রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে তাঁর পেছনের মুসল্লিদেরকে দেখতে পেতেন

প্রশ্ন: এই হাদিসটার ব্যাখ্যা কি?
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ هَلْ تَرَوْنَ قِبْلَتِي هَا هُنَا فَوَاللَّهِ مَا يَخْفَى عَلَىَّ رُكُوعُكُمْ وَلاَ سُجُودُكُمْ إِنِّي لأَرَاكُمْ وَرَاءَ ظَهْرِي ‏”‏ ‏
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা কি মনে করছ আমি শুধু আমার কিবলা মুখী হয়ে আছি? আল্লাহর শপথ, তোমাদের রুকু-সেজদা কিছুই আমার কাছে গোপন নয়। আমি আমার পিছন থেকেও তোমাদের দেখতে পাই।” [সহিহুল বুখারি ও মুসলিম]

উত্তর:
এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মোজেজা, যে তিনি সালাত রত অবস্থায় সামনে যেভাবে দেখতে পেতেন পেছনেও একইভাবে দেখতে পেতেন। মহান আল্লাহ একমাত্র তাকেই এই বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছিলেন। তাই আলেমগণ এটিকে একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বৈশিষ্ট্য ও মুজিযা (অলৌকিক বিষয়) হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদিস,

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জোহরের সালাত করালেন। এক ব্যক্তি সবচেয়ে পেছনের কাতারে খারাপ ভাবে সালাত আদায় করছিল।
সে সালাতের সালাম ফিরানোর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন,
يَا فُلَانُ أَلاَ تَتَّقِي اللّهَ أَلاَ تَرى كَيْفَ تُصَلِّي إِنَّكُمْ تَرَوْنَ أَنَّه يَخْفى عَلَيَّ شَيْءٌ مِمَّا تَصْنَعُونَ وَاللهِ إِنِّي لَارى مِنْ خَلْفِي كَمَا أَرى مِنْ بَيْنِ
“হে অমুক, তুমি কি আল্লাহকে ভয় করছ না? তুমি কি জান না তুমি কিভাবে সালাত আদায় করছ? তোমরা মনে কর, তোমরা যা কর তা আমি দেখি না। আল্লাহর কসম, নিশ্চয়ই আমি দেখি আমার পিছনের দিকে, যেভাবে আমি দেখি আমার সামনের দিকে”

[মুসনাদে আহমদ ৯৫০৪। যদিও এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক মুদাল্লিস রাবি রয়েছে যে ‘আন‘আনা عنعنة সূত্রে হাদিস বর্ণনা করে, কিন্তু হাদিসটির সহিহ বুখারি-মুসলিমে শাহিদ (সাক্ষ্য ও সমর্থনকারী) বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং তা সহিহ]

❑ এটি কি চর্মচক্ষু দ্বারা দেখা না কি অন্তর চক্ষু দ্বারা দেখা?

✪ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ বলেন,
وَجُمْهُور الْعُلَمَاء : هَذِهِ الرُّؤْيَة رُؤْيَة بِالْعَيْنِ حَقِيقَة ” انتهى من ” شرح مسلم للنووي ” (4/149) .
“জুমহুর তথা সংখ্যা গরিষ্ঠ আলেমের মতে, “এটি বাস্তবিক অর্থেই চর্ম চক্ষু দ্বারা দর্শন।” [শারহে মুসলিম লিন নওবি ৪/১৪৯]

✪ ইবনে হাজার আসকালানি, এই দেখার ব্যাপারে আলেমদের নানা মত উল্লেখ করার পর বলেন,
وَالصَّوَاب الْمُخْتَار : أَنَّهُ مَحْمُول عَلَى ظَاهِره , وَأَنَّ هَذَا الْإِبْصَار إِدْرَاك حَقِيقِيّ خَاصّ بِهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، اِنْخَرَقَتْ لَهُ فِيهِ الْعَادَة
“সঠিক এবং নির্বাচিত মত হল, হাদিসটিকে বাহ্যিক অর্থেই গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ এটি চর্মচক্ষু দ্বারা দেখা (অন্তর চক্ষু দ্বারা দেখা বা আড় চোখে ডানে-বামে সামান্য দেখা নয় )। এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা এ ক্ষেত্রে মানবিক বৈশিষ্ট্য বিরুদ্ধ বিষয় (সম্পূর্ণ অলৌকিক বিষয়)।” [সহিহ বুখারির ভাষ্য গ্রন্থ ফাতহুল বারি ১/৫১৪]

✪ শাইখ উসাইমিন রহঃ বলেন,
” أنه يراهم من وراء ظهره ، وهذا من خصائص النبي صلى الله عليه وسلم : أنه في هذه الحالة المعينة يرى الناس من وراء ظهره ، أما فيما سوى ذلك ، فإنه لا يرى من وراء ظهره شيئا ” انتهى من ” شرح رياض الصالحين ” (5/113)

“তিনি পেছন দিক থেকে সাহাবিদের দেখতে পেতেন। এটি তার অন্যতম একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই নির্দিষ্ট অবস্থায় (সালাত অবস্থায়) তিনি পেছনের লোকদেরকেও দেখতে পেতেন কিন্তু অন্য সময় পেছনের কিছুই দেখতেন না।” [শরহু রিয়াযিস সালেহিন ৫/১১৩]

এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়তের একটি প্রমাণ।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনে ঘটে যাওয়া এর চেয়ে বড় বড় মোজেজা বা অলৌকিক বিষয় রয়েছে যেগুলো আমরা বিশ্বাস করি। যেমন:
– তিনি এক রাতের কিয়দংশে মক্কা থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মাকদিস গমন করেছেন তারপর মিরাজের মাধ্যমে সেখান থেকে এই ভূমণ্ডল অতিক্রম করে সাত আসমান পাড়ি দিয়ে বিশ্বস্রষ্টা মহিমান্বিত আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেছেন আবার সেখান থেকে এই পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। বিস্ময়কর এ ঘটনাকে আমরা সামান্যতম অবিশ্বাস করি না।

– সবচেয়ে বড় বিস্ময়কর ও অলৌকিক ঘটনা হল, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সাত আসমানের উপর থেকে তাঁর কাছে সম্মানিত ফেরেশতা জিবরাইল আমিন ওহী নিয়ে অবতরণ করেন। তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর ব্যাপী রাত-দিন, সকাল-সন্ধ্যা বিভিন্ন সময় তাঁর কাছে বিভিন্ন ঘটনা ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কুরআনের সূরা ও বিভিন্ন আয়াত নিয়ে আগমন করতেন। আমরা এতে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করি।

মোটকথা, বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতিটি হাদিসকে আমরা চূড়ান্ত সত্য ও শিরোধার্য মনে করি-যাতে সামান্য সন্দেহ পোষণ করাও ইমান পরিপন্থী।

❑ এ হাদিসের অন্যতম শিক্ষা হল,

সালাতের মধ্যে ভয়-ভীতি, বিনয়-নম্রতা, একাগ্রতা, ধীর স্থিরতা ইত্যাদি হল সালাতের প্রাণশক্তি। এগুলো ছাড়া সালাত হল, অন্ত:সারশূন্য উঠবস ও নড়াচড়ার নাম। একান্ত বিনম্র হৃদয়ের কথাই মহান আল্লাহ শুনেন এবং তাতে সাড়া দেন। এই প্রাণ স্পন্দিত সালাতই মুমিন জীবনে চূড়ান্ত সাফল্যের সোপান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত হাদিসের মধ্যে সালাতের এই বিষয়টি সাহাবিদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◍❖ ◍▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
জুবাইল, সৌদি আরব।