সরকারী নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ মাছ ​ধরা ও ক্রয়-বিক্রয় করার বিধান​

প্রশ্ন: বর্তমানে চলছে ইলিশ মাছ ধরার সরকারী নিষেধাজ্ঞা। প্রশ্ন হল, এই নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ মাছ কিনে খাওয়া জায়েজ আছে কি?
উত্তর:
সরকার বছরের নির্দিষ্ট কিছু দিন যে সব নদ-নদীতে ইলিশের প্রজনন হয় সে সব নদ-নদীতে সর্ব প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে থাকে যেন মা ইলিশ স্বচ্ছন্দে ডিম পড়ার সুযোগ পায়।
ইলিশ গবেষকরা বলেছেন, “এই সময়ে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মা ইলিশ রক্ষা করা, যাতে তারা নিরাপদে নদীতে ডিম ছাড়তে পারে। এই ডিম রক্ষা করতে পারলে তা নিষিক্ত হয়ে জাটকার জন্ম হবে। সেই জাটকা রক্ষা করা গেলে দেশে বড় আকারের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।” (BBC/bengali)
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছর (২০২০) ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রে ইলিশসহ সব ধরণের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসময় দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় এবং মজুতও নিষিদ্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মিলিয়ে মোট ১৫ থেকে ১৭ দিন হচ্ছে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এসময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে ছুটে আসে। এই সময়কে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় ইলিশকে স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতেই সরকার দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। [banglatribune]
সুতরাং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সময়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বা চুরি করে ইলিশ ধরা বৈধ নয়।
ইসলাম মানুষকে নীতি-নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বোধ শেখায়। সুতরাং বৃহত্তর স্বার্থে জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রণীত সরকারী আইন-কানুন অনুসরণ করা প্রতিটি নাগরিকের জন্য আবশ্যক। অন্যথায় আইন লঙ্ঘন করার কারণে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হওয়ার পাশাপাশি সরকারী আইনে জেল-জরিমানার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
◉ আরও পড়ুন: প্রশ্ন: দেশের আইন মান্য করা কি ফরজ?
তবে তার অর্থ এই নয় যে, এ সময় ইলিশ খাওয়া যাবে না বা ক্রয় করা যাবে না। কেননা হয়ত ব্যবসায়ীগণ অনুমোদিত সময়ে ইলিশ ধরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করেছিল। এখন অতিরিক্ত লাভের আশায় সেগুলো নন মৌসুমে বিক্রয় করছে।
যাহোক, আপনি যদি নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন যে, মাছ বিক্রেতা চোরাইভাবে নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরেছে বা জেলেদের নিকট থেকে মাছ ক্রয় করেছে তাহলে তাদের কাছে তা ক্রয় করা বৈধ নয়। কারণ তা অন্যায় কাজে সহায়তা করার শামিল। আর ইসলামে অন্যায়, দুর্নীতি ও চোরাকারবারিতে সহায়তা করা হারাম। (সূরা মায়িদা: ২) তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু না জানা গেলে যে কোনও সময় বাজার থেকে ইলিশ ক্রয় করতে কোনও আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA.