হজে আকবর (আকবরি হজ) সম্পর্কে বিভ্রান্তি নিরসন

প্রশ্ন: “আরাফার দিন যদি জুমাবার হয় তাহলে কি এ হজকে ‘আকবরি হজ’ বলা হয়।” এ কথা কি সঠিক?
উত্তর:
শব্দটি ‘আকবরি হজ’ নয় বরং হজে আকবর (বা আল হাজ্জুল আকবার)। “আরাফার দিন যদি জুমাবার হয় তাহলে কি এ হজকে ‘আকবরি হজ’ বলা হয়”-এটি আমাদের সমাজে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা ছাড়া কিছু নয়। মূলত: প্রতিটি হজকেই হজে আকবর (বড় হজ) আর (অধিক বিশুদ্ধ মতে) উমরাকে হজে আসগর (ছোট হজ) বলা হয়-তা যে দিনই সংঘটিত হোক না কেন। যেমন: আল্লাহ তাআলা মূল হজকে ’হজে আকবর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,

وَأَذَانٌ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الْحَجِّ الْأَكْبَرِ أَنَّ اللَّهَ بَرِيءٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ ۙ وَرَسُولُهُ ۚ فَإِن تُبْتُمْ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ

“আর হজে আকবর (বড় হজ) এর দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা করে দেওয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরেকদের থেকে সম্পর্কমুক্ত এবং তাঁর রসূলও।” [সূরা তওবা: ৩]

মুফাসসিরগণের অভিমত হল, আয়াতে উল্লেখিত হজে আকবারের দিন হল, আরাফার দিন। মতান্তরে তার পরের দিন ইয়ামুন্নহর (বা হাজিদের কুরবানির দিন।) এ বিষয়ে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে ত্ববারিতে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أمرتم بإقامة أربع : إقامة الصلاة ، وإيتاء الزكاة ، وأقيموا الحج والعمرة إلى البيت ، والحج : الحج الأكبر ، والعمرة : الحج الأصغر
رواه الطبراني في الكبير ، ورجاله ثقات
“তোমাদেরকে চারটি জিনিস বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যথা: সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান এবং আল্লাহর ঘরের হজ ও ওমরা আদায়। হজ হল, হজে আকবর (বড় হজ) আর ওমরা হল, হজে আসগর (বা ছোট হজ)।” [তবারানি, বর্ণনাকারীগণ সকলে সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য।]

সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এখানে হজকে ‘হজে আকবর’ (বড় হজ) আর উমরাকে ‘হজে আসগর’ (ছোট হজ) হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

◈ হজে আকবর (বড় হজ) এর দিন কোনটি?

হজে আকবর হল, ইয়াউমু আরাফাহ (আরাফার দিন), মতান্তরে ইয়ামুন্নাহর (জিল হজ মাসের ১০ম দিন-যে দিন হাজিগণ কুরবানি করেন)।

◈ হজে আকবর সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা:

আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান মুবারক পূরী রাহ. তার বিখ্যাত সুনানে তিরমিযির ভাষ্যকার তুহফাতুল আহওয়াযি গ্রন্থে বলেন,
تنبيه: قد اشتهر بين العوام أن يوم عرفة إذا وافق يوم الجمعة كان الحج حجاً أكبر ولا أصل له.
“সতর্কতা: সাধারণ মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যে, আরাফার দিন যদি জুমার দিন হয় তাহলে তা হজে আকবর (বড় হজ)। এর কোনও ভিত্তি নাই।”

এ বিষয় আরও প্রচলিত আছ যে, শুক্রবারে আরাফার দিন হলে তা ৭ অথবা ৭০ অথবা ৭২ হজের সমপরিমাণ। এ সব কথাবার্তারও কোনও ভিত্তি নাই। যেমনটি বলেছে, সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড।
وسئل علماء اللجنة الدائمة :
يقول بعض الناس : إن يوم عرفة إذا صادف يوم جمعة كهذا العام يكون كمن أدى سبع حجات ، هل هناك دليل من السنة في ذلك ؟ .
فأجابوا :
ليس في ذلك دليل صحيح ، وقد زعم بعض الناس : أنها تعدل سبعين حجة ، أو اثنتين وسبعين حجة ، وليس بصحيحٍ أيضاً .
” فتاوى اللجنة الدائمة ” ( 11 / 210 ، 211 ) .
وانظر : ” فتح الباري ” ( 8 / 271 ) ، ” تحفة الأحوذي ” ( 4 / 27 ) .

এ কথাটি হানাফি (রদ্দুল মুহতার ২/৬২১) ও শাফেয়ী মাজহাবের কিছু কিতাবে উল্লেখ হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে এ বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা দলিল বহির্ভূত কথা।

◈ শুক্রবারে আরাফার দিবস হলে তা নি:সন্দেহে উত্তম:

শুক্রবারে আরাফার দিন হলে তা নি:সন্দেহে উত্তম। কারণ:

ক. তাতে একই দিনে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন এবং বছরের শ্রেষ্ঠ দিনের সমাবেশ ঘটে। আর এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, জুমার দিন (অধিক বিশুদ্ধ মতে) আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দুআ কবুলের অধিক আশা ব্যঞ্জক সময়। সুতরাং এ দিক থেকে তা উত্তম।

খ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হজের সময় আরাফার দিনটি ছিল শুক্রবার। এ দিক থেকে তাঁর হজের দিনের সাথে মিল পাওয়া যায়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।