নিজ গৃহে প্রবেশের দুআ ও আদব এবং দুআ পাঠ করতে ভুলে গেলে করণীয়

প্রশ্ন: নিজের বাড়িতে প্রবেশের সময় কোন দুআ পাঠ করতে হয় এবং তা ভুলে গেলে কী করণীয়?

উত্তর: 
নিম্নে নিজ গৃহে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার গুরুত্ব, অন্যান্য আদব ও দুআ পাঠ করতে ভূলে গেলে কী করণীয় তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:

🌀 ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ বা আল্লাহর কথা স্বরণ করার গুরুত্ব:
আমাদের জানা দরকার যে, ঘরে প্রবেশকালে কেউ আল্লাহকে স্মরণ না করলে সেই ঘরে শয়তান রাত যাপন করে। যেমন নিম্নোক্ত হাদীসটি:
عَنْ جَابِرٍ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ‏:‏ إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ، فَذَكَرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ عِنْدَ دُخُولِهِ، وَعِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ‏:‏ لاَ مَبِيتَ لَكُمْ وَلاَ عَشَاءَ، وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ دُخُولِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ‏:‏ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ، وَإِنْ لَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ‏:‏ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ কোন লোক তার ঘরে প্রবেশকালে এবং তার আহার গ্রহণকালে মহামহিম আল্লাহকে স্মরণ করলে, শয়তান (তার সাঙ্গপাঙ্গকে) বলে, তোমরা রাত যাপনের স্থান ও রাতের আহার থেকে বঞ্চিত হলে। সে তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমরা রাত কাটানোর জায়গা পেয়ে গেলে। সে তার আহার গ্রহণকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাত কাটানোর জায়গা এবং রাতের আহার উভয়ের ব্যবস্থা হয়ে গেলো।” (মুসলিম, হাকিম, ইবনে হিব্বান, আবু আওয়ানা)

🌀 ঘরে প্রবেশের সময় কোন দুআ বা যিকির পাঠ করতে হয়?

এ ক্ষেত্রে হাদীসে সাধারণভাবে আল্লাহর যিকির পাঠের কথা বর্ণিত হয়েছে (যেমন উপরোক্ত হাদীসটি)। সুতরাং এ জন্য বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নামে) পাঠ করাই যথেষ্ট।
তবে এ মর্মে হাদীসে আরেকটি বিশেষ দুআ পাওয়া যায় কিন্তু তা সহীহ না কি যঈফ সে ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের মতে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়।

 এ সংক্রান্ত হাদীসটি হল: আবূ মালিক আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছে: যখন কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ করে, তখন সে যেন বলেঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا‏‏
“হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার কাছে ঘরে প্রবেশ ও ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে ঘরে প্রবেশ করছি এবং আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছি। আমি আল্লাহ্‌র উপর, যিনি আমাদের রব তাঁর ভরসা করছি।”
এরপর সে যেন তার পরিবার-পরিজনদের উপর সালাম করে।”
(সূনান আবু দাউদ, হাদিস নম্বরঃ [5008] অধ্যায়ঃ ৩৭/ নিদ্রা সম্পর্কীয় (كتاب النوم)

 হাদীসটির মান:

এ হাদীসটির ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন। যথা:
– ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, এর সনদ হাসান।
– ইবনুল মুফলিহ (আল আদাব আশ শারয়িআহ গ্রন্থে) বলেন, হাসান।
– বিন বায মাজমু ফতোয়া কিতাবে বলেন, হাসান। অর্থাৎ এটি গ্রহনযোগ্য হাদীস।

– পক্ষান্তরে আল মুনাবী বলেন, এ হাদীসটি যঈফ বা দুর্বল। কেননা, এর বর্ণনাসূত্রে ইসমাঈল বিন আইয়াশ রয়েছে-এই পিতা-পূত্র দুজনের ব্যাপারেই মুহাদ্দিসদের আপত্তি রয়েছে।
– শাইখ আলবানীও এটিকে সিলসিলা যঈফা সহ বহু কিতাবে যঈফ বা দুর্বল বলেছেন। কারণ হিসেবে বলেন, এর সনদটি মুনকাতি বা বিচ্ছন্ন।

যাহোক, যেহেতু হাদীসটি সহীহ-যঈফ হিসেবে দ্বিমত রয়েছে সেহতেু কেউ যদি তা পাঠ করে তাহলেও কোন আপত্তি নাই। তবে কেউ যদি তা না পড়ে কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ঘরে প্রবেশ করে তাহলেও যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।

🔰 ঘরে প্রবেশের সময় সালাম প্রদান করা বরকতের কারণ:

ঘরে প্রবেশের সময় সালাম প্রদান করা সুন্নত এবং তা বরকতের কারণ। যেমন নিম্নোক্ত হাদীসটি:
আনাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেন:
يَا بُنَيَّ، إِذَا دَخَلْتَ عَلَى أهْلِكَ، فَسَلِّمْ، يَكُنْ بَرَكَةً عَلَيْكَ، وَعَلَى أهْلِ بَيْتِكَ
“হে বৎস, তুমি যখন তোমার পরিবারের নিকট প্রবেশ করবে তখন সালাম দাও তাহলে এতে তোমার এবং তোমার পরিবারের জন্য বরকত হবে।” (তিরমিযী, হাসান-সহীহ)
উল্লখ্য যে, মানুষ শুণ্য ঘরে প্রবেশের সময়ও সালাম প্রদান করা সুন্নত।

🔰 কেউ যদি ঘরে প্রবেশের সময় বিসমিল্লাহ বা দুআ পাঠ করতে ভুলে যায় তাহলে কী করণীয়?

কেউ যদি ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর যিকির (বিসমিল্লাহ) বা বিশেষ দুআটি পাঠ করতে ভুলে যায় তাহলে তার বিকল্প হিসেবে আলাদা কোন দুআ হাদীসে বর্ণিত হয় নি। সুতরাং এ ক্ষেত্রে তার কারণীয় হল, ঘরে প্রবেশের পর অন্যান্য কাজের সময় বর্ণিত দুআগুলো পাঠ করা। যেমন, জামা খোলার সময় বিসমিল্লাহ, টয়লেটে প্রবেশ ও টয়লেট থেকে বের হওয়ার দুআ পাঠ করা, খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ, স্ত্রী সহবাসের দুআ, ঘুমের দুআ ইত্যাদি পাঠ করা, ঘরে নফল ও সুন্নত সালাতগুলো আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা (বিশেষ করে সূরা বাকারা), ঘর থেকে গানবাজনা ও শয়তানকে খুশি করে এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা। তাহলে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।

▬▬▬●●●▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।