পানিতে রুকিয়া বা ঝাড়ফুঁক করে তা পান করা বা তা দ্বারা গোসল করার বিধান

প্রশ্ন: আমার একটু সমস্যার কারণে আমি রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) করতে চাই। এখন রুকিয়া করার জন্য কি দোয়া পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে তা পান করা বা গোসল করা কি জায়েয?
উত্তর:
রুকিয়া বা ঝাড়ফুঁক করার জন্য কুরআনের নির্দিষ্ট সূরা, আয়াত ও হাদিসে বর্ণিত দুআগুলো পানিতে পড়ে তা ব্যবহার করা যাবে কি না সে বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। তবে একদল মুহাক্কিক আলেম জায়েয বলেছেন। যেমন, শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায (মজমু ফতোয়া বিন বায ১/৫২) 
পানি পড়ার বৈধতার পক্ষে শাইখ সালিহ আল ফাউযান, শাইখ বকর আবু যায়েদ, শাইখ গুগাইয়ান, আব্দুল আযীয আলুশ শাইখ প্রমুখদেরও ফতোয়া রয়েছে।
এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে,
সাবিত বিন কায়েস বিন শাম্মাস রা. অসুস্থ হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিকটে গিয়ে পানিতে দুয়া পড়ে তা তার শরীরে ছিটিয়ে দিয়েছিলেন।” (সুনানে আবু দাউদ, কিতাবতুত ত্বিব-সংক্ষেপিত)
পূর্ণ হাদিসটি নিম্নরূপ:
ثَابِتِ بْنِ قَيْسِ بْنِ شَمَّاسٍ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى ثَابِتِ بْنِ قَيْسٍ – قَالَ: أَحْمَدُ وَهُوَ مَرِيضٌ – فَقَالَ: «اكْشِفِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ عَنْ ثَابِتِ بْنِ قَيْسِ بْنِ شَمَّاسٍ» ثُمَّ أَخَذَ تُرَابًا مِنْ بَطْحَانَ فَجَعَلَهُ فِي قَدَحٍ ثُمَّ نَفَثَ عَلَيْهِ بِمَاءٍ وَصَبَّهُ عَلَيْهِ
[حكم الالبانى] : ضعيف الإسناد
এ হাদিসটিকে শাইখ আলবানী যইফ বলেছেন।

যাহোক, প্রথমোক্ত আলেমদের মতে রুকিয়া কৃত (সূরা বা দুআ পড়া) পানি রোগীর পান করা বা তা দ্বারা গোসল করা জায়েয ইনশাআল্লাহ। এমন কি রোগী ঋতুবতী হলেও আপত্তি নাই।

তবে সবচেয়ে সঠিক নিয়ম হল, সে সকল সূরা, আয়াত ও দুয়াগুলো পড়ে রোগী নিজেই নিজের শরীরে ফুঁ দিবে অথবা অন্য কেউ পড়ে রোগীর গায়ে ফুঁ দিবে। এ মর্মে একাধিক সহীহ বর্ণিত হয়েছে এবং সেগুলোতে কোনও দ্বিমত নাই।
কিন্তু পানিতে পড়ে ছিটা দেয়া, পান করা বা গোসল করার বিষয়টি মত বিরোধপূর্ণ। কেননা, এ মর্মে বর্ণিত হাদিসটি অনেক মুহাদ্দিসের মতে যঈফ।

উল্লেখ্য যে, কুরআনের নির্দিষ্ট আয়াত, সুরা এবং হাদিসে বর্ণিত দুআ পড়ে পানিতে ফুঁ দেয়া ঠিক নয়। কারণ হাদিসে খাদ্য-পানীয় দ্রব্যে বা পানাহারের পাত্রে ফুঁ দেয়া নিষেধ। তবে আয়াত বা দুআ পড়ে এমনভাবে পানিতে দম করবে যে, থুথু ফেলার মত আওয়াজ হবে কিন্তু তাতে মোটেও থুথু বের হবে না বা হলেও খুবই হালকা। আরবিতে এটাকে نفث বলা হয়। পানি পড়ার ব্যাপারে হাদিসে নাফস نفث শব্দটি এসেছে। (পূর্বোল্লিখিত সাবিত বি কায়েস রা. এর হাদিস)
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।