সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে কুরআনের বিস্ময়কারিতা ও সত্যতা প্রমাণের প্রচেষ্টা কতটুকু গ্রহণযোগ্য বা এ ক্ষেত্রে মূলনীতি কি?

প্রশ্ন: কুরআনের এর মধ্যে বিভিন্ন শব্দের সংখ্যাতাত্ত্বিক যে মিলের কথা বলা হয়ে থাকে-যেমন জান্নাত যে কয়বার উল্লেখ আছে, জাহান্নাম সে কয়বার উল্লেখ আছে। ঠিক এভাবে পুরুষ-মহিলা, জন্ম-মৃত্যু, শীত-গ্রীষ্ম এভাবে শব্দের সংখ্যা মিলের যে অলৌকিকতা বহুল প্রচলিত আছে। দয়া করে, এ সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলবেন।

উত্তর:

এ কথায় কোন সন্দেহ নাই যে, মহাগ্রন্থ আল কুরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব ও জিন জাতির নিকট অবতরণকৃত একটি স্পষ্ট মুজিযা ও বিস্ময়কর গ্রন্থ। সাহিত্যের বিচারে কুরআনের ভাষা অত্যন্ত উঁচু অলঙ্কার পূর্ণ। কুরআন প্রদত্ত প্রতিটি তথ্যই চূড়ান্ত সত্য। এতে সামান্যতম ভুল নাই বা সন্দেহের অবকাশ নাই। মানব ও জিন জাতি সকলে মিলে যদি কুরআনের মত একটি সুরা তো দুরে থাক একটি আয়াতও রচনা করার চেষ্টা চালায় তবুও কিয়ামত পর্যন্ত তা সম্ভব নয়।

সুতরাং কুরআনের সত্যতা প্রমাণের জন্য কুরআনের এই সংখ্যাতত্ত্বের কোন প্রয়োজন নাই। সালাফ বা পূর্বসূরি আলেমদের পক্ষ থেকে এ ধরণের কোন প্রচেষ্টা আছে বলে জানা নাই। তাই এ সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে কৃত্রিম গবেষণা কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

তবে কোন কোন আলেম সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণকে জায়েয বলেছেন কিছু শর্ত সাপেক্ষে। সেগুলো হল:

শর্তাবলী:

১) সূরা, আয়াত, অক্ষর, হিযব, রুকু ইত্যাদি গণনার ক্ষেত্রে তা অবশ্যই কুরআনের ‘রসমে উসমানী’ এর সাথেে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
২) এ সংখ্যা নির্ধারণ ও নাম্বারিং পদ্ধতি অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সূক্ষ্ম নীতিমালা ও সূত্র অনুসারে হতে হবে।
অপ্রচলিত বা বৈজ্ঞানিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত নীতিমালা বা সূত্রের বিপরীত কোন নিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়।
৩. এই সংখ্যাতত্ত্ব ‘মুতাওয়াতির’ভাবে প্রচলিত কিরাআতের উপর ভিত্তি করে হতে হবে। ‘শায’ কিরআত গ্রহণযোগ্য নয়।
৪. এমন সু দৃঢ়ভাবে অলৌকিকত্ব প্রমাণ করতে হবে যা কোন মানুষ দ্বারা তৈরি করা কোনভাবেই সম্ভবপর নয়।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমানে পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল আর ইন্টারনেটে কুরআনের সত্যতা ও অলৌকিকত্ব প্রমাণের জন্য অনেক মানুষ সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে অতি ব্যস্ততায় ডুবে রয়েছে। তাদের অনেকেই এমন সব তত্ত্ব আবিষ্কার করছে যেগুলো আসলে কুরআনের অলৌকিকত্ব প্রমাণের পরিবর্তে কুরআনকে অমুসলিমদের নিকট হাস্যকর বস্তুতে পরিণত করছে। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
যেমন, কেউ কুরআনের আয়াত ও সংখ্যা দিয়ে আমেরিকার টুইনটাওয়ার ধ্বংসের তত্ত্ব আবিষ্কার করেছে, কেউ ইজরাইলের পতনের ইঙ্গিত খুঁজে পেয়েছে, কেউ কিয়ামত দিবস কখন সংঘটিত হবে তার সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখের সন্ধান পেয়ে গেছে!! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

মোটকথা হল, উপরোক্ত নীতিমালার যথাযথ অনুসরণে যদি কুরআনের সূরা, আয়াত, রুুক, পারা, হিযব, অক্ষর ইত্যাদি সংখ্যা থেকে কুরআনের বিস্ময়কারিতা প্রমাণ করা সম্ভব হয় তাহলে তাতে দোষ নেই। কিন্তু তা যেন অবশ্যই সঠিক ও নির্ভূল হয়। অন্যথায় কুরআনের বিস্ময়কারিতার পরিবর্তে কুরআনের প্রতি অমুসলিম ও সন্দেহ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সন্দেহও অবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিবে। তাই এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য। আল্লাহু আলাম।


উত্তর প্রদানে:
শাইখ আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, KSA.