বিগত বছরসমূহের যাকাতের কাযা পরিশোধ

ইসলামের সরল পথ থেকে দূরে থাকার কারণে বিগত বছরগুলোতে আমি যাকাত আদায় করিনি। গত বছর থেকে আমি ইসলামে ফিরে এসেছি- আলহামদু লিল্লাহ্‌-। আমি সম্পদ উপার্জন করছি। আমার সম্পদের যাকাত আদায় করতে চাই এবং বিগত বছরগুলোতে যা করেছি আমি সেটার প্রতিকার করতে চাই; যদি সম্ভব হয়। আমার পূর্বের কিছু ঋণ আছে; যেগুলো এখনও পরিশোধ করতে পারিনি। আমি বিগত বছরগুলোর যাকাত কিভাবে আদায় করব? এভাবে আদায় করলে কি কবুল হবে? যেহেতু আমি বিগত বছরগুলোতে আদায় করিনি? এখনও আমি হারাম ঋণগুলো পরিশোধ করছি।

আলহামদুলিল্লাহ।

আপনি হেদায়েত পাওয়ায় আমরা আল্লাহ্‌র প্রশংসা করছি। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আপনাকে হেদায়েতের উপর অটল রাখেন। জেনে রাখুন, আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তিনি বান্দার তওবাতে খুশি হন – যদিও তিনি মাখলুকের প্রতি মুখাপেক্ষী নন-। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আপনার উপর তাঁর অনুগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেন।

আপনার উপর অপরিহার্য হল বিগত বছরগুলোতে যে পরিমাণ অর্থ আপনার মালিকানাধীন ছিল সেটা থেকে প্রত্যেক বছরের ঋণ বাদ দিয়ে বাকী অর্থের যাকাত পরিশোধ করা। যদি আপনি প্রত্যেক বছরের সম্পদের হিসাব কত তা নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন তাহলে সে সম্পদের যাকাত আদায় করা আপনার উপর ফরয। যদি আপনি সঠিক হিসাব জানতে না পারেন তাহলে সতর্কতার সাথে অনুমান করে এর ভিত্তিতে যাকাত আদায় করবেন।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

এক লোক পাঁচ বছর যাকাত পরিশোধে অবহেলা করেছে। এখন সে তওবা করেছে। তার তওবার কারণে কি সে যাকাত পরিশোধ থেকে অব্যাহতি পাবে? যদি অব্যাহতি না পায় তাহলে সমাধান কী? এ সম্পদের পরিমাণ ছিল দশ হাজারেরও বেশি। এখন পরিমাণ কত সেটা তার জানা নেই।

জবাবে তিনি বলেন:

যাকাত একদিকে আল্লাহ্‌র ইবাদত, অন্যদিকে ফকিরদের অধিকার। কোন মানুষ যদি যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে সে দুইটি অধিকার লঙ্ঘন করে: আল্লাহ্‌র অধিকার এবং ফকিরদের অধিকার বা যাকাতের অন্য প্রাপকদের অধিকার।

যদি সে ব্যক্তি পাঁচ বছর পর তওবা করেন- যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে- সেক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র অধিকার থেকে সে অব্যাহতি পেয়েছে। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন ও পাপসমূহ মোচন করেন।”[সূরা শুরা, আয়াত: ২৫]

তবে দ্বিতীয় অধিকারটি বহাল আছে। সেটা হচ্ছে যাকাতের হকদার ফকির বা অন্যান্য প্রাপকদের অধিকার। তাই সে ব্যক্তির উপর ফরয এ সকল লোকদের কাছে যাকাতের সম্পদ হস্তান্তর করা। যদি তার তওবা শুদ্ধ হয় তাহলে আশা করা যায় সে ব্যক্তি যাকাত পরিশোধ করার সওয়াব পাবেন। কেননা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ প্রশস্ত।

আর যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য সে ব্যক্তি সাধ্যানুযায়ী অনুমান করার চেষ্টা করবে। আল্লাহ্‌ কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। উদাহরণতঃ দশ হাজার (রিয়ালের) এক বছরের যাকাত হবে দুইশত পঞ্চাশ (রিয়াল)। যদি যাকাতের পরিমাণ হয় দুইশত পঞ্চাশ (রিয়াল) তাহলে প্রত্যেক বছরের যাকাত হিসেবে দুইশত পঞ্চাশ রিয়াল আদায় করবে। তবে, কোন কোন বছর যদি সম্পদের পরিমাণ কিছু বেড়ে থাকে তাহলে অতিরিক্ত অংশেরও যাকাত আদায় করতে হবে। আর যদি কোন কোন বছর সম্পদ কিছু কমে গিয়ে থাকে তাহলে সে ঘাটতির পরিমাণ যাকাত থেকে বাদ যাবে।

[আসয়িলাতুল বাব আল-মাফতুহ (প্রশ্ন নং-৪৯৪, আসর নং-১২)

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব