নবজাতক শিশুর উপহার-সামগ্রী, টাকা-পয়সা ইত্যাদি পিতামাতা ইচ্ছামত খরচ বা ব্যবহার করতে পারে কি?

প্রশ্ন: অনেক সময় আত্মীয়-স্বজন আমাদের ছোট্ট বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন উপহার-সামগ্রী বা টাকা দেয়। প্রশ্ন হল, ওই টাকা বাচ্চার বাবা নিজ ইচ্ছেমত খরচ করতে পারবে কি না?

উত্তর:

◈◈ প্রথমত: জানা দরকার যে, আল্লাহ তাআলা পিতাকে বিশেষ প্রয়োজন সাপেক্ষে সন্তানদের সম্পদ নেয়ার অধিকার দিয়েছেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে,
أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ لِيْ مَالاً وَوَلَدًا وَإِنَّ وَالِدِيْ يَحْتَاجُ مَالِيْ قَالَ أَنْتَ وَمَالُكَ لِوَالِدِكَ إِنَّ أَوْلَادَكُمْ مِنْ أَطْيَبِ كَسْبِكُمْ، فَكُلُوْا مِنْ كَسْبِ أَوْلَادِكُمْ،
“এক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার সম্পদ ও সন্তান আছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী।
তিনি বললেন, “তুমি ও তোমার সম্পদ উভয়ই তোমার পিতার। তোমাদের সন্তান তোমাদের জন্য সর্বোত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তোমাদের সন্তানের উপার্জন থেকে খাও।” [আবু দাউদ হা/৩৫৩০; ইবনে মাজাহ, হা/২২৯২, সনদ সহিহ]

শাইখ আলবানি বলেন,
وإنما يأخذ ما هو بحاجة إليه
“পিতা যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু তার সম্পদ নিতে পারে।” [আল ইরওয়া, ৮৩৮]

◈◈ ২য়ত: নবজাতক শিশুর টাকা-পয়সা ও উপহার-সামগ্রী পিতামাতা ব্যবহার বা খরচ করতে পারে কি না?

ছোট বাচ্চারা আত্মীয়স্বজন এবং বিভিন্নজন থেকে যেসকল অর্থ ও উপহার-সামগ্রী পায় পিতা যদি আর্থিক অস্বচ্ছলতার দরুন সেগুলো ব্যবহার বা খরচ করতে চায় তাহলে তার জন্য যতটুুক প্রয়োজন ততটুকু নেয়া জায়েজ আছে। তবে প্রয়োজন না হলে বা প্রয়োজন অতিরিক্ত না নেয়াই ভালো। কেননা এসব উপহারের প্রতি শিশুদের মন লেগে থাকে।
হ্যাঁ, প্রয়োজনবোধে পিতা যদি তা ব্যবহার করেও তবে পরবর্তীতে সামর্থ্য হলে তাকে তা ফেরত দেয়ার চেষ্টা করবে। আর মা তা নিতে পারবে কি না তা দ্বিমত পূর্ণ।

✪ আল্লামা শাইখ উসাইমিন রাহ. বলেন,
الهدايا التي يهدى للمولود أول ما يولد هي ملك له ، والأم ليس لها ولاية على ولدها مع وجود أبيه ، وعلى هذا فلا يحل لها أن تتصرف فيها إلا بإذن أبيه ، فإذا أذن فلا بأس ، وسواء كان المولود بنتا أو ابنا الحق في المال للأب لا للأم ” .
انتهى من ” مجموع فتاوى ورسائل العثيمين ” (25/211).
“নবজাতক শিশু জন্মের পর যে সকল উপহার-সামগ্রী পায় সেগুলোর মালিক সেই। আর বাবা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় মা সন্তানের অভিভাবক নয়। সুতরাং বাবার অনুমতি ছাড়া মা’র জন্য সেগুলো ইচ্ছামত ব্যবহার করা বৈধ নয়। তবে অনুমতি দিলে কোনও আপত্তি নাই।
সুতরাং নবজাতক শিশু-ছেলে হোক বা মেয়ে হোক-তার সম্পদে পিতার হক রয়েছে; মায়ের নয়।” [মাজমু ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল-উসায়মিন ২৫/২১১]

✪ পক্ষান্তরে অন্য আলেমগণ বলেন, মা বাবার মতই। অর্থাৎ বাবা যেমন প্রয়োজনে সন্তানের সম্পদ ব্যবহার করতে পারে তেমনি মাও করতে পারে।

قال جابر بن عبد الله رضي الله عنه : ” يَأْخُذُ الْأَبُ وَالْأُمُّ مِنْ مَالِ وَلَدِهِمَا بِغَيْرِ إذْنِهِ ، وَلَا يَأْخُذُ الِابْنُ وَالِابْنَةُ مِنْ مَالِ أَبَوَيْهِمَا بِغَيْرِ إذْنِهِمَا ” رواه ابن حزم في “المحلى” (6/ 385) ، وصححه.
জাবের রা. বলেন, “বাবা ও মা তাদের সন্তানের সম্পদ তার অনুমতি ছাড়াই নিতে পারে। কিন্তু ছেলে বা মেয়ে পিতামাতার সম্পদ তাদের অনুমতি ছাড়া নিতে পারবে না।” [আল মুহাল্লা ৬/৩৪৫]

শাইখ সালেহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,

” وهذا في حق الأب لا شك فيه ، وكذلك في حقّ الأم ؛ لأنها كالأب على الصحيح ؛ تأخذ من مال ولدها ما تنتفع به ، وتسد به حاجتها ؛ ما لم يكن بذلك إضرار على الولد ، أو أن تتعلق به حاجة الولد ، والله تعالى أعلم ” انتهى من ” المنتقى “.
وجواز أخذ الأب من مال ولده له شروط سبق بيانها في جواب السؤال : (9594)

“এতে পিতার হক রয়েছে-এতে কোন সন্দেহ নাই। অনুরূপ মায়েরও হক রয়েছে। কারণ অধিক বিশুদ্ধ মতে মা বাবার মতই সন্তানের সম্পদ নিতে পারবে যা দ্বারা সে উপকৃত হবে এবং তার প্রয়োজন পূরণ করবে যদি না এতে সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা তাতে সন্তানের প্রয়োজন জড়িত থাকে।” আল্লাহু আলাম (আল মুন্তাকা)

মোটকথা, সন্তানের সম্পদ থেকে-চাই সে তা উপহার হিসেবে প্রাপ্ত হোক অথবা তার নিজস্ব উপার্জিত হোক- পিতা যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই নিতে পারে। তবে মা নিতে পারে কি না সে ব্যাপারে দ্বিমত থাকলেও, অধিক বিশুদ্ধ মতে পিতা-মাতা এ ক্ষেত্রে সমান। অর্থাৎ মাও তার অভাব মোচন পরিমাণ সন্তানের সম্পদ গ্রহণ করতে পারে। তবে বাবা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় মা সন্তানের অর্থ নেয়ার ব্যাপারে তার নিকট অনুমতি নিবে। কারণ বাবাই হল, পরিবারের প্রধান অভিভাবক।

◈◈ ৩য়ত: সন্তানদের হাতে টাকা-পয়সা থাকলে তারা কীভাবে সেগুলো খরচ করছে সে বিষয়ে পিতামাতার লক্ষ্য রাখা জরুরি। কেননা অনেক সময় বাচ্চারা হাতে টাকা পেয়ে নানা আজেবাজে ও অনর্থক কাজে ব্যয় করে। অনেকে বিভিন্ন গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়। তাই অভিভাবকদের এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখা জরুরি। আল্লাহু আলাম
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।