পরপুরুষ, পরমহিলা, অমুসলিম ইত্যাদির নিকট কাপড় ধৌত করা, ইস্ত্রি করা বা সেলাই করা সংক্রান্ত শরঈ মাসায়েল

প্রশ্ন:
১. কাজের মহিলা যে বাসায় কাজ করে সেই বাসার পুরুষদের আন্ডারওয়্যার ধুতে পারবে কী?
২. কোনও মহিলা তার স্বামী-সন্তান ব্যতিরেকে তার শ্বশুর, দেবর-ভাসুর ইত্যাদি বাড়ির অন্যান্য পুরুষদের আন্ডারওয়্যার ধুতে পারবে কী?
৩: মহিলাদের জামা-কাপড়, শাড়ি, ব্লাউজ, বোরকা ইত্যাদি পোশাক আয়রন/ইস্ত্রি করার জন্য দোকানে দেওয়া জায়েজ হবে‌ কী?
৪. পাক অথবা নাপাক কাপড় বিধর্মী পরিচালিত লন্ড্রিতে ধৌত করতে দিলে তা কি পবিত্র হবে? অর্থাৎ সেই কাপড়ে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে কী?
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: নিম্নে উপরোক্ত প্রশ্ন সমূহের সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রদান করা হল:
وبالله التوفيق

প্রশ্ন ১. কাজের মহিলা যে বাসায় কাজ করে সেই বাসার পুরুষদের আন্ডারওয়্যার ধুতে পারবে কী?
উত্তর: কাজের মহিলা যে বাড়িতে কাজ করে সে বাড়ির কর্তা ও ছেলেদের আন্ডারওয়্যার ধৌত করতে পারে। এতে কোনও বাধা নেই। তবে যদি আন্ডার ওয়্যারে বীর্য দৃশ্যমান থাকে তাহলে যারা তা ব্যবহার করে তাদের উচিৎ, সে অবস্থায় কাজের মহিলাকে ধোয়ার জন্য না দেয়া বরং তাদের উচিৎ, বীর্য লেগে শুকিয়ে গেলে তা আঙ্গুল দ্বারা ঘষে ফেলা বা ঐ অংশটুকু পানি দ্বারা পরিষ্কার করে নেওয়া। কারণ এটি স্বভাবত: একজন নারীর জন্য লজ্জাবোধের কারণ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হাম্মাম ইবনে হারিস রাহ. বর্ণনা করেন যে,
ضَافَ عَائِشَةَ ضَيْفٌ فَأَمَرَتْ لَهُ بِمِلْحَفَةٍ صَفْرَاءَ فَنَامَ فِيهَا فَاحْتَلَمَ فَاسْتَحْيَا أَنْ يُرْسِلَ بِهَا وَبِهَا أَثَرُ الاِحْتِلاَمِ فَغَمَسَهَا فِي الْمَاءِ ثُمَّ أَرْسَلَ بِهَا فَقَالَتْ عَائِشَةُ لِمَ أَفْسَدَ عَلَيْنَا ثَوْبَنَا إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيهِ أَنْ يَفْرُكَهُ بِأَصَابِعِهِ وَرُبَّمَا فَرَكْتُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِأَصَابِعِي ‏
একবার আয়েশা রা. এর কাছে একজন মেহমান আগমণ করলো। তিনি তাকে একটি হলুদ রঙ্গের চাদরে বিশ্রাম করতে দিলেন। উক্ত মেহমান তা গায়ে জাড়িয়ে ঘুমালেন। কিন্তু ঘুমের মধ্যে তার স্বপ্নদোষ হলে বীর্যের দাগসহ চাদরটি আয়েশা রা.-এর কাছে ফেরত পাঠাতে তার খুব লজ্জাবোধ হল। তাই এটি পানিতে চুবিয়ে ধুয়ে তিনি তা ফেরত পাঠালেন। আয়েশা রা. তা দেখে বললেন, সে আমাদের কাপড়টা নষ্ট করল কেন? আঙ্গুল দিয়ে তা ঘষে ফেললেই তো যথেষ্ট হতো। অনেক দিনই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাপড় থেকে আমি তা অঙ্গুল দিয়ে রগড়ে ঘষে সাফ করে দিয়েছি।” [ইবনে মাজাহ ৫৩৮, মুসলিম, তিরমিযি হা/১১৬-আল মাদানি প্রকাশনী]

প্রশ্ন ২. কোনও মহিলা কি তার স্বামী-সন্তান ছাড়া শ্বশুর, দেবর, ভাসুর ইত্যাদি বাড়ির অন্যান্য পুরুষদের আন্ডারওয়্যার ধুতে পারবে কী?
উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে একজন স্ত্রীর জন্য তার স্বামী ছাড়া স্বামীর বাবা (শ্বশুর), ভাই (দেবর-ভাসুর) ইত্যাদি লোকজনের বিভিন্ন ধরণের সেবা করা, কাপড় ধৌত করা ইত্যাদি আবশ্যক না হলেও এটি আমাদের সমাজের প্রচলিত রীতি। অর্থাৎ আমাদের সমাজে যৌথ পরিবারে সাধারণত বৌরাই বাড়ির সকল সদস্যের জামা-কাপড় ধৌত করে থাকে।
তাই স্বামী যদি এতে অনুমতি বা নির্দেশ দেয় তাহলে স্ত্রী তার স্বামী-সন্তান ছাড়া পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাপড়-চোপড়ও ধৌত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে অন্য পুরুষদের আন্ডার ওয়্যারও ধৌত করতে পারে যদি ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকে। কিন্তু স্বামী ব্যতিরেকে অন্য কোন পুরুষের আন্ডারওয়ার ধৌত করার বিষয়টি সামাজিকভাবে ঘৃণিত এবং আত্মমর্যাদা পরিপন্থী কাজ। তাই কোন মহিলাকে এই দায়িত্ব দেওয়া অনুচিত। অবশ্য বর্তমান আধুনিক যুগে ওয়াশিং মেশিনের সাহায্যে কাপড় ধৌত করা হলে এ ক্ষেত্রে সমস্যা আরও কমে যায় আল হামদুলিল্লাহ।

প্রশ্ন ৩. মহিলাদের জামা-কাপড়, শাড়ি, ব্লাউজ, বোরকা ইত্যাদি পোশাক আয়রন/ইস্ত্রি করার জন্য দোকানে দেওয়া জায়েজ হবে কী?
উত্তর: মহিলাদের ব্যবহৃত পোশাক প্রয়োজনবোধে ধৌত ও ইস্ত্রি করার উদ্দেশ্যে পুরুষ পরিচালিত লন্ড্রিতে বা ছেঁড়া-ফাটা কাপড় সেলাই করার উদ্দেশ্যে পুরুষ দর্জির দোকানে দিতে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। কেননা ইসলামি শরিয়তে এমন কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কোনও নারী যদি ব্যক্তিগত আত্মমর্যাদার কারণে তার ব্যবহৃত পোশাক কোন পুরুষকে দেখাতে না চায় তাহলে তা‌ ধৌত করা, ইস্ত্রি/আইরন করা বা প্রয়োজনীয় সেলাইয়ের কাজ সম্ভব হলে কোন নারীর মাধ্যমে সম্পন্ন করবে অথবা নিজেই করবে।

প্রশ্ন ৪. পাক অথবা নাপাক কাপড় বিধর্মী পরিচালিত লন্ড্রিতে ধৌত করতে দিলে কি তা পবিত্র হবে? অর্থাৎ সেই কাপড়ে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে কি?
উত্তর: কোন অমুসলিমও যদি পাক পানি দ্বারা ভালোভাবে কাপড় ধৌত করে তাহলে তা পাক হবে। পক্ষান্তরে কোন মুসলিমও যদি নাপাক পানি দ্বারা কাপড় ধৌত করে তাহলে তা পাক হবে না। মোটকথা, কোন পানি দ্বারা কাপড় ধৌত করা হয় সেটাই ধর্তব্য। যে ধৌত করল সে মুসলিম কি না তা ধর্তব্য নয়। উল্লেখ্য যে, অমুসলিমরা ঈমান না থাকার কারণে বিধানগতভাবে নাপাক হলেও বাহ্যিকভাবে তাদের শরীর নাপাক নয় যদি তারা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। সুতরাং তাদের সেলাই কৃত পোশাক-আশাক এবং তাদের তৈরি কৃত আসবাবপত্র ব্যবহার করা নাজায়েজ নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবিগণ তৎকালীন দামেশক (সিরিয়া) ও ইয়েমেন থেকে আমদানিকৃত অমুসলিমদের তৈরি কৃত পোশাক-আশাক এবং আসবাব সামগ্রী ব্যবহার করতেন। আল্লাহু আলাম।▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।