নারীকে শুধু স্বামীর সেবা সম্মান ও বাচ্চা প্রসবের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে কথাটি সঠিক নয়

প্রশ্ন: জনৈক বক্তা বলেছেন, “নারীকে শুধু স্বামীর সেবা-সম্মান ও বাচ্চা প্রসবের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।” এ কথা কি সঠিক?
উত্তর:
আমার জানামতে কুরআন-সুন্নাহয় এমন কোনও বক্তব্য নেই। এটি বক্তার নিজস্ব মতামত মাত্র। আর মানুষের মতামত ভুল-শুদ্ধ উভয়টি হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। কোনও মানুষই ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। আমাদের কর্তব্য, সঠিকটা গ্রহণ করা এবং ভুলটা প্রত্যাখ্যান করা।

বাস্তবে উপরোক্ত কথাটি কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী। হ্যাঁ, নারীর বিয়ে হলে স্বামীর হক আদায় করবে, বৈধ কাজে তার আনুগত্য করবে, যথাসাধ্য তার সেবা-শুশ্রূষা করবে এবং হালাল‌ মিলনের মাধ্যমে সন্তান গ্রহণ করবে। এগুলো নারীদের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু এগুলোই তাদেরকে সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বরং সঠিক কথা হল, আল্লাহ তাআলা সকল মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছেন কেবল তার ইবাদত করার উদ্দেশ্যে; অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
“আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।” [সূরা যারিয়াত: ৫৬]

আর বিয়ে-শাদি, দাম্পত্য, পরিবার গঠন ইত্যাদি ইসলামি শরিয়তের একটি অংশ মাত্র। কেউ যদি চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জন এবং সন্তান গ্রহণের মাধ্যমে আল্লাহর জমিনকে আবাদ করার উদ্দেশ্যে বিয়ে করে তাহলে এতে সে সওয়াব অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ।

কিন্তু কোনও নারী যদি জীবনেও বিয়ে না করে অথবা বিয়ে করার পর বিশেষ কোনও কারণে সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকে কিন্তু তাওহীদ ও সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করে তাহলেও সে আখিরাতে মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু বিনা কারণে বিয়ে না করার ফলে যদি সে পাপাচারে লিপ্ত হয় অথবা বিনা দরকারে স্থায়ীভাবে সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকে তাহলে গুনাহগার হবে। সে জন্য তওবা করা জরুরি। কিন্তু বিয়ের চেষ্টা থাকার পরও কোনও কারণে বিয়ে করতে না পারলেও অথবা সন্তান-সন্ততি না হলে সে গুনাহ থেকে রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ।

সুতরাং এখান থেকে প্রমাণিত হয়, উপরোক্ত বক্তব্য সঠিক নয়।

তবে বর্তমানে বহু নারী যেভাবে স্বামী, সংসার ও পরিবার ছেড়ে পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে হালাল-হারামের তোয়াক্কা না করে চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থ উপার্জনে নেমে পড়েছে তা অবশ্যই শরিয়ত সম্মত নয়। অবশ্য শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে এবং ফেতনা থেকে দূরে থেকে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে তাদের চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থ উপার্জন করা অবৈধ নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগেও নারীরা ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। (এ বিষয়ে অচিরেই আলাদা পোস্ট দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।)

পরিশেষে বলব, আলেমদের কথাবার্তা ও ভাষা প্রয়োগে আরও সংযত ও সচেতন হওয়া উচিত। যেন তাদের কোনও কথার ফাঁক দিয়ে অমুসলিম, নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি করার সুযোগ না পায়।আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল-