মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা সমান এটা কি হাদিসের কথা?

উত্তর:
“মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গার সমান কথা” এটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস নয় বরং লোকসমাজে প্রচলিত একটি উক্তি মাত্র। আমাদের সমাজে এ কথাটি মুখেমুখে প্রচলিত রয়েছে এবং শিল্পীরা গানের মধ্যে এ জাতীয় কথা বলে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি হাদিসের বক্তব্য নয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়া, কারো মনে আঘাত করা, কারো সাথে প্রতারণা করা, অঙ্গিকার ভঙ্গ করা, গালি দেয়া, মিথ্যাচার করা ইত্যাদি অত্যন্ত জঘন্য গুনাহের কাজ- তাতে কোন সন্দেহ নাই। তবে উক্ত কথাটিকে হাদিস মনে করা বৈধ নয়। কেননা তা কোনো হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায় না।

🌀 মুমিনদেরকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়া মারাত্মাক অন্যায় ও কবিরা গুনাহ (বড় পাপ)। এ বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর কতিপয় বক্তব্য উপস্থাপন করা হল:

❐ আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا
“যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।” (সূরা আহযাব: ৮৫)

❐ আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে উচ্চ স্বরে বলেন:

يَا مَعْشَرَ مَنْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ، وَلَمْ يُفْضِ الْإِيْمَانُ إِلَى قَلْبِهِ! لَا تُؤْذُوْا الْـمُسْلِمِيْنَ، وَلَا تُعَيِّرُوْهُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ ؛ فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيْهِ الْـمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِيْ جَوْفِ رَحْلِهِ

‘‘হে লোক সকল! তোমরা যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছো; অথচ ঈমান তোমাদের অন্তরে ঢুকেনি,
– তোমরা মুসলিমদেরকে কষ্ট দিও না।
– তাদেরকে লজ্জা দিও না।
– তাদের দোষ অনুসন্ধান করো না।
কারণ, যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের দোষ অনুসন্ধান করলো আল্লাহ্ তা‘আলাও তার দোষ অনুসন্ধান করবেন। আর যার দোষ আল্লাহ্ তা‘আলা অনুসন্ধান করবেন তাকে অবশ্যই তিনি লাঞ্ছিত করে ছাড়বেন যদিও সে নিজ ঘরের অভ্যন্তরেই অবস্থান করুক না কেন’’।
(তিরমিযী ২০৩২, মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ-হাদিসটি সহিহ, দ্রষ্টব্য সহিহ আবু দাউদ- আলবানী, হা/৪৮৮০)

❐ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেনঃ
لاَ يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُونَ وَاحِدٍ فَإِنَّ ذَلِكَ يُؤْذِي الْمُؤْمِنَ وَاللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يَكْرَهُ أَذَى الْمُؤْمِنِ
“একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানাকানি করবে না। কেননা ইহা মুমিনের কষ্ট দেয়। আর আল্লাহ তা’আলা তো মুমিনকে কষ্ট দেয়া অপছন্দ করেন”।
(সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত],অধ্যায়ঃ ৪১/ শিষ্টাচার, পরিচ্ছদঃ ৫৯. তৃতীয় ব্যাক্তিকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানাকানি করবে না, হা/28250)

❐ এছাড়াও হাদিসে এসেছে, আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে:
أَتَدْرُونَ ما المُفْلِسُ؟ قالوا: المُفْلِسُ فِينا مَن لا دِرْهَمَ له ولا مَتاعَ، فقالَ: إنَّ المُفْلِسَ مِن أُمَّتي يَأْتي يَومَ القِيامَةِ بصَلاةٍ، وصِيامٍ، وزَكاةٍ، ويَأْتي قدْ شَتَمَ هذا، وقَذَفَ هذا، وأَكَلَ مالَ هذا، وسَفَكَ دَمَ هذا، وضَرَبَ هذا، فيُعْطَى هذا مِن حَسَناتِهِ، وهذا مِن حَسَناتِهِ، فإنْ فَنِيَتْ حَسَناتُهُ قَبْلَ أنْ يُقْضَى ما عليه أُخِذَ مِن خَطاياهُمْ فَطُرِحَتْ عليه، ثُمَّ طُرِحَ في النَّارِ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা জিজ্ঞেস করলেন:
“তোমরা কি জান নি:স্ব কে?”

সাহাবায়ে কেরাম বললেন:
“আমাদের মধ্যে নি:স্ব তো সে যার কোন দিনার-দিরহাম বা অর্থ-সম্পদ নেই।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:

“আমার উম্মতের মধ্যে সত্যিকার নি:স্ব হলো সেই ব্যক্তি যে কেয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও যাকাতসহ অনেক ভাল কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে অথচ দুনিয়াতে সে কাউকে গালি দিয়েছিল, কারো প্রতি অপবাদ দিয়েছিল, করো সম্পদ আত্নসাত করেছিল, কারো রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মারধোর করেছিল। ফলে তার থেকে নেক আমলগুলো নিয়ে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে।
এভাবে যখন তার নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন তাদের পাপগুলো তাকে দেয়া হবে। ফলে সে ( নিঃস্ব অবস্থায়) জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।” (সহিহ মুসলিম)

আল্লাহু আলাম-আল্লা সবচেয়ে বেশি জানেন।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী।।