৭/৮ বছর বয়সের শিশুর ইমামতিতে সালাত আদায় করা কি বৈধ?

প্রশ্ন: আমার ছেলের বয়স সাড়ে সাত বছর। মাদরাসায় পড়ে। খুব সুন্দর কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে। কুরআনের আম্মা পারা (৩০তম পারা) মুখস্থ হয়েছে। সুতরাং আমরা মহিলারা যদি বাড়িতে তার ইমামতিতে জামাআতের সাথে নামায আদায় করি তাহলে কি শুদ্ধ হবে?

উত্তর:

❑ মূল প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমরা আলোচনা করবো, মূলত: ৭/৮ বছরের শিশুর ইমামতি করা বৈধ কি না?

উত্তর হল, কোন শিশু যদি ‘ভাল-মন্দ পার্থক্য করার বয়সে’ উপনীত হয় তাহলে সে যদি সঠিকভাবে সালাত পড়াতে পারে এবং তার কিরাআত বিশুদ্ধ হয় তাহলে (অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য মতানুসারে) তার ইমামতিতে নামায আদায় করা জায়েয আছে- (যদিও এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। )
 ইসলামী শরীয়তে সর্বনিম্ন ৭ বছর বয়সের শিশুকে مميَّز বা ‘ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী’ হিসেবে গণ্য করা হয়। (৭ বছরের শিশু বলতে বুঝায়, যার বয়স ৭ বছর পূর্ণ হয়েছে)
কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৭ বছরের শিশুকে নামাযের আদেশ করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন:
«مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في المضَاجِعِ»
‘‘তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে। আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’’ (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে। রিয়াযুস সালিহীন, হ/306 অধ্যায়: ১/ বিবিধ (كتاب المقدمات) তাওহীদ পাবলিকেশন)

সুতরাং এ বয়সী ছেলের ইমামতিতে নামায পড়া পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্য বৈধ- যদি তার মধ্যে নামায পড়ানোর যোগ্যতা থাকে এবং সে সুন্দরভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে।

➤ এ মর্মে হাদিস হল:

আমর ইবনে সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْثَرُكُمْ قُرْآنًا فَنَظَرُوا فَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَكْثَرَ قُرْآنًا مِنِّي لِمَّا كُنْتُ أَتَلَقّى مِنَ الرُّكْبَانِ فَقَدَّمُونِي بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَأَنَا ابْنُ سِتِّ أَوْ سَبْعِ سِنِينَ وَكَانَتْ عَلَيَّ بُرْدَةٌ كُنْتُ إِذَا سَجَدْتُ تَقَلَّصَتْ عَنِّي فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنَ الْحَيِّ أَلَا تُغَطُّونَ عَنَّا اسْتَ قَارِئِكُمْ فَاشْتَرَوْا فَقَطَعُوْا لِي قَمِيْصًا فَمَا فَرِحْتُ بِشَيْءٍ فَرَحِي بِذلِكَ الْقَمِيْصِ.
“সলাতের সময় হলে তোমাদের একজন আযান দেবে। আর তোমাদের মধ্যে যে বেশি ভালো কুরআন পড়তে জানে সে ইমামতি করবে।”
যাহোক যখন সলাতের সময় হল (জামা‘আত প্রস্তুত হল) লোকজন কাকে ইমাম বানাবে সে ব্যাপারে পরস্পরের প্রতি দেখতে লাগল। কিন্তু আমার চেয়ে ভালো কুরআন পড়ুয়া কাউকে পায় নি। তখন তারা আমাকেই (ইমামতি করার জন্য) আগে বাড়িয়ে দিলো। এ সময় আমার বয়স ছিল ছয় অথবা সাত বছর।” (বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) হাদিস নম্বরঃ [1126] অধ্যায়ঃ পর্ব-৪ঃ সলাত (كتاب الصلاة) হাদিস একাডেমী)
– নাসায়ীতে এসেছে, এমতাবস্থায় আমি আট বছরের ছেলে।
– আবূ দাউদে এসেছে, এমতাবস্থায় আমি সাত বা আট বছরের ছেলে।

সুতরাং উপরোল্লিখিত শর্ত সাপেক্ষে সাত বছরের শিশু (অর্থাৎ যার বয়স ৭ বছর পূর্ণ হয়ে ৮ বছরে পদার্পণ করেছে) ইমামতি করতে পারে।
তবে যে মসজিদে তার চেয়ে বড় বয়সের ইলম ও কিরাআতের ক্ষেত্রে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছে তাকেই ইমামতির দায়িত্ব দেয় উচিৎ। কারণ ইমামতি একটি গুরু দায়িত্ব এবং বিরাট জিম্মাদারি-যা ছোট শিশুর হাতে অর্পন করা সঙ্গত নয়।

❑ ৭/৮ বছরের শিশু বাড়িতে তার মা-বোনদেরকে নিয়ে জামাআতে নামায আদায় করা কি শরীয়ত সম্মত?

উত্তর:
আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি যে, নামায পড়ানোর যোগ্যতা ও কুরআন তিলাওয়াত ভালো হলে ৭/৮ বছর বয়সের ছেলের ইমামতি করা বৈধ। কিন্তু বাড়িতে তার মা, বোন এবং অন্যান্য মহিলাদেরকে নিয়ে জামাআতে ফরয সালাত পড়ানো ঠিক নয়। বরং তারাবীহ, তাহাজ্জুদ বা অন্যান্য নফল সালাত পড়াতে পারে। অথবা ঝড়-তুফান ও মেঘ-বৃষ্টির দিনে অথবা যদি অন্য কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে মসজিদে যাওয়া কষ্টকর হয় তাহলে ফরজ নামাযও পড়াতে পারে। কিন্তু সাধারণ অবস্থায় ফরজ নামাযের জন্য ছেলেদেরকে মসজিদে যাওয়া জরুরি। তাই ফরয সালাতের ক্ষেত্রে মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে মহিলাদেরকে নিয়ে ইমামতি করা উচিৎ নয়।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬🔸🔹🔸▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার. KSA.