মহান আল্লাহকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে তুই, তুমি ও আপনি শব্দের ব্যবহার

প্রশ্ন: আমি আল্লাহ থেকে কোন কিছু চাওয়ার সময় কী রকম ভাষায় কথা বলবো? যেমন: হে আল্লাহ, তুই আমাকে এটা দে.. ইত্যাদি। অর্থাৎ আল্লাহকে ‘তুই’ করে কথা বলা যাবে কি না?
উত্তর:
বিশ্বচরাচরের একচ্ছত্র অধিপতি, মহান রাজাধিরাজ ও মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হলেন, সর্বোচ্চ সম্মান, মর্যাদা ও আনুগত্য পাওয়ার হকদার। আল্লাহ বলেন,
الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۚ أَيَبْتَغُونَ عِندَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا
”যারা মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফেরদেরকে বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে অথচ যাবতীয় সম্মান শুধু আল্লাহরই জন্য।”
[সূরা ইউনুস: ৬৫]
তিনি মহা মনিব আর আমরা তার অতিক্ষুদ্র গোলাম। তার সমকক্ষ ও সমতুল্য আর কেউ নাই। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, তাঁর শানে এমন শব্দ ব্যবহার করা বা তাকে এমন শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা যা দ্বারা সম্মান, ভালবাসা ও আন্তরিকতা প্রকাশ পায়। এ ক্ষেত্রে এমন শব্দ ব্যবহার করা জায়েজ নাই যা তার প্রতি অসম্মান ও বেয়াদবি বুঝায়।

❑ অভিধানের আলোকে ‘তুই’, ‘তুমি’ এবং ‘আপনি’এর অর্থ:

আরবি ভাষায় أَنْتَ (আনতা) শব্দটি দ্বারা তুই, তুমি, আপনি সব অর্থই প্রকাশ করে। অনুরূপভাবে ইংরেজিতে You শব্দ দ্বারাও। সে কারণে এ সব ভাষায় তুই, তুমি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলায় সম্বোধিত ব্যক্তির অবস্থার আলোকে কখনো তুই, কখনো তুমি আর কখনো আপনি ব্যবহৃত হয়। (যা বাংলাভাষার আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য)।

বাংলা অভিধানে বলা হয়েছেে:

◍ তুই [ tui ] সর্ব. তুচ্ছার্থে বা অনাদরে তুমি -র রূপভেদ; নিম্নপদস্থ, কনিষ্ঠ বা অত্যন্ত অন্তরঙ্গ ব্যক্তির প্রতি প্রযোজ্য। [educaling]
◍ তুমি [ tumi ] /সর্বনাম পদ/ সম্বোধিত দ্বিতীয় ব্যক্তি বা মধ্যম পুরুষ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, স্নেহের পাত্র ইত্যাদির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত.। [english-bangla]
অন্য একটি অভিধানে বলা হয়েছে, তুমি এর বাংলা অর্থ: সম্বোধিত ব্যক্তিসূচক সর্বনাম যা সাধারণত স্নেহপাত্র, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বন্ধু পিতা-মাতা ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি উচ্চারিত হয়ে থাকে।
◍ আপনি [ āpani ] সর্ব. 1 তুমি-র সম্ভ্রমসূচক রূপ (আপনি আসুন) [educaling]

এখান থেকে বুঝা গেল, বাংলা ভাষায় ‘তুই’ শব্দ দ্বারা দু ধরণের অর্থ প্রকাশ করে। যথা:
ক. তাচ্ছিল্য ও অনাদর অর্থে।
খ. একান্ত অন্তরঙ্গতা ও ঘনিষ্ঠতা বুঝাতে। যেমন: আমাদের সমাজে সাধারণত: মা কে আন্তরিকতা, ভালবাসা ও একান্ত আপনজন বুঝাতে ‘তুমি’ বা ‘তুই’ বলে সম্বোধন করা হয়। উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় মাকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করার প্রচলন আছে। মা’র ক্ষেত্রে ‘আপনি’ শব্দের ব্যবহার খুব কম। এতে তাঁর প্রতি বেয়াদবি বা অসম্মান বুঝায় না। সামাজিকভাবে এভাবে সম্বোধন করা সর্বজন স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য রীতি।

সুতরাং কেউ যদি একান্ত অন্তরঙ্গতা, ঘনিষ্ঠতা ও ভালবাসা প্রকাশার্থে মহান আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে ‘তুই’ বা ‘তুমি’ শব্দ ব্যবহার করে তাহলে তাতে কোন আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ। তবে তা একান্ত নিভৃতে ও নির্জনে হওয়া উচিৎ। কিন্তু যদি লোকজনের সামনে এভাবে বললে আশঙ্কা থাকে যে, শ্রোতারা ভুল বুঝবে বা খারাপ ভাবে নিবে (যেমন: ওয়াজ মাহফিল বা সর্বশ্রেণীর সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে) তাহলে এমন শব্দ পরিহার করা উচিৎ। বরং সে ক্ষেত্রে ‘তুমি’ অথবা ‘আপনি’ ব্যবহার করা ভালো।

আর কেউ যদি আল্লাহর প্রতি বেদয়াবি, অসম্মান ও তাচ্ছিল্যের উদ্দেশ্যে তাকে ‘তুই’ শব্দ দ্বারা সম্বোধন করে তাহলে তা বড় কুফরি বলে গণ্য হবে-যা তাকে ইসলাম থেকে বের করে দিবে।
মোটকথা, বক্তার নিয়ত অনুযায়ী মহান রব্বুল আলামীনকে আপনি/তুমি/তুই ইত্যাদি যে কোনও শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা জায়েজ হলেও সব ধরণের সংশয় বা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকার জন্য ‘তুমি’ বা ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করা অধিক উত্তম। এটিই রাব্বুল আলামিনের শানে অধিক আদব ও সম্মানের বহিঃপ্রকাশ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।