নির্বাচনে ভোট কালেকশন এর উদ্দেশ্যে ইফতার পার্টি করা

প্রশ্ন: রমজানের ইফতার পার্টি যদি হয় ভোট কালেকশন এর উদ্দেশ্যে তাহলে সওয়াব হবে কি?
উত্তর:
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্যে রোজাদারদেরকে ইফতার করালে কোনও সওয়াব তো হবেই না বরং তা আমল নামায় ‘ছোট শিরক’ হিসেবে গুনাহ লেখা হবে। কেননা আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই সকল প্রকার এবাদত-বন্দেগি করতে নির্দেশিত। যেমন:

◾ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّـهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ
“তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে।” (সূরা আল বাইয়েনাত: ৫)

◾ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللَّهُ بِهِ
“যে ব্যক্তি খ্যাতি অর্জনের জন্য কোন কাজ করে, আল্লাহ তাআলা তার দোষ-ক্রটিকে লোক সমাজে প্রকাশ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য কোন কাজ করে, আল্লাহ তা’আলাও তার সাথে লোক দেখানোর আচরণ করবেন (প্রকৃত সাওয়াব হতে সে বঞ্চিত থাকবে)।” [বুখারি ও মুসলিম]

◾ তিনি আরও বলেন,
«إِنَّمَا الأعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ»
“সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” (সহিহ বুখারি)
হাদিসের ভাষায় এটিকে রিয়া বলা হয়। আল্লাহ

◾ মাহমুদ ইবনে লাবিদ রা. বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ», قَالُوا: وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ: «الرِّيَاءُ، يَقُولُ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ – إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمْ-: اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً »

“আমি তোমাদের ওপর যা ভয় করি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে শিরকে আসগর (ছোট শিরক)। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল শিরকে আসগর কি? তিনি বললেন: “রিয়া (লোক দেখানো আমল)। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাদেরকে (রিয়াকারীদের) বলবেন, যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেয়া হবে: তোমরা তাদের কাছে যাও যাদেরকে তোমরা দুনিয়াতে দেখাতে, দেখ তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কি না”। [মুসনাদে আহমদ- হাদিসটি সহিহ]

◾ রিয়া বা লোক দেখানো আমল হলো শিরক। আর তাআলা রিয়া পূর্ণ আমলকে যেমন প্রত্যাখ্যান করবেন তেমনি রিয়া কারীকেও প্রত্যাখ্যান করবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন (হাদিসে কুদসি):
مَنْ عمِلَ عملًا أشركَ فيه معِيَ تركتُهُ وشِركَهُ

“যে ব্যক্তি কোন একটি আমল করল এবং তাতে সে আমার সাথে অন্য কাউকে শরিক করল (অর্থাৎ কাউকে খুশি করার, প্রশংসা করার বা দুনিয়ার কোনও স্বার্থ লোভে তা সম্পাদন করল) আমি তাকে ও তার আমলকে প্রত্যাখ্যান করি।” [সহিহ মুসলিম]

সুতরাং যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজাদারদেরকে ইফতার করাবে সে প্রত্যেক রোজাদেরর বিনিময়ে সমপরিমাণ সওয়াব অর্জন করবে। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَن فَطَّر صائمًا كُتِب له مِثلُ أجْرِه، إلَّا أنَّه لا يَنقُصُ مِن أجْرِ الصائمِ شَيءٌ
“যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে (রোজাদারের) সমান নেকির অধিকারী হবে। আর তাতে রোজাদারের নেকীর কিছুই কমবে না।” [সহিহ তিরমিযি/৮০৭]

আর যে ব্যক্তি নির্বাচনে জেতা, পরিচিতি অর্জন, মানুষের প্রশংসা ও বাহবা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে বা দুনিয়াবি কোনও স্বার্থে রোজাদারকে ইফতার করাবে তার সওসয়াব অর্জন তো দূরে থাক বরং তা শিরকে আসগর (ছোট শিরক) হিসেবে তার আমলনামায় গুনাহ লেখা হবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন)।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমাদের ইবাদত-বন্দেগিগুলো সর্বপ্রকার দুনিয়াবি স্বার্থ ও মোহমুক্ত করে কেবল তার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে সম্পাদন করার তওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।