বাড়ির বাইরে বোরকা পরলেও বাড়িতে মাহরাম-নন মাহরাম মেইনটেইন করা এবং পর্দা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না এখন কী করণীয়

প্রশ্ন: দ্বীনের বুঝ আসার পর থেকেই পর্দা করি আলহামদুলিল্লাহ।‌ তবে আমি বাড়িতে কোনভাবেই নন মাহরাম মেইনটেই করতে পারছি না।‌ আব্বু বা পরিবারের অন্য সদস্যরা পর্দার ব্যাপারে অতটা গুরুত্ব দেয় না। তারা বাইরে বোরকা পরে বের হওয়াকেই পরিপূর্ণ পর্দা মনে করে। তবে আমি চেষ্টা করি, মাহরাম-নন মাহরাম মেইনটেইন করার। কিন্তু বাড়িতে চাচাতো, ফুফাতো,‌ দুলাভাইদের প্রায়ই যাতায়াত করার কারণে কোনো মতেই তা সম্ভব হচ্ছে না। আমার প্রশ্ন হলো, আমি বাড়িতে নন মাহরাম মেইনটেইন না করতে পারলেও কোথাও বেড়াতে গিয়ে কি তা করতে পারব? যদি কোনো নন মাহরাম আমাকে দেখতে চায়, তাহলে তার সামনে যাওয়া কি আমার জায়েজ হবে যদিও আমি বাড়িতে নন মাহরাম মেইন টেইন করতে পারছি না?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: আপনি আল্লাহর দ্বীনের জ্ঞান পেয়ে তা পালন করছেন এই জন্য আপনাকে অভিনন্দন। দুআ করি, তিনি যেন আপনাকে মৃত্যু অবধি দ্বীনকে বুকে ধারণ করে জীবন পরিচালনা করার তওফিক দান করেন। আমিন।
অতঃপর ইসলামে মাহরাম-নন মাহরাম-এর মাঝে সম্পর্কের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষ নারী সকলের ক্ষেত্রে ঘরে-বাইরে সর্বত্র এই বিধান মেনে চলা ফরজ।

একজন নারীর জন্য তার পিতা, ভাই, ভাতিজা (ভাইয়ের ছেলে), ভাগিনা (বোনের ছেলে), দাদা, চাচা, মামা, নিজের শশুর, দাদা শ্বশুর, নানা শ্বশুর প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ মাহারম (যাদের সাথে চিরতরে বিবাহ নিষিদ্ধ)।‌ সুতরাং তাদের সাথে পর্দা করা আবশ্যক নয়। কিন্তু সর্বাবস্থায় তাদের সামনেও পোশাক-আশাক ও চলাফেরায় শালীনতা বজায় রাখা অপরিহার্য।

অপরপক্ষে, চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো ও খালাতো ভাই, দুলাভাই বা ভগ্নিপতি, দেবর, ভাসুর এবং তাদের ছেলেগণ ইত্যাদি সবাই নন মাহরাম‌ (যাদের সাথে বিয়ে বৈধ)। তাদের সামনে পরিপূর্ণ পর্দা করা ফরজ। অর্থাৎ তাদের সামনে মুখমণ্ডল এবং দুই হাতের কব্জি সহ পূর্ণাঙ্গ শরীর পর্দাবৃত করতে হবে। তাদের কারো সাথে নির্জনতা অবলম্বন করা, কোথাও ঘুরতে যাওয়া, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তাদের কারো শরীর স্পর্শ করা, তাদের সামনে বেপর্দা হওয়া, তাদের সাথে হাসি-মজাক ও খোশ গল্প করা, নিষ্প্রয়োজনীয় চ্যাটিং, অডিও-ভিডিও কল ইত্যাদি জায়েজ নেই। এগুলো উভয়ের জন্য ফিতনা এবং গুনাহের কারণ। তবে একান্ত দরকারে পর্দা সহকারে নন মাহরাম ব্যক্তির সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েজ আছে।‌ কিন্তু কথা বলার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নারী সুলভ কোমল কন্ঠ পরিহার করতে হবে। (এ বিষয়ে সূরা আহযাব-এর ৩২ নাম্বার আয়াতের তাফসির পড়ুন)। প্রয়োজন বোধে পর্দা সহকারে তাদের সামনেও যাওয়া যাবে। তবে নির্জনতা অবলম্বন করা যাবে না এবং যেন কোন ধরনের ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এই বিষয়গুলো বাড়ির বাইরে যেমন মেনে চলা আবশ্যক তেমনি বাড়িতে থাকা অবস্থাতেও আবশ্যক।‌ এ ক্ষেত্রে ঢিল দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, অনেক মেয়ে আছে, যারা বাড়ির বাইরে বোরকা পরিধান করে কিন্তু বাড়িতে থাকা অবস্থায় পর্দার প্রয়োজন অনুভব করে না অথবা মাহরাম নন-মাহরাম মেনটেইন করে না। এটি মারাত্মক ভুল। বরং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সর্বত্রই তাকে পর্দার বিধান মেনে চলতে হবে। এতে আল্লাহ তাকে আখিরাতে মহাপুরষ্কারে ভূষিত করবেন ইনশাআল্লাহ।

বাড়িতে থাকা অবস্থায় পরিবারের সদস্যগণ যদি পর্দা করার ক্ষেত্রে সাহায্য না করে তারপরেও নিজে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে পর্দা রক্ষা করার। যে আল্লাহকে ভয় করে অবশ্যই আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। অতএব বাড়ির বাইরে যেভাবে পর্দা এবং মাহরাম-নন‌ মাহরাম মেনটেইন করেন ঠিক একইভাবে বাড়িতে থাকা অবস্থাতেও তা করার চেষ্টা করবেন। কথায় বলে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সম্ভব হলে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরকে পর্দা করা এবং মাহরাম-নন মাহরামের বিষয়ে মহান আল্লাহর বিধানগুলো বোঝানোর চেষ্টা করবেন পাশাপাশি আল্লাহর কাছে দুআ করবেন, তিনি যেন ইসলামের বিধানগুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে সাহায্য করেন এবং সব ধরনের ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে হেফাজত করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকওয়াবান, সত্যবাদী ও একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে সাহায্য করে থাকেন। আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।