বিপদ-মসিবত ও কষ্ট-যাতনায় নিজের জন্য বা অন্যের জন্য মৃত্যুর দুআ করা নিষিদ্ধ

প্রশ্ন: অতিবৃদ্ধ ব্যক্তি ওসুখ-বিসুখের কারণে বিছায় পড়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করলে তার জন্য কি এভাবে দুআ করা জায়েয হবে যে, হে আল্লাহ, তুমি তাকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দাও এবং তাকে এ কষ্টের হাত থেকে রেহাই দাও?

উত্তর:

বিপদ-মুসিবতের কারণে নিজের জন্য বা অন্য কারও জন্য মৃত্যু কামনা করা বা মৃত্যুর জন্য দুআ করা নিষিদ্ধ।
👉 *নিজের বিপদাপদে মৃত্যু কামনা করা বা মৃত্যুর জন্য দুআ করা নিষেধ। এ মর্মে হাদীসগুলো দেখুন:*
🔹 আবূ হুরায়রা (রাঃ)রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لاَ يَتَمَنَّى أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ وَلاَ يَدْعُ بِهِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَهُ إِنَّهُ إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ وَإِنَّهُ لاَ يَزِيدُ الْمُؤْمِنَ عُمْرُهُ إِلاَّ خَيْرًا ‏”
“তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং তা আসার পূর্বে যেন তার জন্য দু’আ না করে। কেননা তোমাদের কেউ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিন ব্যক্তির বয়স দীর্ঘায়িত হলে এতে তার কল্যাণই বৃদ্ধি পেতে থাকে।” [সহীহ মুসলিম, হা/৬৫৭৫ ]
🔹 আনাস (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ لِضُرٍّ نَزَلَ بِهِ فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ مُتَمَنِّيًا فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي
“তোমাদের কেউ যেন বিপদাক্রান্ত হওয়ার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। যদি অগত্যা মৃত্যু কামনা করতেই হয় তাহলে সে যেন বলে- “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জীবিত রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত আমার হায়াত (বেঁচে থাকা) আমার জন্য মঙ্গলজনক হয়। আর আমাকে মৃত্যু দান করুন যদি আমার জন্য মৃত্যু মঙ্গলজনক হয়।” [সহীহ মুসলিম হা/৬৫৭০ ]
এ মর্মে আরও সহীহ হাদীস রয়েছে।
👉 *অনুরূপভাবে অন্য কারও ওসুখ-বিসুখ ও কষ্ট দেখে তার জন্য মৃত্যু কামনা করা বা মৃত্যুর জন্য দুআ করাও নিষেধ।*
এ মর্মে নিম্নোক্ত হাদীসটি দেখুন:
عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي حَازِمٍ، قَالَ دَخَلْنَا عَلَى خَبَّابٍ وَقَدِ اكْتَوَى سَبْعَ كَيَّاتٍ فِي بَطْنِهِ فَقَالَ لَوْمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَانَا أَنْ نَدْعُوَ بِالْمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ ‏.‏
কায়স ইবনু আবূ হাযিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তিনি তার পেটে সাতটি (লোহা পোড়ার) দাগ দেখিয়েছিলেন। তখন তিনি বললেন, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মৃত্যুর জন্য দু’আ করতে নিষেধ না করতেন তাহলে অবশ্যই আমি তার জন্য দু’আ করতাম। [সহীহ মুসলিম হা/৬৫৭৩ ]

*আমাদের কর্তব্য,*
ওসুখ-বিসুখ হলে আমাদের কতর্ব্য হল, সবর অবলম্বন করা এবং বৈধপন্থায় চিকিৎসা করা। সেই সাথে আখিরাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে এর বিনিময় আশা করা।
হাদীসে এসেছে, রোগ-ব্যাধী, দু:খ-কষ্ট, বিপদ-মুসবিতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ মোচন করেন ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। এ সব দ্বারা তিনি বান্দাকে পরিশুদ্ধ করেন।
সুতরাং হতাশ হয়ে নিজের জন্য বা অন্য কারও জন্য মৃত্যুর জন্য দুআ করা জায়েয হবে না।
বাহ্য দৃষ্টিতে আমাদের কাছে মনে হতে পারে যে, এ রোগ আর ভালো হবে না। কিন্তু আল্লাহ সর্ব শক্তিমান। তিনি অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করতে পারেন।
বাহ্য দৃষ্টিতে আমরা ভাবি যে, ওসুখে পড়ে উমুকের খুব কষ্ট হচ্ছে অথচ আমরা আল্লাহর হেকমত সম্পর্কে বেখরব। কেননা হতে পারে, তিনি এভাবে সে ব্যক্তিকে দুনিয়াবী রোগ-ব্যাধী ও কষ্ট দ্বারা পরিশুদ্ধ করে আখিরাতে এর বিনিময় দিয়ে ধন্য করতে চান।

সুতরাং আমাদের কতর্ব্য, সমস্যা যতই হোক না কেন জীবনের ব্যাপারে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না বরং সব কিছু সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি ন্যাস্ত করতে হবে। নিশ্চয় তিনি বান্দার কল্যাণকামী।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।