বাড়ীতে তারাবিহ এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি ও বিধিবিধান

প্রশ্ন: বাড়ীতে তারাবিহ এর সালাত কিভাবে আদায় করতে হয়? আমাদের মধ্যে কোন হাফেয নাই। তাহলে কীভাবে সালাত আদায় করব?

উত্তর:

রমজান মাসে কিয়ামুল লায়ল (রাতের নফল সালাত) বা তারাবিহ এর সালাত আদায় করা বিরাট মর্যাদাপূর্ণ আমল এবং গুনাহ মোচনের মাধ্যম। আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসে কিয়ামুল লাইল (বা তারাবিহ এর সালাত) আদায় করবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
তাই রমজানের মহিমান্বিত মাসে আমাদের কর্তব্য, তারাবিহ এর সালাত আদায়ের প্রতি পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেয়া।

নিম্নে বাড়িতে তারাবিহ এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি সংক্রান্ত কতিপয় বিধিবিধান পেশ করা হল:

● ১. রোগ-ব্যাধির প্রাদূর্ভাব, ভয়ভীতি, ঝড়-বৃষ্টি ইত্যাদি শরিয়ত সম্মত বিশেষ পরিস্থিতিতে মসজিদে যাওয়া সম্ভব না হলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, জুমা, সালাতুত তারাবিহ ইত্যাদি নিজ বাড়ি/বাসস্থানে আদায় করতে হবে।
● ২. এ ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজন বা সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করা ভালো।
● ৩. কেউ না থাকলে একাকী আদায় করা যাবে।

● ৪. পরিবারের লোকজন অথবা একাধিক ব্যক্তি জামাআতে সালাত আদায় করলে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে ভালো কুরআন তিলাওয়াত করতে জানে এবং সালাতের বিধিবিধান সম্পর্কে জ্ঞান রাখে সে ইমাম হয়ে সালাত পড়াবে।

● ৫. দু জন পুরুষ থাকলে একজন ইমাম হবে এবং অন্যজন ডান পাশে সমান্তরালভাবে দণ্ডায়মান হবে। (চার আঙ্গুল বা আধাহাত আগে-পিছে নয়। এটি সুন্নাহ পরিপন্থী)

● ৬. তিন জন পুরুষ থাকলে একজন ইমাম হয়ে সামনে যাবে আর বাকি দু জন তার পেছনের কাতারে দাঁড়াবে।

● ৭. সাথে এক বা একাধিক মহিলা থাকলে সর্বাবস্থায় সে/তারা পেছনের কাতারে দাঁড়াবে। গাইরে মাহরাম মহিলা থাকলে পর্দার অন্তরালে থেকে জামাআতে অংশ গ্রহণ করা ভালো। আওয়াজ শোনা গেলে পাশাপাশি কক্ষের এক কক্ষে পুরুষ এবং অন্য কক্ষে মহিলারা দাঁড়ালেও সমস্যা নেই।

● ৮. মহিলার জন্য পুরুষের ইমামতি করা বা পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে জামাআতে সালাত পড়া জায়েজ নয়।

● ৯. কোন পুরুষ না থাকলে মহিলারা মহিলাদের ইমামতি করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে যে ইমাম হবে সে পুরুষদের মত সামনে যাবে না বরং প্রথম কাতারের মধ্যখানে অবস্থান করবে এবং সালাতে কিরাআত পাঠ করার সময় এতটা গলার কণ্ঠ উুঁচু করবে না যে, কোন পরপুরুষ তার গলার কণ্ঠ শুনতে পায়।

● ১০. তারাবির সালাতে কুরআন খতম করা জরুরি নয়। সুতরাং মুসল্লিদের মধ্যে কেউ হাফেজ না থাকলেও কোন সমস্যা নেই। বরং ছোট ছোট সূরা দিয়ে সালাত পড়ালেও যথেষ্ট। তবে ধীর স্থিরতা, ভয়ভীতি ও বিনয় নম্রতা সহকারে কিছুটা দীর্ঘ কিয়াম, রুকু, সেজদা ইত্যাদির মাধ্যমে সালাত পড়ার চেষ্টা করা উত্তম।

১১. তারাবির সালাতের নিয়ম ও রাকআত সংখ্যা:

তারাবিহ সালাত আদায়ের নিয়ম হল, মনে-মনে সুন্নাতে মুয়াক্কাদার নিয়তে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে দাঁড়ানো। অতঃপর উঁচু আওয়াজে কিরাআত সহকারে
যথানিয়মে দু রাকআত দু রাকআত করে মোট ৮ রাকাআত আদায় করার পর তিন রাকআত বিতর সালাত পড়া।
এটাই রমজানে অথবা রমজানের বাইরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের সালাতের সাধারণ পদ্ধতি। (সহিহ বুখারী)
তবে কেউ ইচ্ছে করলে এর থেকে কম বা বেশি যা খুশি তা পড়তে পারে। শুধু ২০ রাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা ঠিক নয়।

১২. কেউ ইচ্ছে করলে ইশার সালাতের পর তা না পড়ে ফজরের পূর্বে ভোররাতেও পড়তে পারে। অথবা কিছু অংশ ইশার সালাতের পরে আর কিছু অংশ ভোররাতে ফজরের পূর্বে পড়লেও কোন আপত্তি নেই।
তবে ভোররাতে পড়তে চাইলে সব সালাত শেষ করে সর্বশেষ বিতর পড়বে।

আল্লাহ আমাদের সিয়াম, কিয়াম, তিলাওয়াতুল কুরআন সহ সকল প্রকার ইবাদত কবুল করুন এবং রোগ-ব্যাধি ও মহামারী থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করুন। আমীন।
▬▬▬▬◐◑▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।