নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ‘সালাত ও সালাম’ এর অর্থ কি এবং সবচেয়ে উত্তম ও সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত দরুদ কোনটি?

প্রশ্ন: ক. সূরা আহযাব এর ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন: “আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করো।” এ কথাটার অর্থ কি?
খ. সব চেয়ে ছোটো দরুদ কোনটি যা সব সময় পড়া আমাদের জন্য সহজ হবে?

উত্তর :
 সালাত ও সালামের অর্থ:
আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللَّـهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
“নিশ্চয় আল্লাহ ও ফিরিশতাগণ নবীর প্রতি সলাত পেশ করে। হে ঈমানদারগণ, তোমরা তার প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করো।” (সূরা আহযাব: ৫৬)

শাব্দিক দৃষ্টিকোন থেকে সালাত অর্থ রহমত আর সালাম অর্থ শান্তি ও নিরাপত্তা।

 নবীর প্রতি সালাম এর অর্থ তাঁর জীবদ্বশায় তার শারীরিকভাবে সুস্থতা, দ্বীনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, কবরে শান্তি এবং আখিরাতে মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করা।

 আর তার প্রতি সালাতের অর্থের ব্যাপারে দুটি মত পাওয়া যায়। যথা:
১) একদল আলিমের মতে:
🔶 আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর প্রতি সালাত পেশ করার অর্থ হল, তার প্রতি রহমত বর্ষণ করা
🔶 ফেরেশতামণ্ডলীর পক্ষ থেকে এর অর্থ: আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা।
🔶 আর মানবমণ্ডলীর পক্ষ থেকে এর অর্থ হল, (রহমত বর্ষণ ও ক্ষমার জন্য) আল্লাহর নিকট দুয়া করা।

তবে অন্য আলেমগণ এর ভিন্ন একটি অর্থ বলেছেন। তা হল,

🔶 আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর প্রতি সালাত অর্থ, নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাদের উচ্চ পরিষদে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশংসা করা
🔶 আর ফেরেশতা ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে এর অর্থ হল, দুয়া করা। অর্থাৎ এই দুয়া করা যে, আল্লাহ তাআলা যেন নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাদের দ্বারা গঠিত উচ্চ পরিষদে তাঁর নবীর প্রশংসা করেন। (এই মত ব্যক্ত করেছেন পূর্ববর্তীদের থেকে আবুল আলিয়া আর পরবর্তীদের থেকে ইবনুল কায়্যেম, আল্লামা উসাইমীন প্রমুখ)

 সবচেয়ে উত্তম দরুদ:

সবচেয়ে উত্তম দরুদ হল দরুদে ইবরাহীম। যেমন, ইমাম বুখারী রহ. কা’ব ইবনে উযরাহ রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা তো আপনাকে সালাম করতে জানি কিন্তু আপনার উপর সালাত বা দুরুদ পাঠাব কিভাবে? তখন তিনি সাহাবীদের সালাত বা দরুদ শিক্ষা দিলেন এভাবে:*
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া’আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া’আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া’আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া’আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”। (বুখারী, মিশকাত পৃঃ ৮৬, হা/৯১৯)

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেভাবে আপনি ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার বংশধরদের উপর বরকত নাজিল করুন, যেভাবে ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরদের উপর বরকত নাজিল করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।””

 সংক্ষিপ্ত দরুদ:

(আমার জানা মতে) একসাথে একই বাক্যের মধ্যে সালাত ও সালাম উভয়টি উল্লেখিত হয়েছে এমন কোন হাদীস বর্ণিত হয় নি। কিন্তু পূর্বসূরীগণ একসাথে বিভিন্ন বাক্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করেছেন। যেমন, তারা এভাবে বলেছেন: “সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” অথবা “আসসালাতু আস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ” ইত্যাদি। সুতরাং একসাথে আমরাও এভাবে বলতে পারি। ইনশাআল্লাহ এতে কোন সমস্যা নেই।
▬▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।