বিয়ে বিলম্বে জিন ও যাদুর প্রভাব এবং আমাদের করণীয়

প্রশ্ন: আমার প্রশ্ন হল, বরপক্ষ মেয়ে দেখতে এসে চলে যায়। যাওয়ার পর তারা আর কিছু বলে না। যখন আসে মনে হয় যেন, তাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে। কিন্তু যাওয়ার পর আর কোনও কথা বলেন না। এটা কীসের লক্ষণ? এখানে কি জিনের প্রভাবে কোনও কিছু হচ্ছে? আর এর জন্য কি কোনও হুজুরের কাছে যাওয়া যায়? এর থেকে কীভাবে বাঁচতে পারবো? দয়া করে যদি উত্তরটা দিতেন খুব উপকার হতো।
উত্তর:
সাধারণত: বিয়ের জন্য ছেলে-মেয়ে পছন্দ হওয়া বা না হওয়ার কিছু কারণ থাকে। সুতরাং কোনও মেয়েকে পাত্র দেখে যাওয়ার পরবর্তীতে বিয়েতে আগ্রহ প্রকাশ না করার কী কারণ থাকতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সরাসরি প্রশ্ন করে অথবা ঘটকের মাধ্যমে তা জানার চেষ্টা করতে হবে। যেমন: পাত্রীর অতিরিক্ত বয়স হওয়া অথবা পাত্রী সম্পর্কে তাদের প্রত্যাশিত রূপ-সৌন্দর্য, শিক্ষা-দীক্ষা, চাকুরী, অর্থ-সম্পদ, বংশমর্যাদা ইত্যাদি চাহিদা পূরণ না হওয়া।
এটাও মনে রাখতে হবে যে, অনেক সময় আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, পরিচিত জন ইত্যাদি তৃতীয় পক্ষের কিছু মানুষ রূপী শয়তান ওঁত পেতে থাকে। তারা এখানে সময়মত হস্তক্ষেপ করে বিয়ে ভঙ্গ করার পেছনে অতি গোপনে ও সুকৌশলে কাজ করে। সুতরাং এ বিষয়েও সচেতন থাকা জরুরি।

কিন্তু বিয়ে বিলম্ব হলেই বা পাত্র পক্ষ থেকে অনাগ্রহের বিষয় বুঝতে পারলেই তাকে জিনের আসর, যাদু দ্বারা বিয়ে আটকিয়ে রাখা ইত্যাদি ধারণা করা ঠিক নয়। যদিও তা অসম্ভব নয়। খারাপ জিনেরাও নানাভাবে মানুষের ক্ষতি করে এবং যাদু দ্বারাও মানুষের অনিষ্ট সাধন করা হয়। এগুলো অবাস্তব নয়।

এমন আশঙ্কা থাকলে সকাল-সন্ধ্যার জিকিরগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে সকালে ও সন্ধ্যায় তিন বার করে এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর এক বার করে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করা এবং ঘুমের পূর্বে তিন কুল পাঠ করে শরীরে মাসেহ করা ইত্যাদি আমলগুলো করতে হবে। জিন-শয়তান থেকে আত্মরক্ষার বিশেষ দুআগুলোও পাঠ করার চেষ্টা হবে। তাহলে এ জাতীয় ক্ষতিকর কোনও কিছু থাকলে মহান আল্লাহ সেগুলো থেকে রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ।

তৎসঙ্গে রাব্বুল আলামীনের নিকট সুপাত্র লাভের জন্য পরম আন্তরিকতা ও বিনয়াবনত ভাবে দুআ এবং সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। কোনও অবস্থাতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না।

কিন্তু আমাদের সমাজের তথাকথিত গণক, ঠাকুর, কবিরাজ, যাদুকর, জিন তাবেকারী ইত্যাদির থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। কারণ এরা অধিকাংশই তাবিজ-কবজ, কুফরি কালাম, যাদু-টোনা, নানা শয়তানি তেলেসমাতি, হারাম পন্থায় জিন হাজির ইত্যাদি কার্যক্রম করে থাকে। এরা হল, ধান্ধা বাজ অর্থলোভী ও ঈমান লুটেরা দজ্জাল। তবে যদি কুরআন-সুন্নাহ ও বিশুদ্ধ আকিদা লালন কারী কোনও যোগ্য আলিমের পরামর্শ গ্রহণ করা যায় তাহলে দোষ নেই।
আল্লাহ আমাদের সমস্যাগুলো দূর করুন, সকল অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন এবং আমাদের সৎ নিয়তগুলো পূর্ণ করুন। আমিন। নিশ্চয় তিনি বান্দার সকল সমস্যার সমাধান দাতা ও মনোবাসনা পূরণ কারী।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।