বড়শি দিয়ে মাছ শিকার এবং একটি ভ্রান্ত কথা

◈ প্রশ্ন-১. বড়শি দিয়ে মাছ ধরা কি মাকরূহ?
উত্তর:
মহান আল্লাহ নদী ও সাগরের সর্বপ্রকার মৎস্য মানুষের জন্য হালাল রিজিক হিসেবে দান করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

أُحِلَّ لَكُمۡ صَيۡدُ ٱلۡبَحۡرِ وَطَعَامُهُۥ مَتَٰعٗا لَّكُمۡ وَلِلسَّيَّارَةِۖ وَحُرِّمَ عَلَيۡكُمۡ صَيۡدُ ٱلۡبَرِّ مَا دُمۡتُمۡ حُرُمٗاۗ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِيٓ إِلَيۡهِ تُحۡشَرُونَ

“তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তা খাওয়া হালাল করা হয়েছে, তোমাদের ও পর্যটকদের ভোগের জন্য। তোমরা যতক্ষণ ইহরামে থাকবে ততক্ষণ স্থলের শিকার তোমাদের জন্য হারাম। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার কাছে তোমাদেরকে একত্র করা হবে।” (সূরা মায়িদা: ৯৬)

বরং মহান আল্লাহ পৃথিবীর সবকিছুই মানুষের কল্যাণের স্বার্থে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
هُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا
“তিনিই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব তোমাদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা বাকারা: ২৯)
আল্লাহ তাআলা সব কিছুই মানুষের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। যেমন: তিনি বলেন,

وَسَخَّرَ لَكُم مَّا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِّنْهُ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

“এবং তোমাদের আয়ত্তাধীন করে দিয়েছেন, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সব। এগুলো সব তাঁর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (সূরা যারিয়াত: ১৩)

সুতরাং বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি, দেশীয় সরঞ্জাম ও কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ মৎস্য শিকার করতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে বড়শির ব্যবহার অতি পরিচিত একটি পদ্ধতি। সুতরাং এ পদ্ধতির সাহায্য মৎস্য শিকারে কোনও আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ।

তবে এ ক্ষেত্রে দুটি বিষয় লক্ষণীয়:

● ক. অনেকে বড়শিতে জীবন্ত ছোট মাছ, ব্যাঙ, পোকা-মাকড় বা অন্য কোনও প্রাণী গেঁথে দিয়ে পানির বরাবর রেখে ভাসিয়ে দেয়। তখন বড় মাছগুলো ঐ জীবন্ত প্রাণীতে খেতে এসে বড়শিতে ধরা পড়ে। যথাসম্ভব এ পদ্ধতিতে মাছ শিকার না করাই ভালো। কারণ এতে অন্য একটা প্রাণীকে কষ্ট দেয়া হয়। তবে যদি এভাবে মাছ শিকার করা বেশি সুবিধা জনক মনে হয় বা বিশেষ অবস্থায় অন্য পদ্ধতি ভালো কার্যকর না হয় তাহলে কোনও সমস্যা নাই । কারণ জরুরি প্রয়োজনেই এমনটি করতে হয়েছে। আর মহান আল্লাহ সৃষ্টি জগতের প্রতিটি বস্তুকেই মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং মানুষ তার প্রয়োজনবোধে এভাবে মাছ শিকার করতে পারে-বিশেষ করে যদি কারও জীবন-জীবিকার অবলম্বন হয় মৎস্য শিকার।

● খ. বিনা প্রয়োজনে শুধু বিনোদন বা ‘টাইম পাস’ করার উদ্দেশ্যে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা বৈধ নয়। কেননা এতে নিষ্প্রয়োজনে আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দেওয়া হয়। কিন্তু যদি মাছ ধরার পরে সেগুলো নিজেরা খায়, বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করে বা অন্য কোনোভাবে উপকৃত হয় তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই।

মোটকথা, মানুষ তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী আল্লাহর সৃষ্টি জগতের মধ্য থেকে হালাল যা কিছু আছে তা জীবনের নানা দরকারে কাজে লাগবে কিন্তু অপচয় করবে না পাশাপাশি আল্লাহর শুকরিয়া আদা করবে এবং তার অবাধ্যতা থেকে সর্বান্তকরণে দূরে থাকবে। নিশ্চয় আল্লাহ মহান দয়ালু ও দাতা।

◈ প্রশ্ন-২. “যে মাছ আল্লাহর জিকির করে না সে মাছই জালে ধরা পড়ে।” এমন কোনও কথা কুরআন-সুন্নায় আছে কি?

উত্তর:
“যে মাছ আল্লাহর জিকির করে না সে মাছ ই জালে ধরা পড়ে” এমন বক্তব্য কুরআন-হাদিস সম্মত নয়। বরং ভিত্তিহীন ভ্রান্ত কথা।
আমাদের জানা কর্তব্য যে, আসমান-জমিনের প্রতিটি জড় ও জীব, পশু-পাখি, মাছ, গাছ, তরুলতা ইত্যাদি আল্লাহর মহিমা ও গুণগান রত আছে (শুধু কিছু মানুষ ও জিন ছাড়া)। আল্লাহ তাআলা বলেন,
تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَن فِيهِنَّ ۚ وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَـٰكِن لَّا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ
“সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না।” (সূরা ইসরা: ৪৪)

সুতরাং বুঝা গেল, সাগর, নদ-নদী, পুকুর ও জলাশয়ে সাতরে বেড়ানো নানা প্রজাতির মাছ অহর্নিশ মহার রবে তসবিহ ও জিকিরে মশগুল রয়েছে। কিন্তু তারা কখনো আল্লাহর থেকে অন্য মনস্ক হয় কি না বা তারা জিকির করতে ভুলে যায় কি না এবং “তারা যখন আল্লাহর জিকির করে না তখন জেলের জালে আটকা পড়ে” এ সব কথার পক্ষে কোন দলিল নাই। আর ইলমে ওহি (ঐশী জ্ঞান) ছাড়া অদৃশ্য বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নাই। সুতরাং এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা থেকে দূরে থাকা অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَـٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا
“আর যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” (সূরাতুল ইসরা: ৩৬)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
সংকলনে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।