হঠাৎ যদি কোথাও সালাতের ইমামতি করতে হয় তাহলে কী করবেন? কীভাবে করবেন?

ইমামতি করার পদ্ধতি ও বিধি-বিধান

▬▬▬❖✪❖▬▬▬
অনেক সময় বিশেষ পরিস্থিতিতে সালাতের ইমামতি করার প্রয়োজন হতে পারে। তখন অনেকেই সালাতের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ভালো জানার পরও এ ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে যায় ইমামতিতে অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে বা এ সংক্রান্ত কিছু বিষয় না জানার কারণে।
অনেকে প্রশ্ন করে, ইমামতির জন্য বিশেষ কোনও নিয়ত বা দুয়া-তাসবিহ আছে কি না? বা ইমামের জন্য অতিরিক্ত কী করণীয়?
তাই বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিম্নে ইমামতির জন্য কী কী করণীয় বা এ ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো লক্ষণীয় সেগুলো অতি সংক্ষেপে তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে তার আগে বলবো:
যদি বিশেষ কোনও কারণে ইমাম সাহেব মসজিদে না আসতে পারে তাহলে তার কর্তব্য হল, মুয়াজ্জিন অথবা এমন কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত নিয়োগ দেয়া যে ইমামতি করার যোগ্যতা রাখে। কারণ সালাত হল, তাওহীদের পরে ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সুতরাং এ গুরু দায়িত্বে কোনও ঢিলেমি বা অবহেলা কাম্য নয়।যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব নিয়ে না দিলে হয়ত এমন কেউ সামনে যাবে যার ইমামতির যোগ্যতা নেই। তখন মুসল্লিদের সালাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
الإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَنٌ اللَّهُمَّ أَرْشِدِ الأَئِمَّةَ وَاغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَ
“মসজিদের ইমাম হল জিম্মাদার এবং মুয়াজ্জিন হল, আমানতদার। হে আল্লাহ, তুমি ইমামদের সঠিক পথ দেখাও এবং মুয়াজ্জিনদেরকে ক্ষমা কর।” [সুনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)| অধ্যায়: ২/ সালাত (নামায) (كتاب الصلاة) | অনুচ্ছেদ: ৩৭. নামাযের সময় নির্ধারণে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব। হা/ ৫১৭-সহিহ]
❑ ইমামের জন্য বিশেষ কী করণীয় বা কোন কোন বিষয়গুলো লক্ষণীয়?
◯ ১. অসুস্থতা, সফর বা জরুরি কনো কারণে যদি ইমাম সাহেব মসজিদে না আসতে না পারে এবং কাউকে ইমামতির দায়িত্বও না দিয়ে যায় তাহলে সালাতের সময় মুসল্লিগণ পরামর্শ করে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে ভালো কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে এবং সালাতের বিধিবিধানগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখে তাকে ইমামতির দায়িত্ব দিবে। যেমন: আবু মাসঊদ আনসারি রা. বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ
“লোকদের ইমামতি সে ব্যক্তি করবে যে তাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি কুরআন পাঠে অভিজ্ঞ।” (সহিহ মুসলিম, হা/৬৭৩)
কিন্তু মুসল্লিগণ কাউকে নির্বাচন না করলে যে ব্যক্তি নিজেকে ইমামতির যোগ্য মনে করবে সে মুসল্লিদের অনুমতি ক্রমে সামনে যাবে। মুসল্লিদের অনিচ্ছা স্বত্বেও অথবা তাদের অনুমতি ছাড়া সামনে অগ্রসর হওয়া উচিৎ নয়। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ سَهْلٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ خَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصْلِحُ بَيْنَ بَنِي عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ، وَحَانَتِ الصَّلاَةُ، فَجَاءَ بِلاَلٌ أَبَا بَكْرٍ ـ رضى الله عنهما ـ فَقَالَ حُبِسَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَتَؤُمُّ النَّاسَ قَالَ نَعَمْ إِنْ شِئْتُمْ‏.‏ فَأَقَامَ بِلاَلٌ الصَّلاَةَ، فَتَقَدَّمَ أَبُو بَكْرٍ ـ رضى الله عنه ـ فَصَلَّى
সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনি আমর ইবনে আওফ এর মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেন। ইতোমধ্যে সালাতের সময় উপস্থিত হল। তখন বিলাল রা. আবু বকর রা. এর কাছে এসে বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আপনি লোকদের সালাতে ইমামতি করবেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদি তোমরা চাও।” [সহিহ বুখারি (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১৯/ তাহাজ্জুদ বা রাতের সালাত (كتاب التهجد), পরিচ্ছেদঃ ৭৫৯. সালাতে পুরুষদের জন্য যে ‘তাসবীহ্‌’ ও ‘তাহ্‌মীদ’ বৈধ। হা/১১২৮]
ইবনুল বাত্তাল বলেন,
فيه من الفقه: أن الصلاة لا يجب تأخيرها عن وقتها المختار، وإن غاب الإمام الفاضل، وفيه: أنه لا يجب لأحد أن يتقدم جماعة لصلاة، ولا غيرها، إلا عن رضا الجماعة؛ لقول أبي بكر: نعم إن شئتم، وهو يعلم أنه أفضلهم بعد رسول الله (صلى الله عليه وسلم).
“এ হাদিসে যে জ্ঞান পাওয়া যায় তা হল, সালাতকে তার উত্তম সময় থেকে পেছানো ওয়াজিব নয় যদিও মর্যাদাবান ইমাম অনুপস্থিত থাকে। আরও জানা যায় যে, লোকজনের সম্মতি ছাড়া সালাত বা অন্য কাজে কারও জন্য আগ বাড়িয়ে সামনে যাওয়া আবশ্যক নয়। যেহেতু আবু বকর রা. বলেছেন, “হ্যাঁ, যদি তোমরা চাও।” অথচ তিনি জানতেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে, তিনি সাহাবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।” (আল মুহাল্লাব)
◯ ২. যে ইমাম হবে তার জন্য আলাদা কোন নিয়ত বা দুআ-দরুদ নাই। বরং কোন ওয়াক্তের কত রাকআত নামাজ পড়া হবে তা মনের মধ্যে উপস্থিত থাকাই যথেষ্ট। ইমাম-মুক্তাদি কারও জন্যই সালাতে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা শরিয়ত সম্মত নয়।। কেননা প্রচলিত গদ বাধা নিয়ত বিদআত।
◯ ৩. ইমাম হিসেবে এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, তার পেছনে মুক্তাদিগণ আছে। তাই সালাতের তাকবিরগুলো উচ্চ আওয়াজে দিবে যেন, পেছনের মুক্তাদিগণ তাকে অনুসরণ করতে পারে।
◯ ৪. জেহরি সালাত তথা যে সকল সালাতে সরবে কিরাআত পাঠ করতে হয় (যেমন: মাগরিব ও ইশার প্রথম দু রাকআত এবং ফজরের দু রাকআত) আর সে সকল সালাতে নীরবে কিরাআত পাঠ করতে হয় (যেমন: যোহর ও আসর) সেগুলোতে নীরবে কুরআন পাঠ করবে।
◯ ৫. এত দ্রুত সালাত আদায় করবে না যে, মু্ক্তাদিগণ তাকে ঠিকমত অনুসরণ করতে পারে না আবার এত দীর্ঘ কিরাত বা রুকু-সেজদা করবে না যে, পেছনে মুসল্লিদের কষ্ট হয়ে যায়।
মোটকথা, পেছনের মুক্তাদিদের কথা স্মরণ রেখে যথানিয়মে সুন্দর ভাবে ইমামতি করবে। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬❖✪❖▬▬▬
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।