ভিসা ব্যবসা হারাম

ভিসা ব্যবসা হারাম
– বিশেষজ্ঞ আলেমগণ
অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
———————–

সউদী আরবের বড় আলেমগণ ভিসা ব্যবসাকে হারাম বলে ফতোয়া প্রদান করেছেন। কারণ এতে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া এবং সরকারী আইন লঙ্ঘন করা হয়।
আসুন, আমরা এ প্রসঙ্গে সউদী আরবের বড় আলেমদের কয়েকটি ফতোয়া দেখি:

❒ ১) সউদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রহঃ

প্রশ্ন: কতিপয় মানুষ বিদেশী শ্রমিক আনার জন্য ভিসা বের করে। কিন্তু উদ্দেশ্য থাকে, ভিসাগুলো অন্যদের কাছে বিক্রয় করবে। পরে যাদের কাছে সেগুলো বিক্রয় করে তারা যে কাজের উদ্দেশ্যে ভিসা বের হয়েছিল সে কাজ বাদ দিয়ে শ্রমিকদেরকে অন্যত্র অন্য কাজ করার সুযোগ দেয়।
এর ফলে তারা ঐ সকল শ্রমিকদের সাথে চুক্তি মাফিক প্রতিমাসে কিছু অর্থ গ্রহণ করে। অনুরূপভাবে ইকামা (রেসিডেন্ট পারমিট) নবায়ন করার সময়ও টাকা নেয়। যারা এ কাজ করে তাদের জন্য তা হালাল না কি হারাম?

উত্তর:
উত্তর: বিসমিল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ-সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এ কাজটি নাজায়েজ। বরং এটি ধোঁকাবাজি, প্রতারণা এবং মিথ্যাচার। এটা জায়েয হতে পারে না।
তারা নিজেদের কাজ ছাড়া শ্রমিক নিতে পারবে না। বিল্ডিং নির্মাণ, ক্ষেত-খামার বা অন্য কাজের জন্য শ্রমিক আনবে। কিন্তু মিথ্যা বলে ভিসা উঠিয়ে সেগুলো বিক্রয় করবে-এটা জায়েয হবে না। এটা রাষ্ট্রের সাথে মিথ্যাচার। হতে পারে এ সকল শ্রমিক আনার মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য ক্ষতির রাস্তা উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
সুতরাং করণীয় হল, সরকারের আইন মেনে যতজন শ্রমিক প্রয়োজন কেবল ততটি ভিসার দরখাস্ত করবে। কমও না বেশিও না এবং কোনভাবেই মিথ্যার আশ্রয় নিবে না।” (ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১০/০৬/১৪২৩ হি:)

❒ ২) আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রহঃ

প্রশ্ন: কিছু মানুষ তিন হাজার রিয়াল দিয়ে ভিসা উঠানোর পর সেগুলো ৮/১০ হাজার রিয়ালের বিনিময়ে অন্য জনের কাছে বিক্রয় করে। পরে ক্রয়কারী সেটা দ্বারা তার ভাইকে আনে।এর বিধান কি?

উত্তর:
ভিসা হল একটি পারমিট। কোন ব্যক্তি মন্ত্রণালয় থেকে একজন শ্রমিক আনার পারমিট উঠালো। তারপর অন্যের নিকট তা বিক্রয় করে দিল। এটা হারাম-নাজায়েজ। আমরা তাকে বলব, তোমার যদি শ্রমিক প্রয়োজন হয় তাহলে ভিসা তো তোমার হাতে। আর যদি দরকার না থাকে তাহলে তুমি যেখান থেকে ভিসা উঠিয়েছিলে সেখানে ফেরত দাও।
তোমার জন্য তা বিক্রয় করা হালাল নয়।
আমরা একাজ করলে তো মানুষ ভিসা কেনাবেচা করে পয়সা কামানো শুরু করবে। অথচ এখানে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। সে শ্রমিক আনবে বলে ভিসা উঠানোর পর সেটা বিক্রয় করলে সে মিথ্যুকে পরিণত হল।
তাকে ভিসা দেয়া হয়েছে এই শর্তে যে, সে নিজে শ্রমিক আনবে। ভিসা উঠানোর পর যদি দেখে যে, দরকার নাই তাহলে সে তা ফেরত দিবে। কারণ হয়ত অন্য লোকেরা এই ভিসার জন্য অপেক্ষা করছে। (লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৫/১৭০)

❒ ৩) সউদী ফতোয়া বোর্ড:

প্রশ্ন: আমি ৩৩ বছরের একজন যুবক। আমার আর্থিক অবস্থা দুর্বল। একদিন আমার নিকট এক প্রবাসী আসল। সে পাকিস্তানী নাগরিক (মুসলিম)। সে অনুরোধ করল যে,আমি যেন তাকে কয়েকটি ভিসা বের করে দেই। সে পাকিস্তান থেকে তার কতিপয় আত্মীয়কে আনবে আর প্রতিটি ভিসার বিনিময়ে সে আমাকে ৭,০০০/ রিয়াল করে দিবে। আর্থিক অভাবের কারণে আমি এ কাজটি করেছি। আমি তার নিকট ৪টি ভিসার মূল্য নিয়েছি।
যাদের জন্য ভিসা নেয়া হয়েছিলো তারা ইতোমধ্যে সউদী আরব এসেছে এবং নিজেদের মত করো কাজ করছে।
আমার প্রশ্ন হল, আমি ভিসার বিনিময়ে যে অর্থ গ্রহণ করেছি তা কি হালাল না কি হারাম?
উল্লেখ্য যে, উল্লেখিত ব্যক্তিগণ আমাকে যে পরিমাণ অর্থ দিয়েছিলো তার কয়েকগুণ উপার্জন করেছে এবং তারা সউদী আরবে থেকে অর্থিক আয়-উপার্জন করে তাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট।

উত্তর:

এই অর্থ হারাম। কারণ তা কাফালা (স্পন্সরশীপ) এর বিনিময় মূল্য গ্রহণের নামান্তর। অথচ স্পন্সরশীপ হল, একটি দাতব্য চুক্তি। আরও কারণ হল, এখানে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে- যেহেতু এটি জনস্বার্থে প্রণীত সরকারী আইনের লঙ্ঘন। আল্লাহু আলাম। (সউদী ফতোয়া বোর্ড এর ফতোয়া ১৪/১৮৯)
উল্লেখ্য যে, ভিসা ক্রয়-বিক্রয় করা সউদী আরবে দণ্ডনীয় অপরাধ। যার আর্থিক পরিমান প্রতিটি ভিসা বাবৎ ৫০,০০০ (পঁঞ্চাশ হাজার) রিয়াল।
———-
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, ksa.