বাবা-মা যদি ভুল ধারণার উপরে ভিত্তি করে বা অন্যায় ভাবে সন্তানের উপর বদদুআ করেন তাহলে কি সন্তান এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে

প্রশ্ন: অনিচ্ছা বশত আমার‌ দ্বারা একটি ভুল কাজ ঘটে গেছে। কিন্তু আম্মা মনে করেছেন, আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে এ কাজ করেছি। যার কারণে তিনি আমাকে বদদুআ করেন এবং বলেন, যেন আমার আশায় ছাই পড়ে। এখন আমি কি তার বদদুআর শিকার হব এবং দুআ করলেও আমার কোনও আশা পূরণ হবে না?
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: নিম্নে চারটি পয়েন্টে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
🔸প্রথমত: বাবা-মার বদদুআ সন্তানের জন্য বিপদজনক। তাই সন্তানের কর্তব্য, পিতা-মাতাকে খুশি রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। আর পিতা-মাতার কর্তব্য হলো, সন্তানের জন্য কখনো বদদুআ না করা।‌ কেননা হাদিসে‌ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন:
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَا تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَوْلَادِكُمْ وَلَا تَدْعُوا عَلَى خَدَمِكُمْ وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَمْوَالِكُمْ، لَا تُوَافِقُوا مِنَ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى سَاعَةَ نَيْلٍ فِيهَا عَطَاءٌ فَيَسْتَجِيبَ لَكُمْ ‏”‏ ‏
“তোমরা নিজেদের উপর বদদুআ করো না, তোমাদের সন্তানদের উপর বদদুআ করো না, তোমাদের খাদেমদের (সেবক বা কাজের মানুষদের) উপর বদদুআ করো না এবং তোমাদের ধন-সম্পদের উপর উপর বদদুআ করো না। কেননা হতে পারে, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ প্রাপ্তির সময়ের সাথে (দুয়া কবুলের সময়ের সাথে) তোমাদের মিল হয়ে যাবে ফলে তিনি‌ তোমাদের (বদদুআও) কবুল করে নিবেন।” [মুসলিম, অধ্যায়: যুহুদ]

🔸 দ্বিতীয়ত: বান্দার অনিচ্ছাকৃত ভুল স্বয়ং আল্লাহও ক্ষমা করে দিয়েছেন। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْه».
‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতের অনিচ্ছা বশত: এবং ভুলে যাওয়ার কারণে ঘটে যাওয়া গুনাহ এবং জোর জবরদস্তি মূলক কৃত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।” [আবু দাউদ, হা/৭২১৯-সহিহ]
সুতরাং আমাদেরও উচিত, মানুষের অনিচ্ছা বশত: ঘটে যাওয়া ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেওয়া। এটি নিঃসন্দেহে উন্নত চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।

🔸 তৃতীয়ত: যদি কোনও ব্যক্তির আচার-আচরণ, চরিত্র ও কার্যক্রম অধিকাংশই ভালো ও সন্তোষজনক হয় তাহলে তার দ্বারা হঠাৎ কোনও অন্যায় কর্ম ঘটে গেলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ। হাদিসে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। অবশ্য ইসলামি আইনে‌ দণ্ডবিধি প্রযোজ্য হয় এমন অপরাধ হলে‌ ভিন্ন কথা। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
أقيلوا ذَوي الهيئاتِ عثَراتِهم إلا الحدودَ
“তোমরা সম্মানিত ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী লোকদের হঠাৎ ঘটে যাওয়া ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দাও দণ্ড যোগ্য অপরাধ ব্যতীত।” [আবু দাউদ, ৪৩৭৫, আহমদ, ২৫৪৭৪, সহীহাহ্ ৬৩৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৮৫]

🔸চতুর্থত: মা অথবা বাবা যদি সন্তানের ‘অনিচ্ছাকৃত’ ঘটে যাওয়া কোনও ভুলকে ‘ইচ্ছাকৃত’ মনে করে বদ দুআ করে তাহলে তা আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না। কারণ এই বদদুআ যথার্থ হয়নি। কুরআন-হাদিসে মানুষের প্রতি কু ধারণা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সুস্পষ্ট প্রমাণ ব্যতিরেকে ধারণার উপরে ভিত্তি করে সন্তানকে বদদুআ দিয়েছে। এ কারণে তার দুআ আল্লাহর দরবারে প্রত্যাখ্যাত তো হবেই বরং এতে তিনি গুনাহগার বলে গণ্য হবেন। কারণ, ইসলামে সন্তান-সন্ততির উপরে বদদুআ করাই নিষিদ্ধ। তারপরে আবার যদি দুআর মধ্যে গুনাহের বিষয় থাকে তা আল্লাহ কবুল করবেন না। (সুস্পষ্ট প্রমাণ ব্যতিরেকে শুধু ভুল ধারণার উপরে ভিত্তি করে বদদুআ করা নিঃসন্দেহে জুলুম, সীমালঙ্ঘন এবং গুনাহ)।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّهُۥ لَا یُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِینَ
“নিশ্চয় তিনি (মহান আল্লাহ) সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” [সুরা আরাফ: ৫৫]
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ما من مسلم يدعو بدعوة، ليس فيها إثم ولا قطيعة رحم إلا أعطاه الله بـها إحدى ثلاث : إما أن يعجل له دعوته، وإما أن يدخرها له في الآخرة وإما أن يصرف عنه من السوء مثلها. قالوا : إذا نكثر قال : الله أكثر
“যখন কোনও মুমিন ব্যক্তি দুআ করে, যে দুআতে কোনও গুনাহ থাকে না এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তখন আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনও এক পদ্ধতিতে তার দুআ অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দুআ সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দুআর প্রতিদান আখিরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দুআর মাধ্যমে তার অনাগত কোনও বিপদ-মুসিবত তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবিগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে‌ (দুআ) করব। তিনি বললেন, “আল্লাহ আরও অধিক দাতা” [বুখারি: আদাবুল মুফরাদ ও আহমদ, সহীহ-আলবানি]

তবে আপনার কর্তব্য, আপনার মাকে শান্তভাবে‌ যুক্তি-প্রমাণের আলোকে অনিচ্ছা বশত: ভুল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করা যেন আপনার ব্যাপারে তার ভুল ধারণা ভেঙ্গে যায় এবং তিনি নিজের অবস্থান থেকে ফিরে আসেন। আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।