নবদম্পতির মাঝে মিল-মোহাব্বত সৃষ্টির ১০ উপায়

প্রশ্ন: নব দম্পতির মাঝে বনিবনা না হলে কী করণীয়? তারা কি একে অপরকে বুঝার জন্য কিছু দিনের জন্য আলাদা থাকতে পারে? শরিয়ত এ ব্যাপারে কী
বলে?

উত্তর:
বিয়ের পর নবদম্পতির মাঝে বনিবনা বা মিলমিশ না হলে একে অপরকে বুঝার উদ্দেশ্যে দূরে থাকা কোনো সমাধান নয়। এতে সমস্যা কমার পরিবর্তে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি আছে।
যাহোক তাহলে এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে:

১) স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে কথা বলা, আলোচনা করা। কথা বলার মাধ্যমেই অধিকাংশ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
২) একে অপরের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত হক বা অধিকার আদায় করা। এই অধিকারের দিকে মনোযোগ না দিলে মনমালিন্য সৃষ্টি হতে পারে।
৩) একে অপরকে বুঝতে কিছুটা সময় নেয়া। তাড়াহুড়া করা ঠিক নয়। এ জন্য দুজনের আলাদা থাকা জরুরি নয়।
অবশ্য যদি তারা একান্তই কয়দিনের জন্য দূরে থাকতে চায় তাহলে থাকতে পারে। কিন্তু সেটা যেন দীর্ঘ সময় না হয়ে যায়।
৪) নবদম্পতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তারা একে অপরকে সুখী করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এ জন্য কথার ফাঁকে ফাঁকে ও আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে অপরেরে ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়গুলো বুঝে নেয়ার চেষ্টা করবে এবং সেভাবে কাজ করবে।
৫) সঙ্গীর মধ্যে ছোটখাটো দোষত্রুটি থাকলেও সেগুলোর জন্য রাগারাগি করবে না বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মেনে নিবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে কেউ পরিপূর্ণ নয়। কেউ দোষত্রুটি থেকে মুক্ত নয়। এ দুনিয়ার জীবনে সব কিছু ইচ্ছেমত পাওয়া সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ ত্রুটি মুক্ত ও ইচ্ছামত সব কিছু পাওয়া যাবে একমাত্র জান্নাতে।
৬) সঙ্গীর মধ্যে দোষত্রুটি থাকলে যথাসম্ভব ধৈর্য ও সহনশীলতা সহকারে নিজেরাই সংশোধন করার চেষ্টা করবে। এ সব বিষয় বাইরে প্রকাশ করা উচিৎ নয়।
৬) মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে সব পরিবারে কিছু না কিছু সমস্যা আছে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এসব সমস্যা যেন দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি কেড়ে নেয়ার কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সে জন্য এগুলোকে বড় করে দেখার প্রয়োজন নাই।
৭) দাম্পত্য জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য তৃতীয় পক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে দেয়া মানে সমস্যা বৃদ্ধি করা। সুতরাং নিজেদের সমস্যাগুলো বাবা, মা, ভাই, বোন, চাচা, মামা কাউকেই বলা ঠিক নয়।
তবে নিজেরা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হলে তখন এমন অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেয়া উচিৎ যে, সমাধান দিতে পারবে বলে আশা করা যায়।
৮) তারা যে, বিয়ে করতে পেরেছে এ জন্য আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা কর্তব্য। এ কৃতজ্ঞতা বোধ দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করতে সাহায্য করবে।
৯) স্বামী বা স্ত্রীর শারীরিক সক্ষমতা বিষয়ক কোনো সমস্যা থাকলে দ্রুত ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সঙ্গীর প্রতি সহানুভূতিশীল হবে এবং তাকে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে তাড়াহুড়া করা উচিৎ নয়।
১০) সর্বোপরি দাম্পত্য জীবনকে সুখময় ও সমস্যা মুক্ত করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে দুআ করা।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি দাম্পত্য জীবনকে সুখ-শান্তি দ্বারা ভরে দিন। সকলের প্রতি বর্ষণ করুন তার অবারিত রহমত ও কল্যাণের বারিধারা।
আল্লাহুম্মা আমীন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬💙▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।