পরীক্ষা কেন্দ্রিক বিদআত এবং পরীক্ষার পূর্বে দু রাকআত সালাত আদায়ের বিধান

প্রশ্ন-১: অনেকে পরীক্ষার পরে খাতায় বিভিন্ন দুআ পড়ে ফুঁ দেয়। তারা মনে করে যে, এটা করলে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল লাভ করা যাবে, পরীক্ষার খাতায় ভুল থাকলে তা ঠিক হয়ে যাবে, লেখায় কাটাকাটি থাকলে তা সংশোধিত হয়ে যাবে ইত্যাদি। হ্যাঁ, আমিও বিশ্বাস করি, সব কিছুতে দুআ-দরুদের প্রভাব আছে। কিন্তু এটা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়। এখন আমি যদি বিশ্বাস করি যে, এতে কোনও উপকার হবে না তাহলে কি আমি কা/ফি/র হয়ে যাবো? আর এক্ষেত্রে কেমন বিশ্বাস রাখা উচিৎ?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরীক্ষার খাতায় একজন পরীক্ষার্থী যেভাবে যা লিখবে তাই থাকবে। কোন দুআ-দরুদ পাঠের মাধ্যমে তা কখনো পরিবর্তিত হবে না। কুরআন ও হাদিসে এমন কোন দুআ নেই যা পড়ে পরীক্ষার খাতায় ফুঁ দিলে ভুলটা ঠিক হয়ে যাবে বা পরীক্ষার খাতায় কাটাকাটি থাকলে তা সংশোধন হয়ে যাবে কিংবা হাতের লেখা এলোমেলো বা খারাপ হলে তা সুন্দর হয়ে যাবে। এটা নিতান্তই ভিত্তিহীন চিন্তা ও উদ্ভট বিশ্বাস। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ মানুষেরাই এই ধরনের কথা ভাবতে পারে। পরীক্ষার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা, কৃতিত্ব, বুদ্ধিমত্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গি যাচায় ও পরিমাপ করা। সুতরাং শিক্ষার্থীর কর্তব্য, সঠিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করা এবং জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এ জন্য তাকে পর্যাপ্ত কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হবে। তাহলেই আল্লাহর রহমতে সে পরীক্ষায় তাঁর প্রতিভা বিকাশ ও মেধার সাক্ষর রাখতে পারবে এবং অর্জিত জ্ঞানগত যোগ্যতার ও দক্ষতার পরিস্ফুটন ঘটিয়ে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।
মোটকথা, যে যেমন পড়াশোনা করবে ও পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিবে পরীক্ষার খাতায় তেমন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।

পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগিতা, অনর্থক সময় অপচয় বা অলসতা করে‌ যারা বছর পার করে তারাই পরীক্ষা পাশের এমন উদ্ভট দোয়া ও তদবির খুঁজে বেড়ায়। কোথাও না পেলে শেষ পর্যন্ত নিজেরাই আবিষ্কার করে ফেলে। আসলে এসব আবিষ্কার দ্বারা কোন উন্নতি হয় না। বরং ভালো পরীক্ষা না দেওয়ার ফলে একদিকে পরীক্ষায় দুর্বল ফলাফল লাভ করে অথবা অকৃতকার্য হয় অন্যদিকে মনগড়া পন্থায় পরীক্ষার খাতায় দুআ-দরুদ পড়ে ফুঁ দেওয়ার‌ মাধ্যমে বিদআত করে। এটি কুরআন ও হাদিসের দুআর অপব্যবহারের শামিল। এতে সে দ্বীন ও দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।

একজন পরীক্ষার্থীর উচিত, পরীক্ষার জন্য আগে থেকেই সঠিক পদ্ধতিতে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি আল্লাহর কাছে দুআ করা যেন, আল্লাহ তাকে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার তৌফিক দান করেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখেন, তার মেধা ও স্মৃতিশক্তিকে প্রখর করেন এবং পরীক্ষার খাতায় সঠিকভাবে লেখার শক্তি দেন। পরীক্ষা শেষেও আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারে যে, আল্লাহ যেন পরীক্ষকের অন্তর নরম করে দেন যেন, তিনি তার উত্তরপত্র দেখে খুশি হন এবং তাকে আশানুরূপ নাম্বার দেন।

কিন্তু পরীক্ষার খাতায় ভুল লিখে ভুল ঠিক করার জন্য পরীক্ষার খাতায় দুআ-দরুদ পাঠ করে ফুঁ দেওয়া নিতান্ত মূর্খতা সুলভ কাজ এবং কুরআন-হাদিসের দুআর অপব্যবহারের শামিল। এটিকে দুআর মধ্যে ‘বাড়াবাড়ি’ও বলা যায়।

প্রশ্ন-২: অনেককে দেখা যায়, পরীক্ষার আগে দুই রাকাত সালাত আদায় করে যেতে। তাই অনেকে প্রশ্ন করে পরীক্ষার আগে দুই রাকাত সালাত আদায় করে যাওয়া যাবে কি? এটা কি শরিয়ত সম্মত?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামে বিশেষভাবে পরীক্ষার আগে দু রাকাত নামাজ পড়ার কোনও নির্দেশনা আসেনি। তবে কুরআনে ধৈর্য এবং সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার কথা এসেছে। যেমন: আল্লাহ বলেন,
اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاةِ
“তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কারো।” [সূরা বাকারা: ৪৫] সুতরাং কেউ যদি আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা উদ্দেশ্যে পরীক্ষার পূর্বে দুই রাকাত সালাত আদায় করে এবং সেজদা রত অবস্থায় বা সালাম ফেরানোর পূর্বে আল্লাহর কাছে ভালোভাবে পরীক্ষা দেওয়ার তৌফিক কামনা করে এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য দোয়া করে তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই।
আল্লাহু আলম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।