পরিবারে থাকলে যদি ঈমানে সমস্যা মনে হয় তাহলে কি করব?

প্রশ্ন: গত ২ মাস ধরে অনেক ধরনের প্রশ্ন মাথায় এসেছে। সবচেয়ে বড় কিছু প্রশ্ন হল মেয়েদের পড়াশুনা নিয়ে, খাবার দাবার, ওষুধপত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রে শিরক নিয়ে আর পাক পবিত্রতা নিয়ে। আর হালাল হারাম খাদ্য নিয়েও প্রশ্ন আছে। আমার পরিবারের সদস্যদের ইসলামের জ্ঞান কম। পাক নাপাকি বিষয়ে সচেতন না আবার অজান্তে কুফরিও করে।তাদের সাথে থাকতে গেলে ইমানে সমস্যা মনে হতে থাকে। তাদেরকে যে বুঝাবো সে কথা তারা মানবে কিনা তাও জানি না। এমতাবস্থায় নামাজও পড়তে পারছি না। তাদের কাছে হয়ত মনে হয় আমি বাড়াবাড়ি করি। একজন বলে যে
এই ১৪ বছর বয়সেই পাক নাপাকির মাসায়ালা জানার দরকার নেই।কিন্তু আমি অনেক নিশ্চিত যে নাপাক আছে আমাদের ঘরে। কিন্তু আমি স্টুডেন্ট হওয়ায় তারা আমাকে কাজও করতে দেয় না। দুনিয়ার সাফল্যের জন্য শুধু পড়াশুনাটাই কি প্রধান কাজ?

আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে:
পরিবারে থাকলে যদি ঈমানে সমস্যা মনে হয় তাহলে কি করব? কথা কম বলতাম মাঝখানে, তারা আমাকে এসে বুঝায় যে তাদের সাথে কথা বললে মন ভাল হবে, বান্ধবীদের সাথে মিশতে। কিন্তু তাদের সাথে কথা বলতে গেলেই মনে হয় কুফর হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চুপচাপ থাকার কারনে তারা আমার কথাও শুনবে কিনা জানিনা।
এখন মনে হয় সব জায়গাতেই নাপাকি লেগে আছে, আগে অজ্ঞতাবশত, এখন জানা থাকার পরেও অপারগতার বা অলসতার দরুন। কাজের বুয়াকে দিয়ে কাপড় ধুয়ানো হয়। সে একজনের বাসা থেকে কাজ করে আসে, আমার জানামতে সেই বাসার মহিলা একজন পাক নাপাকি নিয়ে সচেতন না। আল্লাহ জানে।

এই অবস্থায় কি করব একটা পরামর্শ চাচ্ছি। আর কম কথা বলি তাদের সাথে, তাই ইসলাম বিষয়ক কোন কথা শুনতে চাবে কিনা জানিনা। এখন কি করব? তাদের কে ধীরে সুস্থে বুঝাতে গেলে তো কুফরের সম্ভাবনা থেকে যায়। আবার না বুঝালে যে সবসময়েই সমস্যা? এখন কি বাসা ছেড়ে দিব আমি? কিন্তু আমি যে মেয়ে।

উত্তর: আসসালামু আলাইকুম।

১) এগুলো সবই হচ্ছে আপনার কুধারণা। আপনার মধ্যে ওয়াসওয়াসা কাজ করছে। আমাদের জানামতে অনেকের মধ্যেই এ ধরনের খুঁত খুঁত ভাব থাকে। এমনি এমনি পাক-নাপাক নিয়ে ধারণা করতে থাকে। এমনি মনে করে এই বুঝি নাপাকী লেগে গেল, নাপাক হয়ে গেল। না, নাপাকী যতক্ষণ পর্যন্ত স্পষ্ট না দেখবেন ততক্ষণ পর্যন্ত নাপাক হয় না। সুধু যেকোনো জিনিসকে নাপাক বলে দেওয়া তারপর কথা বলতে এইগুলো কুফর। এগুলো সব ওয়াসওয়াসা। কথা বলতে কুফর হবে কেন? শুধু যে কথা বললেই কুফর হয়ে যাবে অথবা কাজের বুয়াকে দিয়ে কাপড় ধুয়ালে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে এগুলো আপনার মধ্যে ওয়াসওয়াসা কাজ করছে। এই ওয়াসওয়াসাকে দূর করতে হবে। স্পষ্ট যদি নাপাকী না লাগে তাহলে যে ব্যক্তিই কাপড় ধোয় না কেন নাপাকী লাগার সম্ভাবনা নাই ইন শাহ্ আল্লাহ।

২) ধীরে সুস্থে বোঝাতে গেলে কুফর হবে কেন। এটাও আপনার একটা কুধারণা। আপনার ভিতরে ওয়াসওয়াসা কাজ করতেছে, কুমন্ত্রণা কাজ করতেছে, সন্দেহ কাজ করতেছে। মনের মধ্যে থেকে সন্দেহ দূর করতে হবে, কুমন্ত্রণা দূর করতে হবে, ওয়াসওয়াসা দূর করতে হবে। কথা বললেই কুফর হয় এটা ঠিক নয়, মিশতে গেলেই কুফর হয় এটা ঠিক নয়। কম কথা বলেন ঠিক আছে। কিন্তু মানুষকে সত্য কথা বলতে হবে, ভালো কথা বলতে হবে। কিন্তু কারো সাথে কথা বললেই কুফর হয়ে যাবে। এটা আপনার ওয়াসওয়াসা। সুতরাং মানুষের সাথে মিশতে হবে, তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে হবে, তাদেরকে বুঝাতে হবে। আল্লাহ আপনাকে ধৈর্য দান করুন এবং মানুষকে বোঝানোর তৌফিক দান করুন। আমীন।

৩) বাসা ছাড়বেন কেন? এই ভুল আপনি করবেন না। আপনি বাসা ছেড়ে যাবেন কোথায়? বাসাতেই থাকতে হবে। বাসার মানুষের সাথে মিশতে হবে। আপনি সালাত আদায় করবেন, মানুষকে বুঝাবেন। আপনি ইবাদত করবেন, তাদেরকেও বুঝাবেন। কিন্তু বাসা ছেড়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করবেন না।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬

উত্তর দিয়েছেন:

শাইখ সাইফুল ইসলাম মাদানী।