বিকাশের এজেন্ট বা কাস্টমার কেয়ারে চাকুরি করা কি জায়েজ

প্রশ্ন: বিকাশের এজেন্ট বা কাস্টমার কেয়ারে চাকুরি করা কি জায়েজ?
▬▬▬◈◯◈▬▬▬
উত্তর:
নিম্নে বিকাশ কি, এতে সুদের সম্পৃক্ততা, বিকাশের এজেন্ট হিসেবে বা কাস্টমার কেয়ারে চাকুরি করার বিধান, বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন ইত্যাদি বিষয়গুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হল:
❑ বিকাশ কি?
বিকাশ (Bkash) মূলত ব্র্যাক ব্যাংক এর উদ্যোগে পরিচালিত মোবাইল ফোন ভিত্তিক অর্থ আদান প্রদান মূলক একটি পরিসেবা।
এ ব্যাপারে বিকাশের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে, “বিকাশ’ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ এবং মানি ইন মোশন, ইউএসএ এর একটি যৌথ উদ্যোগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং পরবর্তীতে ২০১৩ এর এপ্রিল মাসে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) ও ‘বিকাশ’ এর অন্যতম অংশীদার হয়।”
উল্লেখ্য যে, ব্র্যাক নামক এনজিওটি বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে স্যার ফজলে হাসান আবেদ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের এনজিও ব্যুরোর অধীনে নিবন্ধিত BRAC (Bangladesh Rural Advancement Committee) একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা। এই সংস্থার অধীনে পরিচালিত ব্যাংক হল, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড (BRAC Bank Limited)।
❑ ব্র্যাক ব্যাংক এবং বিকাশে সুদ:
এ কথা সুবিদিত যে, ব্র্যাক ব্যাংক একটি সুদি ব্যাংক। সুতরাং তার উদ্যোগে পরিচালিত বিকাশে সুদ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বিকাশে সুদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “আপনি বিকাশ একাউন্টে টাকা জমিয়ে বছরে ৪% পর্যন্ত ইন্টারেস্ট পেতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনার বিকাশ একাউন্টে যদি একটি মাস জুড়ে কমপক্ষে ১,০০০ টাকা থাকে, ঐ মাসে ২ টি লেনদেন করেন এবং ঐ মাসের গড় ব্যালেন্স যদি ১,০০০ থেকে ৫,০০০.৯৯ টাকার মধ্যে থাকে তাহলে আপনি ঐ মাসের গড় ব্যালেন্সের উপর ১.৫% বাৎসরিক হারে ইন্টারেস্ট পাবেন।” (বিকাশের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট)
আর এ কথা অজানা নয় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ ভয়ানক হারাম, ধ্বংসাত্মক কবিরা গুনাহ এবং অভিশাপ যোগ্য কাজ হিসেবে পরিগণিত।
◈ ইসলামে সুদ হারাম:
আল্লাহ তাআলা কুরআনে সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,
أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
“আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।” (সূরা বাকারা: ২৭৫)
◈ সুদ একটি ধ্বংসাত্মক পাপ:
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
اجتَنبوا السَّبعَ الموبقاتِ . قالوا : يا رسولَ اللهِ : وما هنَّ ؟ قال : الشِّركُ باللهِ ، والسِّحرُ ، وقتلُ النَّفسِ الَّتي حرَّم اللهُ إلَّا بالحقِّ ، وأكلُ الرِّبا ، وأكلُ مالِ اليتيمِ ، والتَّولِّي يومَ الزَّحفِ ، وقذفُ المحصَناتِ المؤمناتِ الغافلاتِ) [رواه البخاري]
‘‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, সেগুলো কী? তিনি বললেন,
১) আল্লাহর সাথে শিরক করা।
২) যাদু করা।
৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ তাআলা হারাম করে দিয়েছেন।
৪) সুদ খাওয়া।
৫) এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা।
৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা।
৭) সতী-সাধ্বী ইমানদার নারীকে (ব্যভিচারের) অপবাদ দেয়া। (সহিহ বুখারি)
◈ সুদ একটি অভিশপ্ত কাজ:
জাবের রা. হতে বর্ণিত,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
“সুদ গ্রহীতা, সুদ দাতা, সুদের লেখক এবং সাক্ষী দ্বয়কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তারা সকলেই সমান (গুনাহগার)।” [সহিহ মুসলিম]
সুতরাং ব্র্যাকের বিকাশ শাখায় এজেন্ট হিসেবে কাজ করা বা এর কাস্টমার কেয়ারে চাকুরি করা সুদি ব্যাংকের অধীনে চাকুরি করারই নামান্তর। এটা যেমন হারাম তেমনি তা প্রচার-প্রসার করা, বিজ্ঞাপন দেয়া, এ জন্য ঘর ভাড়া দেয়া, বিকাশ অ্যাপ রেফার করে বা বিকাশ অ্যাপে বার্ড নামক গেইম খেলে টাকা কামানো ইত্যাদি সবই হারাম। কারণ এগুলোর মাধ্যমে তাদের সুদি কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ ও ব্যাপ্তিতে সহায়তা করা হয়। আর মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
“সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদা: ২)
❑ প্রশ্ন: বিকাশের মাধ্যমে টাকা বিকাশে টাকা লেন-দেন হয় সেটা কি বৈধ?
উত্তর: বিকল্প উপায় না থাকলে জরুরি প্রয়োজনে বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করা যাবে।
❑ প্রশ্ন: বিকাশের সুদ বন্ধ করা কি কোনও সমাধান?
উত্তর: বিকাশের সুদ অপশন বন্ধ করা কোনও সমাধান নয়। কারণ গ্রাহক সুদ গ্রহণ না করলে উক্ত সুদের টাকা ব্র্যাক ব্যাংকের লাভের খাতায় যোগ হবে এবং এর মাধ্যমে তারা সুদি কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে। সুতরাং তাদেরকে এ সুযোগ দেয়া ঠিক নয়। বরং যদি বিশেষ পরিস্থিতিতে বিকাশ একাউন্টে কারও টাকা জমা থাকে এবং এতে কিছু সুদ/ইন্টারেস্ট আসে তাহলে তা উত্তোলন করে গরিব-অসহায় মানুষের কল্যাণে সওয়াবের নিয়ত না করে দান করে দিবে (নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যায় করবে না)। তারপরও কোনও অবস্থায় ঐ সুদখোর ব্যাংকের জন্য তা ছেড়ে দেয়া উচিৎ নয়। অন্যথায় এমন পরহেজগার গ্রাহকের সুদের টাকায় ওরা নতুন উদ্যোমে সুদি কার্যক্রম ও তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করবে। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল প্রকার হারাম কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
▬▬▬◈◯◈▬▬▬
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।