ও বাতিল।

মোটকথা, ‘এক দিন ভালো খাবার খেলে সারা বছর ভালো খাবার খাওয়া যাবে’- এই জাতীয় কথা ইসলাম আদৌ সমর্থন করে না-উপলক্ষ যাই হোক না কেন।

উল্লেখ্য যে, আশুরার দিন নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য খোলা হাতে খরচ করা বা ভালো খাবার-দাবারের আয়োজন করার ব্যাপারে কিছু হাদিস পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো একটিও সহিহ নয় বরং সবগুলো জঈফ বা দুর্বল।
————————
🌀 শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রহঃ কে প্রশ্ন করা হল:

প্রশ্ন: শিয়ারা আশুরার দিন যে খাবার রান্না করে তা কি খাওয়া জায়েজ হবে? উল্লেখ্য যে, তারা বলে, এই খাবারটা আল্লাহর উদ্দেশ্যে কিন্তু খাবারের সওয়াব হুসাইন রা. এর উদ্দেশ্য।
আরেকটি কথা হল, আমি যদি তাদের খাবারটা গ্রহণ না করি, তাহলে এতে আমার সমস্যা বা বিপদ হতে পারে। কারণ আমি ইরাকে আছি। আর আপনারা জানেন, তারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর সাথে কেমন আচরণ করে।

◈ উত্তরে তিনি বলেন:

“هذا منكر شنيع وبدعة منكرة ، يجب تركه ولا تجوز المشاركة فيه ، ولا يجوز الأكل مما يقدم فيه من الطعام “.
وقال : ” ولا تجوز المشاركة فيه , ولا الأكل من هذه الذبائح ، ولا الشرب من هذه المشروبات ، وإن كان الذابح ذبحها لغير الله من أهل البيت أو غيرهم فذلك شرك أكبر ؛ لقول الله سبحانه : ( قُلْ إِنَّ صَلاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ) الأنعام/162-163،

وقوله سبحانه : ( إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ) الكوثر /1-2 ”

انتهى من “فتاوى الشيخ عبد العزيز ابن باز” (8/320)

“এটি একটি মারাত্মক অন্যায় ও জঘন্য বিদআত। এটি বর্জন করা ওয়াজিব (অবশ কর্তব্য)। এতে অংশ গ্রহণ করা জায়েজ নাই এবং এ দিন যে খাবার পরিবেশন করা হয় তা খাওয়া জায়েজ নাই।
তিনি আরও বলেন:
“এতে অংশ গ্রহণ করা জায়েজ নাই। তাদের এ এসব জবেহ কৃত প্রাণীর গোস্ত খাওয়া বা পানীয় পান করা জায়েজ নাই। আর যদি পশুগুলো জবেহ করে গাইরুল্লাহ তথা আহলে বাইত বা অন্য কারো উদ্দেশ্যে তাহলে এটি শিরকে আকবর (বড় শিরক)। আল্লাহ তাআলা বলেন:
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّـهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
“আপনি বলুন: আমার সালাত, আমার কুরবানি এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্য শীল।” (সূরা আনআম: ১৬২)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
“অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানি করুন।” (সূরা কাওসার: ২) [ফাতাওয়া শাইখ বিন বায ৮/৩২০]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব।।