যাকাত সম্পর্কীত কয়েকটি প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: বেনামাযী-ফাসিককে যাকাত দেয়া জায়েয আছে কি?

উত্তর:
যাকাতের আটটি খাতের একটি হল, গরীব -অসহায় মানুষ।( দেখুন সূরা তওবা: ৬০ নং আয়াত)

সুতরাং যে কোন গরীব মানুষকে যাকাত দেয়া জায়েয। দ্বীনদার গরীব মানুষকে যাকাত দেয়া যেমন জায়েয আছে তেমনি ফাসেক বা পাপাচারে লিপ্ত বা আধা নামাযী ব্যক্তিকেও যাকাত দেয়া জায়েয আছে যদি তাকে এর মাধ্যমে পাপাচার থেকে ফিরিয়ে আনার আশা করা যায়। অনুরূপভাবে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন কাফিরকেও যাকাত দেয়া জায়েয আছে।
তবে নামাযী, দ্বীনদার, গরীব মানুষকে যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
আর এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া উচিৎ নয়, যার ব্যাপারে আশংকা থাকে যে, সে অর্থ হাতে পেলে গুনাহর কাজে ব্যায় করবে। আল্লাহ তাওফিকদান কারী।
আল্লাহু আলাম।


❒ কাফেরদেরকে যাকাত/ওশর দেয়া বৈধ

প্রশ্ন: আমরা ধানের যাকাত (ওশর) বের করি। সেখান থেকে সারা বছর ভিখারীদেরকে ভিক্ষা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে মুসলিম-অমুসলিম (হিন্দু, সাওতাল ইত্যাদি) সকল শ্রেণীর মানুষ থাকে। এখন প্রশ্ন হল, এই যাকাতের ধান কি কাফেরদেরকে ভিক্ষা হিসেবে দেওয়া জায়েয আছে?

উত্তর: অমুসলিমদের সামনে ইসলামের উদারতা, সৌন্দর্য এবং মহানুভবতা প্রকাশ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের অন্তরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার অন্যতম উপায়। সুতরাং ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে অমুসলিমদেরকে যাকাত/ওশর দেয়া জায়েয রয়েছে। হতে পারে, এটি তার হেদায়ের ওসীলা হয়ে যাবে।
আল্লাহ তাআলা যাকাত বণ্টনের আটি খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে একটি হল, কাফেরদের অন্তরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করা। (সূরা তওবা: ৬০)

তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হল, সে ব্যক্তি যেন মুহারিব তথা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত না হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّـهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
“দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা মুমতাহিনাহ: ৮)

মোটকথা,ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কাফিরদেরকে ওশর/যাকাত প্রদান করা জায়েয ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।


ব্যবসায় ইনভেস্টকৃত অর্থ বা প্রদত্ব ঋণের টাকার যাকাত কে দিবে?

❒ প্রশ্ন : কেউ যদি ব্যবসার জন্য কাউকে এই চুক্তিতে টাকা দেয় যে, সে এ টাকা ব্যবসায় ইনভেস্ট করবে। আর যখন যেমন লাভ হয় সেটা নিবে। কিন্ত মুল টাকাটা জমা থাকবে। এখন এ মূল টাকার উপর কি যাকাত দিতে হবে?

উত্তর :- কারো টাকা যদি অন্যের নিকট জমা থাকে (সেটা ঋণ হোক অথবা ব্যবসার জন্য হোক) তাহলে মূল মালিক উক্ত টাকার যাকাত আদায় করবে।
তবে যদি উক্ত টাকা ফেরত না পাওয়ার আশংকা করে তাহলে উক্ত টাকার যাকাত আদায় করা আবশ্যক নয়। অবশ্য যদি পরবর্তীতে তা ফেরত পায় তাহলে অতীতে যত বছরের যাকাত আদায় করা হয় নি সবগুলোর একসাথে যাকাত বের করতে হবে। আল্লাহু আলাম।

❒ প্রশ্ন: যাকাতের অর্থ মাদরাসায় দিলে বেশি সওয়াব হবে না কি অসহায় বিধবা মহিলাকে দিলে বেশি সওয়াব হবে?

উত্তর:
যাকাতের হকদার হিসেবে আল্লাহ তাআলা গরীব-অসহায় মানুষের কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তাদের কথাই আমাদের সবার আগে ভাবা উচিৎ। তবে পরিস্থিতির আলোকে আগে-পরে করা যায়। যদি দেখা যায়, কোন বিধবা মহিলা আর্থিত অটনে থাকার কারণে খুব কষ্টে জীবন-যাবন করছে এবং তাঁর খোঁজ-খবর নেয়ার মত কেউ নাই অথচ মাদরাসার গরীব শিক্ষার্থীদের চলার মত ব্যবস্থা আছে তাহলে বিধবা মহিলাকেই অগ্রাধিকার দেয়া কতর্ব্য। এ ক্ষেত্রে বেশি সওয়াব হবে।
আর যদি দেখা যায়, বিধবা মহিলার জীবন চলার মত পর্যাপ্ত অর্থকড়ি বিদ্যমান আছে কিন্তু কোন এতিমখানা বা মাদরাসার গরীব ছেলে/মেয়েরা আর্থিক সংকটে পড়ে তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছে তাহলে সে ক্ষেত্রে মাদরাসার গরিব ছেলে/মেয়েদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
মোটকথা যার প্রয়োজন বেশি তাকে আগে সাহায্য করা প্রয়োজন এবং এটাই উত্তম।
আল্লাহু আলাম।

❒ গরীব-অসহায় মানুষের মেয়ে বিয়ে দেয়া, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি খাতে কি যাকাতের টাকা দেয়া জায়েয আছে?
গরীব মানুষকে কি মাসিক কিস্তিতে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে?

প্রশ্ন: আমরা কি কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে তার মেয়ের বিয়ের ব্যাবস্থা করার জন্য জাকাতের টাকা দিতে পারি? বাড়ির গরীব কর্মচারী যাদের খাওয়াব ব্যবস্থা আছে কিন্তু থাকার ঘর নাই তাদেরকে কি বাড়ি বানানর জন্য যাকাতের টাকা দিতে পারি? কারও চিকিৎসার খরচ বা কাউকে কর্মঠ করার জন্য রিক্সা বা ভ্যানগাড়ি কিনে দিতে পারি?
কোনো গরীব আত্মীয়কে কি জাকাতের টাকা থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা দেয়া যাবে? জাকাতটা সঠিকভাবে আদায় করা নিয়ে শাইখ দু:চিন্তার মধ্য থাকি। দয়া করে একটু সঠিক টা জানাবেন। জাযাকাল্লাহ খাইরান।

উত্তর:
যাকাত প্রদানের ৮টি খাতের মধ্যে অন্যতম হল, গরীব, অসহায়-নি:স্ব মানুষ। (সূরা তাওবা: ৬০ নং আয়াত)
অত:এব কোন অভাবী মানুষ যদি অর্থসংকটে তার কন্যার বিয়ে দিতে না পারে তাহলে তাকে এ কাজে সাহায্যের জন্য যাকাত দেয়া জায়েয আছে।
অনুরূপভাবে অসহায়-গরীব মানুষের বাসস্থান তৈরি, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি প্রয়োজনে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েয রয়েছে।
মাসিক কিস্তিতে যাকাতের টাকা দান করা:
প্রতি মাসে গরীব মানুষকে কিস্তুিতে যাকাত দেয়ার ব্যাপারে আলেমদের মত হল, মাসিক কিস্তিতে অগ্রীম যাকাত দেয়া জায়েয আছে। কিন্তু যাকাত ফরজ হওয়ার পর এমনটি করা জায়েয হবে না।

উদাহরণ: আগামী এপ্রিল ২০১৯ এ কারো যাকাত ফরজ হবে। এখন সে যদি কোন গরিব মানুষকে চলতি এপ্রিল ২০১৮ থেকে প্রতি মাসে অল্প অল্প করে উক্ত সম্পদের যাকাত প্রদান করতে থাকে যেন বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই যাকাত আদায় সম্পন্ন হয় তাহলে এতে এটা জায়েয হবে।
পক্ষান্তরে যাকাত ফরজ হওয়ার পর তা আদায়ে বিলম্ব করা জায়েয হবে না রবং তা অনতি বিলম্বে হকদারদের নিকট পৌঁছাতে হবে। কেননা, যাকাত আদায় করার পূর্বেই সে মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারে অথবা অর্থ-সম্পদ ক্ষয়-ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। আর তখন যাকাতের ফরয দায়িত্ব তার কাঁধে অবশিষ্ট থেকে গেল। তাই যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি যাকাত বের করে হকদারদের নিকট পৌঁছিয়ে দিতে হবে; ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করা যাবে না।
তবে যাকাত ফরজ হওয়ার পর যদি তা বের করে অন্য কাউকে বণ্টনের দায়িত্ব প্রদান করা হয় আর সে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি মাসিক কিস্তিতে কোন গরীবকে প্রদান করে তাহলে সে ক্ষেত্রে জায়েয হবে। কেননা এ ক্ষেত্রে সে ব্যক্তি মারা গেলে বা সম্পদ নষ্ট হয়ে গেলেও যাকাতের টাকা নষ্ট হবে না বা তা বণ্টনে সমস্যা হবে না বলে আশা করা যায়।
আল্লাহু আলাম।
—————
উত্তর প্রদানে:
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার.ksa