মক্কার সাথে মুকাররামা এবং মদিনার সাথে মুনাওয়ারা বিশেষণ ব্যবহারের বিধান

মক্বা শব্দের সাথে ‘মুকাররমা” (সম্মানিত) আর মদিনা শব্দের সাথে ‘মুনাওয়ারা‌’ (আলোকিত) শব্দের ব্যবহার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবিদের যুগে পরিচিত ছিল না। পরবর্তীতে মানুষ মুসলিম জাতির সবচেয়ে সম্মান ও আবেগের এই দুই জায়গার প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে এই শব্দগুলো যুক্ত করেছে। ফলে মক্কা মুকাররামা বা মক্কাতুল মুকাররমা (مكة المكرمة) এবং মদিনা মুনাওয়ারা (المدينة المنورة) নামগুলো সর্বত্র ব্যাপক ভাবে প্রচলিত হয়ে গেছে। কিন্তু যুগ পরম্পরায় আলিমগণ কখনো এই শব্দগুলোর ব্যাপারে শক্ত আপত্তি করেননি বা এগুলোকে বিদআত হিসাবে আখ্যায়িত করেননি।

অবশ্য কোন কোন আলেম বলেছেন, ‘মদিনা মুনাওয়ারা’-এর পরিবর্তে ‘মদিনাতুন‌ নবী’ (مدينة النبي صلى الله عليه وسلم নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শহর), বা (المدينة النبوية) মদিনাহ নববিয়াহ ব্যবহার করা উত্তম। কারণ মদিনা মুনোয়ারা (আলোকিত শহর)-এর মধ্যে ভ্রান্ত অর্থ নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তা হল, বিদআতিরা বিশ্বাস করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের সৃষ্টি এবং তার কবর থেকে নূর বা আলো বিচ্ছূরিত হয়ে এই শহরকে আলোকিত করেছে। তবে আমরা বলব, আল্লাহর নবীর কবরের নূর নয় বরং মক্কা এবং মদিনা উভয়টি আল্লাহর নবীর উপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ইলমে ওহি তথা ঐশী জ্ঞানের আলোয় আলোকিত শহর। আসমানি জ্ঞানের আলোর বিচ্ছুরণে এই শহরদ্বয় থেকে অজ্ঞতার অমানিশা বিদূরিত হওয়ার পাশাপাশি সেই আলো আলোকিত করেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন সমগ্র পৃথিবীকে।

🔸আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ.-কে প্রশ্ন করা হয় যে, মক্কার বিশেষণ হিসেবে ‘মুকাররামা’ (সম্মানিত) এবং মদিনার বিশেষণ হিসেবে ‘মুনাওয়ারা’ (আলোকিত) শব্দ ব্যবহার কি বিদআতের অন্তর্ভূক্ত? ‘মক্কা মুকাররামা মুহাররামা’ এবং ‘মদিনা নববিয়া’ বলা কি অধিক উত্তম? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

উত্তরে তিনি বলেন,

لا أعلم أن مكة توصف بـ مكة المكرمة في كلام السلف، وإنما يقال: مكة فقط، وكذلك المدينة لا توصف بأنها منورة في كلام السلف وإنما يسمونها المدينة، لكن حدث أخيراً بأن يقال في مكة: المكرمة، ويقال في المدينة: المنورة، ومكة سماها الله سبحانه وتعالى بلداً آمناً، وسماها بلداً محرماً، كما قال سبحانه {إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ رَبَّ هَذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِي حَرَّمَهَا} [النمل:٩١]، وكذلك مباركة، وأما المدينة فهي لا شك المدينة النبوية وأنها طيبة كما سماها النبي صلى الله عليه وسلم بـ طيبة، لكن الناس اتخذوها عادة أن يقولوا: المدينة المنورة ومكة المكرمة، وليتهم يقولون: مكة فقط والمدينة فقط؛ لأننا لسنا أشد تعظيماً لهذين البلدين ممن سلفنا
“সালাফদের কথাবার্তায় মক্কা ‘মক্কাতুল মুকাররামা’ নামে পরিচিত ছিল বলে জানা নেই। অনুরূপভাবে সালাফদের কথাবার্তায় মদিনাকে ‘মদিনাতুল মুনাওয়ারা’ নামেও বিশেষিত করা হতো না। তারা শুধু ‘মদিনা’ বলতেন। কিন্তু পরবর্তীতে ‘মক্কা মুকাররামা’ এবং ‘মদিনা মুনাওয়ারা’ বলার বিষয়টি ঘটেছে।
আল্লাহ তাআলা মক্কাকে আল বালাদুল আমিন বা ‘নিরাপদ শহর’ বলে নামকরণ করেছেন। ‘আল বালাদুল হারাম বা ‘সম্মানিত শহর’ বলে নামকরণ করেছেন। যেমন: আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ رَبَّ هَٰذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِي حَرَّمَهَا
“আমি তো কেবল এই নগরীর প্রভুর এবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি, যিনি একে হারাম (সম্মানিত) করেছেন।” [সূরা নামল: ৯১] অনুরূপভাবে তা মুবারাকাহ বা বরকতমণ্ডিত।
আর নিঃসন্দেহে মদিনা হল, ‘মদিনাতুন নববিয়াহ’, এটি ‘তাইয়েবাহ’ (পবিত্র)। যেমন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটিকে ‘তাইয়েবা’ (পবিত্র) বলে নামকরণ করেছেন। কিন্তু মানুষ ‘মদিনা মুনাওয়ারা’ ও‌ ‘মক্কা মুকাররামা’ বলাকে অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছে। মানুষ যদি শুধু মক্কা বলতো, শুধু মদিনা বলতো তাহলে কতই না ভালো হতো! কারণ আমরা তো এই দুই শহরকে আমাদের সালাফদের থেকে বেশি সম্মান করি না।” [মাজমু ফাতাওয়া-শাইখ উসাইমিন, ২২/২৪০-প্রশ্ন নাম্বার ৭৫৭]

তিনি অন্যত্র বলেছেন,
لا أعرف أصلاً من الشرع لوصف مكة بالمكرمة، ووصف المدينة بالمنورة، وكلتاهما في الحقيقة مكرمتان معظمتان محرمتان، وكلتاهما منورتان بالوحي مكة بابتدائه، والمدينة بانتهائه، وتلك مكان ولادة النبي – صلى الله عليه وسلم – وابتداء دعوته، وهذه مكان وفاته وكمال رسالته، والله لطيف خبير
“শরিয়তে মক্কাকে ‘মুকাররামা’ বিশেষণ বা মদিনাকে ‘মুনাওয়ারা’ বিশেষণে বিশেষিত কোনো ভিত্তি আছে বলে জানি না। প্রকৃতপক্ষে এ দুটি শহরই সম্মানিত, মর্যাদাবান এবং হারাম।
দুটি শহরই আল্লাহর ওহির মাধ্যমে আলোকিত। মক্কা আলোকিত ওহির সূচনার মাধ্যমে এবং মদিনা আলোকিত ওহির সমাপ্তির মাধ্যমে। মক্কা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মভূমি এবং তার দাওয়াতের সুতিকা গৃহ আর মদিনা তাঁর অন্তিম শয্যা এবং রিসালাতের পূর্ণতার কেন্দ্র ভূমি।” [মাজমু ফাতাওয়া-শাইখ উসাইমিন, ২২/২৪০-প্রশ্ন নাম্বার ৭৫৮]

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।