নিজের জন্মদাতা বাবা/মা ছাড়া অন্য কাউকে বাবা/মা বলা জায়েজ আছে কি

প্রশ্ন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ” যে ব্যক্তি আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে মেনে নেয় অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।” [সহীহ মুসলিম হাদিস নং- ১২৩]
এখন আমরা যারা শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা বলি তাদের ক্ষেত্রেও এই হাদিসটি প্রযোজ্য হবে?
উত্তর:
শ্বশুরকে ‘বাবা’ আর শাশুড়িকে ‘মা’ বলা আমাদের সমাজের একটি বহুল প্রচলিত রীতি। আবার অনেক সময় শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, আলেম, মুরব্বী, বয়স্ক ব্যক্তি, শিক্ষক, সম্মানিত নেতা ইত্যাদি ব্যক্তিকে ‘পিতা’ বা ’বাবা’ বলা হয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি নাজায়েজ নয়। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই তা বলা হয়।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীদেরকে আমাদের মা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যদিও তারা আমাদের জন্মদাত্রী মা নয় এবং ইবরাহীম আ. কে আমাদের পিতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যদিও তিনি আমাদের জন্মদাতা পিতা নয়।
অনুরূপভাবে ছোটদের প্রতি স্নেহ ও মমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে ‘ছেলে’ বা বৎস বলাও প্রচলিত রয়েছে। এটিও দূষণীয় নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনাস রা. কে বলেন,
يا بُنيِّ إذا دخلت على أهلك فسلم
“হে আমার বৎস, তুমি বাড়িতে প্রবেশ করলে বাড়ির লোকদেরকে সালাম দিবে।” [সহীহ মুসলিম]

❑ প্রশ্নে উল্লেখিত হাদিসটির ব্যাখ্যা:

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ” যে ব্যক্তি আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে মেনে নেয় অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম। “। [সহীহ মুসলিম হাদিস নং- ১২৩]
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: “যে ব্যক্তি আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে মেনে নেয় অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ১২৩]

উক্ত হাদিস দ্বয়ের অর্থ হল, যে ব্যক্তি নিজের জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা হিসেবে মেনে নেয় বা অন্য কারও সাথে জন্মগত সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠার দাবী করে তার জন্য জান্নাত হারাম। যেমন অন্য হাদিসের ভাষায়:
مَنِ ادَّعى إِلى غَيْرِ أَبيهِ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبيهِ فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرامٌ
“যে ব্যক্তি জেনে-শুনে নিজের পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা হিসেবে দাবী করে তার জন্য জান্নাত হারাম।” [বুখারি ও মুসলিম] অন্য বর্ণনায় এসেছে, সে কুফরি করবে। কেননা, তখন এতে নানা ধরণের বিধি-বিধান জড়িয়ে যাবে। যেমন, বৈবাহিক সম্পর্কিত হালাল-হারাম, পর্দা, উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ বণ্টন, ভরণ-পোষণ ইত্যাদি। আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
[লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ]
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব।।